স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন

স্মার্ট দেশ গড়ার প্রত্যয়

* শ্রদ্ধাভরে বীরদের স্বরণ করল জাতি * সাভারে স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দারিদ্র্য, ক্ষুধামুক্ত ও স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে গতকাল উদযাপন করা হলো মহান স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী। উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করে বাঙালি জাতি। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি প্রাণবন্ত করে তোলে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসকে। দেশের জন্ম দিনে এক অন্য রকম আনন্দে মেতেছিল বাঙালি। লাল-সবুজের পতাকা হাতে সকল শ্রেণি-পেশা ও ধর্ম-বর্ণের মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধিশালী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশার কথা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই বছর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে জয়ী হই আমরা। দিবসটি উপলক্ষ্যে সারা দেশ সেজেছিল বর্ণিল সাজে। দোয়া, মিলাদ ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধাভরে মহান বীরদের স্মরণ করল জাতি

স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল ভোর ৫টা ৫৬ মিনিটে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানানোর পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বীর শহিদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু ৫২তম মহান স্বাধীনতা দিবস এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা : স্বাধীনতা দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলাম ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে প্রবেশ করেন এবং সেখানে কিছু সময় কাটান।

প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ও তার আশপাশের সড়কগুলোতে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ভোর থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের সড়কে জমায়েত হতে থাকে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হাজারো জনতার ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। এ সময়ে তারা ‘স্বাধীনতার অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান’ ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’ সেøøাগান দিতে থাকেন।

ডাকটিকিট অবমুক্ত : স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবনে স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেন তিনি।

এসময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদ্বয়সহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘মুজিব’স বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা : সাভার থেকে আমাদের প্রতিনিধি জাহিন রিয়াজ জানান, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষ আসেন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। স্বাধীনতার উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত জনতা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন স্বাধীনতার মহানায়কদের। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলে ফুলে ভরে যায় সৌধের শহীদ বেদি। একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্য সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বেলা ১০টার দিকে দেখা গেছে, ফুলের ডালা নিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ মানুষ দলে দলে স্মৃতিসৌধে আসছেন। সকল বয়সি মানুষের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে সৌধ প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে শহীদ বেদি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে যুদ্ধাহত অনেক মুক্তিযোদ্ধাও আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। অনেকের হাতে শোভা পায় লাল-সবুজের বিজয় পতাকা। তবে ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করে স্মৃতিসৌধ এলাকা। জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বপালনকারী গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, সর্বসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করার পর ফুল নিয়ে মানুষ সৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে থাকে।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা : মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বেদির পাশে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর পবিত্র ফাতেহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধু, ৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন তারা।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের, সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ, পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফোরকান বিশ্বাসসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।