সংলাপ নিয়ে বিএনপির পিছুটান

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংলাপের জন্য চিঠি দিলেও সংলাপে অংশ নিচ্ছে না দলটি। এতে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক হওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, ইসির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে পিছুটান দিয়েছে বিএনপি। তারা বলছে, সরকার পরিবর্তন না হলে তারা সংলাপে অংশ নিবে না, এমনকি ইসির দেয়া চিঠির জবাবও দিবে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মূল রাজনৈতিক সংকট নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না।

তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল একজন অত্যন্ত ভদ্রলোক, তার আবেদনও ভেরি গুড (খুব ভালো)। কিন্তু বাস্তবতা আমরা জানি, তার (সিইসি) কোনো ক্ষমতা নেই। অহেতুক আলাপ করে কী হবে?

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়। ইচ্ছা থাকলেও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যেহেতু মূল রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আলোচনা ও মতবিনিময়ে সম্ভব নয়, সে কারণে বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছে না।

নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপি সুযোগ নেবে কি না এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, সুযোগ কে নেবে? কার কাছ থেকে নেবে? নির্বাচন কমিশন? যার কোনো ক্ষমতা নেই। চলমান সংকট রাজনৈতিক। এই সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সংকট সমাধানের উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে, তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিষয় ছাড়া এই সরকারের সঙ্গে অন্য কোনো আলোচনার সিদ্ধান্ত আমাদের নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো আলাপ নেই। আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিষয় আসলে দল হিসেবে আমরা (আলোচনায় অংশ নেয়ার বিষয়) বিবেচনা করব।

জানা যায়, গত ২৩ মার্চ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। সংলাপে বিএনপির সমমনা দলগুলোও অংশ নিতে পারবে বলে জানিয়েছিল ইসি। ওই চিঠিতে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকের কোনো সময় ও এজেন্ডা নির্ধারণ করে দেয়া ছিল না। বিএনপি সংলাপে বসতে সম্মত হলেই সময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলেও সিইসির চিঠিতে বলেছিলেন।

এদিকে গতকাল আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বিএনপি আমাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলেও আমরা আশা ছাড়িনি। আমাদের প্রত্যাশা বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আপনাদের চিঠির উত্তর দেবে না, এখন আপনারা কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাইব সব দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাব। আমরা নিজেরাই চাই সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলে তাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেনি। তাই আমাদের ইচ্ছে আছে, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা।

এ নির্বাচন কমিশনার জানান, কমিশন গঠনের পর বিএনপির সঙ্গে তো আমাদের আলোচনা হয়নি। একবার চিঠি দেয়া হয়েছে আসেনি। আবার চিঠি দেয়া হয়েছে আসেনি। তৃতীয়বার আমরা একটা চিঠি দিলাম। এজেন্ডা যদি উনারা লেখেন, তখন আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের যতটুকু করার আছে আমরা তা করব। আমরা তো আশা করি, তারা আসবে। আমাদের আশা অব্যাহত থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কমিশনের কাজ নিবন্ধিত দল সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করা। ইসি চায় সবাই নির্বাচন অংশগ্রহণ করুক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। এজন্য সংবিধান ও আইনে যা আছে তাতে যা করা প্রয়োজন নির্বাচন কমিশন তার সবই করবে।

মো. আলমগীর বলেন, আমরা আশাবাদী মানুষ। নির্বাচনের অনেক সময় আছে। এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে সিদ্ধান্তে।

বিএনপি আলোচনায় না এলেও সমমনা অন্যদলগুলোকে ফের আমন্ত্রণ জানাবে কি না জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আমরা এ নিয়ে আগামীকাল আলোচনা করব। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যখন যাকে প্রয়োজন মনে করব আমরা আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানাতে পারি। খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, যখন তিনি আবেদন করবেন, তখন আমরা কমিশন মিটিং করে দেখব আইন অনুযায়ী তিনি প্রার্থী হতে পারেন কি না। আইন অনুযায়ী তিনি যদি প্রার্থী হতে পারেন তাহলে তো আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।