‘বিএনপিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি’

আবার বিতর্ক সৃষ্টি করলেন সিইসি

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংলাপ

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দায়িত্ব নেয়ার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্য এবং তলোয়ার- রাইফেল নিয়ে বক্তব্য দিয়ে বিতর্কে জড়ান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এখন বিএনপিকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন সিইসি।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে তিনি বলেন, বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য কমিশন চিঠি দিয়েছে।

সিইসি বলেন, আমরা গণমাধ্যমে দেখলাম অনেকে লিখেছেন, বিএনপিকে চিঠি দেয়া সরকারের কূটকৌশল। তবে আমি বলছি, বিএনপিকে চিঠি দেয়ার পেছনে সরকারের কোনো কূটকৌশল নেই। বরং এটা ইসির কূটকৌশল হতে পারে। সরকার ইসির উপর চাপ দিলে যে দেবে যাবে, বিষয়টি তেমন না। এখানে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকারের আজ্ঞাবহ কোনো কাজ নির্বাচন কমিশন করে না। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বিএনপির মতো একটি দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়। সেজন্যই ডেকেছি, অনানুষ্ঠানিকভাবে ডেকেছি। কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপে বিএনপিকে ডাকা হয়নি। সব নির্বাচন কমিশনার বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, গাইবান্ধায় ভোট বন্ধের ইস্যুতে ১৩৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারও পদক্ষেপ নেবে ইসি।

সিইসি জানান, ইসি একেবারেই প্রথম থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে আসছে। ইসি মনে করে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে, দলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রয়োজন।

বিএনপিকে দেয়া চিঠির উত্তর পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ইসি এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পায়নি। তিনি বলেন, আমি চিঠি দিয়েছি, যে কোনো রেসপন্স আমাদের চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে। আমরা আশা করি, যেহেতু মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছি। যে কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে চিঠির মাধ্যমে আসবে সেটাই কাঙ্ক্ষিত।

বিএনপি যদি আলোচনায় আসতে চায় এবং তারা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কথা বলতে চায় তখন ইসির করণীয় কি হবে জানতে চাইলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, উনারা যদি এজেন্ডা ঠিক করে দেয়, তখন কমিশন সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।

কূটনৈতিক মহলে সংলাপ আয়োজনের আলোচনার মধ্যে এমন চিঠি দেয়া হলো কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এ ধরনের বিষয় আমাদের নলেজে নেই। আমাদের চিন্তা থেকে উ™ূ¢ত সিদ্ধান্ত থেকে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। চাপের কথা যেটা বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা।

জানা যায়, গত ২৩ মার্চ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। সংলাপে বিএনপির সমমনা দলগুলোও অংশ নিতে পারবে বলে জানিয়েছিল সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

ওই চিঠিতে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকের কোনো সময় ও এজেন্ডা নির্ধারণ করে দেয়া ছিল না। বিএনপি সংলাপে বসতে সম্মত হলেই সময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও সিইসি চিঠিতে বলেছিলেন।

‘চিঠিতে বলা হয়, শুভেচ্ছা নিবেন। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন প্রধান নির্বাচন কশিনার হিসেবে আমি বিগত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমার সহকর্মী নির্বাচন কমিশনাররাও একই তারিখে দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আমরা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনসমূহ ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠান করে আসছি। জাতীয় সংসদের দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে সদিচ্ছা ব্যক্ত করে আসছে। আমরা সম্যক অবগত আছি যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রথম থেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা ব্যক্ত করে এই কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। আপনারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যতীত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তও বারংবার ব্যক্ত করেছেন। আপনাদের নিজস্ব দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশল বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনোরূপ মন্তব্য নেই। তবে, নির্বাচন কমিশন আপনাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও মনে করে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাদের সঙ্গে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ও মতবিনিময় হতে পারে। অধিকন্তু স্মর্তব্য যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল। বর্ণিত কারণাধীনে আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাকে আপনার দলের অন্য নেতাদেরসহ প্রয়োজনে সমমনা দলসমূহের নেতারাসহ নির্বাচন কমিশনে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সদয় সম্মত হলে দিনক্ষণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রত্যুত্তর প্রত্যাশা করছি।’

এর আগে সিইসি দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করে যে উদাহরণ টেনেছিলেন তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল রাশিয়া। নবনিযুক্ত সিইসির ওই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিক বার্তা পাঠিয়েছেন ঢাকাস্থ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কি।

এর পর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে প্রতিপক্ষ দলকে রাইফেল নিয়ে প্রতিরোধের পরামর্শ দেন। পরে বক্তব্যের জন্য সমালোচিত হওয়ার পর প্রথমে একে কৌতুক উল্লেখ করে ক্ষমা চান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলে ছিলেন, কখনও কখনও আমরা ভুল করে থাকি। আপনারা যেটা মিন করেছেন, সেটা আমি মিন করি নাই।