বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস

বাংলাদেশে নির্মূলে সর্বস্তরের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

‘আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২০২৩ এ ইউএসএআইডি’স অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) কার্যক্রম যৌথভাবে ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবারের প্রতিপাদ্যে যক্ষ্মা নির্মূলে নেতৃত্ব, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।

২০২৩ সাল যক্ষ্মা নির্মূল কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যক্ষ্মাবিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের ইনফেকশাস ডিজিজ টিম লিড ডা. সামিনা চৌধুরী এবং আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে সর্বস্তরের কার্যকর ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচিত হয়। ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার, লাইন ডাইরেক্টর, টিবি-এল এবং এএসপি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের বর্তমান যক্ষ্মা পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা প্রদান করেন।

তিনি বলেন, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং সহযোগী সংস্থাগুলো গত কয়েক দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে পরিগণিত হয়, যেখানে প্রতি মিনিটে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২১ সালে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং ৪২ হাজারর মৃত্যুবরণ করে। ডা. সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে যক্ষ্মা সনাক্তকরণ, নোটিফিকেশন, সেবার সহজলভ্যতা, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সর্বস্তরের অংশগ্রহণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নেতৃত্বে আইসিডিডিআর, বি পরিচালিত ইউএসএআইডি’স এসিটিবি কার্যক্রম ২০২০ সালের মার্চ মাসে সূচনার পর থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে, যক্ষ্মা রোগ সনাক্তের হার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। অনুষ্ঠানে লোকগান গম্ভীরার তালে তালে পুতুলনাচ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে যক্ষ্মা বিষয়ক তথ্যনির্ভর একটি পরিবেশনাও উপস্থাপন করা হয়, যা শিশুদের যক্ষ্মা বিষয়ে রাজশাহী বিভাগে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সাফল্যের সাথে কাজ করেছে। আলোচনায় শিরিন আখতার এমপি, সুবর্ণা মুস্তাফা এমপি, আরমা দত্ত এমপি, রাশেদ খান মেনন এমপিসহ উপস্থিত ১৮ জন সংসদ সদস্য এবং অন্য এমপিরা বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততা এবং অঙ্গীকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা তার বক্তব্যে শিশুদের যক্ষারোগ নির্মূলে অভিভাবকদের সচেতন করার অঙ্গীকার জানান। আরমা দত্ত যক্ষ্মা নির্মূলে একটি পার্লামেন্টারি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। শিরিন আক্তার সংসদ সদস্যদের রাজনৈতিক কাজের পাশাপাশি এ বিষয়ে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি জোর দেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) অধ্যাপক ডা. কাজী শফিকুল হালিম বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণ ৯৫ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শনাক্তকরণ, নোটিফিকেশনের হার বাড়ানো, সবার জন্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

যক্ষ্মা নির্মূলের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার জন্য দেশের মাল্টিসেক্টর স্টেকহোল্ডার এবং নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ততা এবং অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন আইসিডিডিআর,বি নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ। তিনি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কার্যক্রমে নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণ এবং এই বিষয়ে ইউএসএআইডি,র এসিটিবি’র কাজে সহায়তা করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে এবং ইউএসএআইডি’স এসিটিবি কার্যক্রমের মাধ্যমে যক্ষ্মা নির্মূলে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। তবে এখনো ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা ও শিশু যক্ষ্মা হ্রাসে আমাদের আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেইন হাওলাদার।

তিনি নিজ নিজ এলাকায় যক্ষ্মা নির্মূলের পদক্ষেপকে বেগবান করার আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালকে যক্ষ্মারোগ শনাক্তকরণে সক্ষম করেছে। তবে, এই বিশাল কার্যক্রম সরকারের একার পক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, প্রয়োজন সবার মিলিত প্রচেষ্টা।

প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিকে তাদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে নিষ্ঠার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রশংসা করে বলেন, যক্ষ্মাবিষয়ক পার্লামেন্টারি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজনীয়। আমি বিশ্বাস করি এমন একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যক্ষ্মা নির্মূলে আমরা আরো নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা পাবো। এ বিষয়ে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ডা. সামিনা চৌধুরী যক্ষ্মা নির্মূলে মাল্টিসেক্টরের অংশগ্রহণে ইউএসএআইডি’স এসিটিবি-র প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী সফল কার্যক্রমের কারণে যক্ষ্মার প্রকোপ কমেছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে একে নির্মূল করার। আশা করি আমরা ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলের প্রত্যয়কে বাস্তবায়ন করতে পারব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।