মহতী এ সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শাহিনুর রহমান

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের সব দলীয় পর্যায়ে এ বছর ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন না করে সেই অর্থ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নির্দেশনা অত্যন্ত সময়োপযোগী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় মানুষ আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতায় পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় পবিত্র এই রমজান মাসে মানুষ স্বাভাবিক কারণেই কষ্টে রয়েছে। ইফতার অনুষ্ঠানের অর্থ বিশেষ করে অসচ্ছল মানুষের জন্য ব্যয় করার মনমানসিকতায় উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল আয়োজন না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তথ্য সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো কোনো ইফতার মাহফিলের আয়োজন করবে না। আমাদের নেত্রী এ নির্দেশ দিয়েছেন। বরং সেই টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করবেন।’

২৫ মার্চ বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা ইফতারের আয়োজন না করে দলের পক্ষ থেকে, যারা কষ্টে আছেন, যারা গরিব মানুষ তাদের হাতে খাবার তুলে দেব।’

এর আগে ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এবারের রমজানে গণভবনে কোনো ইফতার পার্টির আয়োজন করবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যক্তিগতভাবেও এবার সাদামাটা ইফতার করবেন তিনি। সরকারের ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে হাসান জাহিদ তুষার জানান, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী যে সাশ্রয়নীতি অবলম্বন করছেন, ব্যক্তিগত জীবনেও সেটারই প্রয়োগের অংশ হিসেবে তিনি এবার কোনো ধরনের ইফতার পার্টি করবেন না। ইফতারে সংযম ও ব্যয় সংকোচন করবেন। সরকারপ্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যয় সংকোচন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে তুলনামূলক ভালো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অর্থনীতি তছনছ হয়ে গেছে। উন্নত, উন্নয়ন ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোও বিপাকে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরে অথনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করবে বলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল। আর সেই আশঙ্কাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবতার নিরীক্ষে অনুধাবন করে সরকার পরিচালনায় ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করেন। অনাবশ্যক ও বিলাস দ্রব্যের আমদানি হ্রাস করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেই সঙ্গে রপ্তানির ঝুড়িতে বৈচিত্রপূর্ণ পণ্য সংযোজন করে বিদেশে রপ্তানি কাজ খোঁজার জন্য বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেন। এছাড়া জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাড়ির পাশের খোলা জায়গাসহ অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার পরামর্শ দেন। তিনি যে কোনো অনুষ্ঠানে এসব নির্দেশনা দিয়ে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ব্যবহার সীমিত রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন। আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর অনুরোধ করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী এই যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলে আসছেন, এই যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে। কেননা যুদ্ধের কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত এবং ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেল ও আমদানি পণ্যের পাশাপাশি খাদ্যশস্যের দামও বেড়ে গেছে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি ওএমএসের মতো খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করায় মানুষ কমমূল্যে চাল, ডাল, তেল ও ছোলার মতো অত্যাবশকীয় পণ্য কিনতে পারছেন। ইফতার মাহফিলের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি ও দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবারের ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন না করে সেই অর্থ দুস্থ মানুষের মাঝে বিতরণ করলে সেটা হবে মহানুভবতা। রচিত হবে মহান দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর এই চমৎকার ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দেশের সম্পদশালী মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এমন মহতী সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে পবিত্র এ রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে দরিদ্র জনগণের পাশে দাঁড়াবেন- এটা মানুষ আশা করে।