ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকা-চট্টগ্রাম আবাসন প্রকল্প

পরিত্যক্ত বাড়িতে নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন

* প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আবাসন ব্যবস্থার উন্নিত হয়েছে: সচিব * বাধাদানকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে: প্রকল্প পরিচালক
পরিত্যক্ত বাড়িতে নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন

পরিত্যক্ত বাড়ি ও অবৈধ দখলে থাকা সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করে সুউচ্চ ভবন নির্মাণের দিকে ঝুঁকছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের বাসস্থানের পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সংকট নিরসনে পরিকল্পনা অনুযায়ী সীমিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে।

কয়েকটি জেলায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বছরের পর বছর বেদখলে থাকা পরিত্যক্ত বাড়ি বা সম্পত্তি উদ্ধার করে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করেছে এবং করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর। এরইমধ্যে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও ও চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে অধিক সংখ্যক আবাসিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সমস্যার কিছুটা সমাধান করা হয়েছে। গণপূর্তের চলমান তিন প্রকল্পের মধ্যে ঢাকায় পরিত্যক্ত ২০ বাড়িতে ৩৯৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামে পরিত্যক্ত ১৫ বাড়িতে ৫৭৬টি ফ্ল্যাট ও ৬৪টি ডরমিটরি এবং চট্টগ্রামে আরেকটি প্রকল্পে পরিত্যক্ত ৩৬ বাড়িতে ১ হাজার ২৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সুবিধা ছিল ৮ শতাংশেরও কম। এখন একটানা ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের সুবিধা বেড়ে ২৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেন না প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্যের পর মন্ত্রণালয় বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আরো বেগবান করার লক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েই ঢাকা ও চট্টগ্রাম আবাসন প্রকল্পগুলো পরিদর্শনে যান সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। চলমান প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন শেষে আলোকিত বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়মিত বহুতল ভবন নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ করছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মানুষের আবাসন সংকট নিরসনে বাস্তবায়ন করছে একের পর এক প্রকল্প। এতে গণপূর্ত, গৃহায়ন ও রাজউকের কাজের গতি ফিরেছে।’

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘করোনা মহামারির পর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আবাসন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যার প্রকৃত উদাহরণ- ঢাকার পরিত্যক্ত ২০ বাড়িতে ৩৯৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ, চট্টগ্রামের পরিত্যক্ত ১৫ বাড়িতে ৫৭৬টি ফ্ল্যাট ও ৬৪টি ডরমিটরি কাজের অগ্রগতি ৫২ শতাংশ এবং পরিত্যক্ত ৩৬টি বাড়িতে ১ হাজার ২৪৮টি ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। দ্রুতই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে প্রকল্প পরিচালকদের।’

বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের গুণগত মানের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দ্রুতগতিতে গুণগত মানসম্পন্ন কাজ এগিয়ে নেয়ার নীতিতেই চলছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।’

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আরো বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ ‘৭ ও ৮’ নম্বর বাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ধানমন্ডি এলাকায় বেশকিছু পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এসব পরিত্যক্ত বাড়ির স্থলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে।’

জানা গেছে, পরিত্যক্ত বাড়ি বা সম্পত্তি ১৯৭১ সালে অবাঙালি যেসব সম্পত্তি ফেলে রেখে চলে যায় তা তৎকালীন সরকার সরকারি সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করে। সেগুলোই সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১৬ নম্বর আদেশের ২(১) অনুচ্ছেদ মোতাবেক পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে পরিত্যক্ত সম্পত্তির গেজেট প্রকাশিত হয়। দেশের ৩৪ জেলায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি রয়েছে। অন্য সব জেলায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি নেই।

গেজেট অনুযায়ী পরিত্যক্ত সম্পত্তি ‘ক’ তফসিলভুক্ত (সংরক্ষিত তালিকা) এবং ‘খ’ তফসিলভুক্ত (বিক্রয়যোগ্য তালিকা)। বর্তমান সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে সংরক্ষিত তালিকায় থাকা বাড়িগুলোতে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গণপূর্ত অধিপ্তরের আওতায় ঢাকা মহানগরে ২০ বাড়ি প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম মহানগরে ১৫ বাড়ি ও ৩৬ বাড়ি প্রকল্প চলমান। গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত প্রকল্পগুলোর ফ্ল্যাট সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বসবাসের জন্য যা আবাসন পরিদপ্তর কর্তৃক কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বরাদ্দ দেয়া হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তর ছাড়াও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ) কর্তৃক ঢাকা মহানগরে পরিত্যক্ত বাড়িতে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প চলমান আছে। এ দুটি সংস্থা ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বিক্রয় করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি সম্পত্তি বাড়ি, কারখানা ও জমি বেহাত হয়ে যায়। ফলে পরিত্যক্ত বাড়ি বা সম্পত্তি উদ্ধারে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বিভিন্ন সময়ে তাদের দায়িত্বহীন আচরণে পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধার করা যায়নি। এখন এসব রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতিবন্ধকতা ও স্বজনপ্রীতি পাশ কাটিয়ে পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধারে জোরাল ভূমিকা রাখছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরিত্যক্ত বাড়ি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণে আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ। যার ফলে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১১টি বড় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের মধ্যে আজিমপুরে বিচারকদের আবাসন, মিরপুর ও তেজগাঁওয়ে কয়েকটি আবাসন প্রকল্প, রমনা পার্কের আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ছিল।

পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধার নিয়ে অনেক মামলা আছে। এসব মামলার বিচারের জন্য ১৯৮৬ সালে দুটি আদালত গঠন করে সরকার। এর মধ্যে ‘প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্ট’ শুধু ঢাকার পরিত্যক্ত বাড়ি এবং ‘দ্বিতীয় কোর্ট অব সেটেলমেন্ট’ ঢাকা ছাড়া সারা দেশের পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর মামলার বিচার করে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আদালত দুটির অবস্থান।

এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন শাখা-১) মো. জহিরুল ইসলাম খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, স্বাধীনতার পর সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মূল্যবান জমি, বাড়িঘর, কলকারখানা-প্রতিষ্ঠান ও স্থাবর সম্পত্তির মালিকদের হদিস পাওয়া যায়নি। ফলে রাষ্ট্রপতির এক আদেশে বেনামি এসব সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৬ সালে এসব বাড়ি বা সম্পত্তির বিষয়ে গেজেট জারি করে সরকার। এরপর জাল দলিল ও নথিপত্র তৈরি করে প্রচুর পরিত্যক্ত বাড়ি ও সম্পত্তি দখলে নেয় জালিয়াতচক্র। এসব সম্পত্তি উদ্ধারে নিয়মিত মামলায় লড়ছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, দেশে সরকারি, ব্যক্তিমালিকানাধীন, খাস, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও দপ্তরের মালিকানায় সম্পত্তি রয়েছে। তবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের তুলনায় পরিত্যক্ত বাড়ি ও সম্পত্তি উদ্ধারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সাফল্য দেখিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পরিত্যক্ত বাড়ি জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। কিছু পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধারের জন্য সরকার পক্ষ আদালতে মামলা করছে। এখনও গুলশান, ধানমন্ডির মতো এলাকায় রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে প্রভাবশালীরাই পরিত্যক্ত বাড়ি দখল করে রেখেছেন।

পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধার ও বহুতল ভবন নির্মাণে গণপূর্তের তিনটি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিতে বলা হয়েছে, সরকারের বহু মূল্যবান পরিত্যক্ত বাড়ি প্রভাবশালীদের দখলে। রাজধানীর গুলিস্তান, ধানমন্ডি, গুলশান ও চট্টগ্রাম শহরের মতো অভিজাত এলাকায় সরকারের পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। আর এসব পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধারে ২০১৬ সালের নভেম্বরে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে ২০ পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি চাকরিজীবীদের ৩৯৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। ওই বছরের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। পরে ধাপে ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই প্রকল্পের অধীনে এখনও পরিত্যক্ত চারটি বাড়ি খালি হয়নি। ফলে গত ৩ বছরে পরিত্যক্ত ২০ বাড়ির মধ্যে ১৬টি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে পেরেছে গণপূর্ত। বর্তমানে ১৬টি ভবনের ৮টি হস্তান্তর হয়েছে, বাকি ৮টি ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান। একই অবস্থা চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত ১৫ বাড়ি প্রকল্পের ক্ষেত্রে। এই প্রকল্পের অধীনে আবাসিক ফ্ল্যাটের পাশাপাশি ডরমিটরি করা হচ্ছে। কিন্তু পরিত্যক্ত ১৫ বাড়ির মধ্যে ১০টি বুঝে পেয়েছে গণপূর্ত। এরমধ্যে মাত্র একটি ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৯টি ভবনের নির্মাণ কাজ এখনো চলমান।

তবে প্রকল্পটির আশানুরূপ দিক হচ্ছে- পরিত্যক্ত ১৫ বাড়ির মধ্যে নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ২২/বি-১ বাড়িটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এখন বাড়িটিতে মাটি পরীক্ষার কাজ চলমান। এটির দরপত্র আহ্বান করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় থাকা পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার পরিত্যক্ত ৪৯ নম্বর বাড়িটি বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটি প্রকল্প থেকে বাদ দিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছে স্থায়ী বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদিত হয়েছে। আবার সার্সন রোডের পরিত্যক্ত ৩ নম্বর বাড়ি বর্তমানে জোনাল সেটেলম্যান্টের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা এখনো বুঝে পায়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর। পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার পরিত্যক্ত ৩২ নম্বর ও জাকির হোসেন রোডের পরিত্যক্ত ১০৩৩ নম্বর বাড়ির অবস্থা একই। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে ‘চট্টগ্রামের ৩৬টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্পে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত বাড়ি দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখিন হয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ৩৬ বাড়ির মধ্যে ২৩টির কাজ চলমান। অন্যান্য বাড়ি নিয়ে মামলা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাঁধায় প্রকল্পের কাজ খুব বেশি দূর এগোনো সম্ভব হয়নি। বাকি পরিত্যক্ত ১৩টির মধ্যে ৪টির দরপত্র সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। খুব শিগগিরই এ চারটি বাড়ির দরপত্র আহ্বান করা হবে। তবে পরিত্যক্ত ৯টি ভবন নিয়ে এখনও জটিলতা আছে। ৩৬ বাড়ি প্রকল্প নির্মাণ প্রকল্প ২০১৮ সালের সেপ্টম্বর থেকে শুরু হয় যা ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজে বিভিন্ন বাঁধা ও পরিত্যক্ত বাড়ি উদ্ধারে মামলার কারণে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন সংকট নিরসনের বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের ঢাকা শহরে আবাসন সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে আবাসন পরিদপ্তর চাহিদা অনুযায়ী আবাসন সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অধিকাংশ তাদের সক্ষমতার বাহিরে অধিক মূল্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিম্নমানের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। এতে তাদের অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যা তাদের কর্মদক্ষতাকে হ্রাস করছে।

গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল (ঢাকা) ও ২০ বাড়ি প্রকল্প পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত বাড়ি সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দখলে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় এককভাবে দখল উচ্ছেদ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেজন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও উচ্ছেদ অভিযানে বাধাদানকারীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। আর ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে ২০টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩৯৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের জুনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।’

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সারা দেশে ১০ হাজার ৪১৪টি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৬ হাজার ৪০৬টি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। এসব বাড়ির মধ্যে গেজেটে প্রকাশিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত বাড়ির সংখ্যা ৫ হাজার ২৮টি এবং ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ৪৩৯টি। ঢাকার এসব পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে বিক্রয় তালিকাভুক্ত বাড়ির সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮২টি ও সংরক্ষিত তালিকাভুক্ত বাড়ির সংখ্যা ২১৫টি। দলিল সম্পাদিত বাড়ির সংখ্যা ২ হাজার ৬৮৯টি এবং ১ হাজার ১১টি বাড়ি অবমুক্ত করা হয়েছে। ৬৬টি বাড়ি অবৈধ বসবাসকারীদের দখলে রয়েছে এবং ৯৯৯টি বাড়ির বিপরীতে মামলা চলছে। বাকি ১ হাজার ৪৮৭টি বাড়ি ডিএন গ্রহীতা ও বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছ থেকে বা আদায়ের মাধ্যমে বিক্রয়ের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে ৬২টি, গাজীপুরে ৩টি, নরসিংদীতে দুটি, রাজবাড়ীতে ৩৬টি, রাজশাহীতে ২২৮টি, নাটোরে ৭টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬টি, নওগাঁয় ৩০টি, পাবনায় ১২৩টি, সিরাজগঞ্জে ১৩টি, বগুড়ায় ২৮০টি, জয়পুরহাটে একটি, খুলনায় এক হাজার ৪২১টি, বাগেরহাটে একটি, যশোরে ৯২টি, কুষ্টিয়ায় ৫০৭টি, চুয়াডাঙ্গায় ২৭টি, চট্টগ্রামে ৩৫৩টি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত