ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জানালেন সংগ্রামী জীবনের গল্প, প্রকাশ করলেন কৃতজ্ঞতা

ঘর পেয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরল ভূমি-গৃহহীনরা

ঘর পেয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরল ভূমি-গৃহহীনরা

ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের ভাগ্য বদলাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়াণ প্রকল্প। ঘর পেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ফিরছে সমাজের মূলস্রোতে। সরকারের আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, ভিক্ষুক, অতি নিম্ন আয়ের, কেউবা আবার মৌসুমি মৎস্যজীবীদের প্রায় সবাই সমাজে মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়া জনগোষ্ঠী।

আশ্রায়ণের গুচ্ছগ্রাম এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের

ঘর ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের মধ্যে তৈরি

করছে সম্ভাবনা।

গতকাল সিলেটর গোয়াইনঘাটে ১০০ পরিবার পেয়েছে আশ্রায়ণের ঘর। ৩ একর জায়গায়জুড়ে এ আশ্রয়ণের অধিকাংশই সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিসহ ঘর পাওয়ার পর এসব মানুষের চোখে মুখে দেখা যায় আনন্দের ছাপ, খুশির হিল্লোল। তাদেরই একজন আধবয়সী ফিরোজ মিয়া। অভাব আর দারিদ্র্য যেন নিত্যসঙ্গী ছিল তার। বিবাহের পরে কষ্ট ক্লেশ আরও বেড়ে যায়। বিয়ের বছর ঘুরতেই ছেলে সন্তানের জন্ম দেন প্রতিবন্ধী ফিরোজ মিয়া। ছেলে জন্ম দিলেও তার দুঃখ ঘুচল না। ছেলে নূর মোহাম্মদ লাদেনও বাবার মতো প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায়। একটি সুস্থ-সবল ছেলের আশায় পরপর তিন কন্যাসন্তান জন্ম দেন ফিরোজ মিয়া। তিন মেয়ের পর আবার দুই ছেলে বাবা হন তিনি। মোট ছয় ছেলেমেয়ে তার। প্রথম সন্তান নূর মোহাম্মদ লাদেন বাক প্রতিবন্ধী। সে কথা বলতে পারে না। আর মাথা স্থির রাখতে পারে না। এজন্য তেমন কোনো ভারি কাজও করতে পারে না নূর মোহাম্মদ লাদেন। অর্থকড়ির অভাবে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষা দিতে পারেননি ফিরোজ মিয়া। মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করবে- এমন জমিও ছিল না তার। অন্যের জমিতে বাঁশ-খুঁটি দিয়ে ঘর তৈরি করে থেকেছেন। অন্যের জমিতে আশ্রয় নেয়ায় পরের মুখে শুনতে হয়েছে কথা। সব কথাই মুখ বুজে সহ্য করেছেন, কেঁদেছেন নীরবে। একটি ঘর আর নিজের ঠিকানা না থাকায় দুই মেয়ের বিয়ে দিতে খুবই বেগ পেতে হয়েছে তার। ভালো জায়গা থেকে মেয়েদের জন্য কোনো সম্বন্ধ আসত না। মেয়েদের বিয়ে নিয়েও ছিলেন দুশ্চিন্তায়; শেষমেশ মানুষের কাছে হাত পেতে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। জীবনের ঘানী টানতে টানতে যখন হাঁপিয়ে উঠছেন আর পারছিলেন না ঠিক তখনই সুখের দেখা পেলেন আধাবয়সি ফিরোজ মিয়া। প্রতিবন্ধী ছেলে নূর মোহাম্মদ লাদেন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়াণের ঘর। অন্যের ভিটেমাটি ছেড়ে সিলেট গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামে নিজ ঘরে উঠেছেন ফিরোজ মিয়ার পরিবার। তিন রুমের এই ঘরে পুরো পরিবার সুখে শান্তি থাকছেন। কমেছে দুশ্চিন্তা।

তার জীবনের দুঃখগাঁথা আলোকিত বাংলাদেশকে তুলে ধরেন তিনি। ফিরোজ মিয়া বলেন, আমি ও আমার বড় ছেলে নূর মোহাম্মদ লাদেন প্রতিবন্ধী। খুব কষ্ট করে সংসার চালাই। স্থানীয় নেতাদের সহায়তা আমার বড় ছেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়ার একটি ঘর পেয়েছে। আমার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। অন্য দুই ছেলে ছোট। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আরেক মেয়ের এখনও বিয়ে হয় নাই। আগে আমার ঘরদুয়ার ছিল না। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে খুবই কষ্ট পোহাতে হয় আমার। মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বিয়ে দিতে হয়েছে। অনেকে আমায় সাহায্য করেছে মেয়েদের বিয়ে দিতে। এখন আমাদের ঘর আছে, আমার ঠিকানা আছে। ছোটো মেয়েকে বিয়ে দিতে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আশপাশে ফাঁকা জায়গায় শাকসবজি চাষ করতে পারব। হাঁস-মুরগি পালন করব ভাবছি। জীবনে কখনও ভাবিনি এত ভালো ঘর পাব। আমাদের নিজের জমি হবে। আমি সবার কাছে ঋণী, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আমি নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করব।

ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী খছেরুন বেগম বলেন, আমরা পাশের গ্রামে মানুষের জমিতে বাঁশের ঘর করে থাকতাম। বন্যার সময় সবকিছু তলিয়ে গেছে। এরপর থেকে ঠিক করতে পারিনি। কোনো রকম থেকেছি। আমার স্বামী ও বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। ছেলে কথা বলতে পড়ে না। তার মাথায়ও সমস্যা রয়েছে। আমাদের তেমন কোনো আয়-রোজগারও ছিল না। ভাঙা ঘরে বসবাসের কোনো পরিবেশ ছিল না। রাত হলে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে থাকতাম। এখন পাকার ঘর পেয়েছি। স্টিলের দরজা-জানালা পেয়েছি। এখন আর ভয় নেই। কখনো কল্পনাও করিনি এই রকম একটা ভালো পরিবেশে থাকব। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে একটা ভালো ঘর আমাদের ভাগ্যে জুটেছে। আমরা তার জন্য দোয়া করি।

শোয়ার রুমে দোকান করে সুখে আছে জয়নাল : সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামে আশ্রায়ণের ঘর পেয়েছে জয়নাল আহমেদ। তিন রুমের ঘরের একটিতে করেছেন মুদি দোকান। সঙ্গে বিক্রি করেন চা। সেখানেই আবার রাত কাটে তার। এর আগে তিনি ছনের তৈরি ঘরে বসবাস করতেন। ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট হতো ঘরের আসবাবপত্র।

জানতে চাইলে জয়নাল আহমেদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আগে আমার ছোটো একটা ছনের ঘর ছিল। তুফানে হলে আতঙ্কে থাকতাম, কখন যেন উড়িয়ে নিয়ে যায়। আগে ঝড়-বৃষ্টি হলে বেড়ার ঘর দিয়ে পানি আসত। বাচ্চাদের বই-খাতা ভিজে যেত। অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যেত। এখন আর ঝড়-বৃষ্টিকে ভয় পাই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বিল্ডিংয়ের ঘর দিয়েছেন। আমি মন থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিন রুমের ঘর পেয়েছি। একটি রুমকে মুদি দোকান বানিয়েছি। আমাদের এখান থেকে বাজার দূরে। আমি অল্প-অল্প করে জিনিসপত্র রাখতাম। অন্যরাও আমার থেকে কিনে নেন। তাদের পরামর্শে আমি মুদি দোকান দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে বেচাকেনা ভালো। আমি এখন সুখে-শান্তিতে আছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত