ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিদেশিদের তৎপরতায় সংলাপের উদ্যোগ ইসির

বিদেশিদের তৎপরতায় সংলাপের উদ্যোগ ইসির

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশিদের তৎপরতায় বিএনপিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির ডাকে সাড়া দিচ্ছে না বিএনপি। দলটি বলছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো সংলাপে যাবে না তারা। এই সরকার পরিবর্তন না হলে কোনো আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়েছে বিএনপি।

ইসির চিঠি পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান খুবই পরিষ্কার। আমরা নির্বাচন কমিশনে আর কোনো আলোচনায় যাব না।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা অনর্থক বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এ সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এর আগে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন দলের সংলাপের সময়ও বিএনপি অংশ নেয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সংলাপেও অংশ নেয়নি রাজপথের এই বিরোধীদলটি। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে বিএনপি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ইসিকে বলছে। চলতি মাসে সর্বশেষ বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বৈঠকে আলোচনা নিয়ে জেরেমি ব্রুয়ের বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা স্বচ্ছ, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসিতে এসে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চেয়েছে। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অগ্রহ দেখিয়েছে আগে।

জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নতুন করে কোনো সংলাপের সুযোগ নেই। কিন্তু বিদেশিদের অনুরোধে এবং বিভিন্ন কারণে এ কথা থেকে সরে আসে সিইসি। গত বৃহস্পতিবার ইসি বিএনপিসহ সমমানা দলকে চিঠি দেয় সংলাপের জন্য। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেয়া চিঠিতে সিইসি বলেন, ‘শুভেচ্ছা নেবেন। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমি বিগত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার সহকর্মী নির্বাচন কমিশনাররাও একই তারিখে দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আমরা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন ধারাবাহিকভাবে করে আসছি। জাতীয় সংসদের দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে’।

তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে সদিচ্ছা ব্যক্ত করে আসছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা সম্যক অবগত আছি যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রথম থেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা ব্যক্ত করে এই কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। আপনারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যতীত নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তও বারংবার ব্যক্ত করেছেন। আপনাদের নিজস্ব দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশল বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই। তবে, নির্বাচন কমিশন আপনাদের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যাত হলেও মনে করে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাদের সঙ্গে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময় হতে পারে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল। সিইসি বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাকে, আপনার দলের অন্য নেতাদের, প্রয়োজনে সমমনা দলসমূহের নেতাদের নির্বাচন কমিশনে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সময় সম্মত হলে, দিনক্ষণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রত্যুত্তর প্রত্যাশা করছি।

২০২২ সালের ৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৯টি দলকেই সংলাপে আসার সময় জন্য দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি অংশ নেয়নি। এরপর থেকেই বারবার তাদের আলোচনায় আসার জন্য গণমাধ্যমে সিইসিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত