ভোটারদের এবারও প্রত্যাশা নতুন কালুরঘাট সেতু

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচনে জমে উঠছে প্রচার প্রচারণা। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও নানাভাবে চলছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। গতকাল নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের প্রার্থিতা যাচাই বাছাই করেছে। এতে মনোনয়ন জমা দেয়া ৬ প্রার্থীর মধ্যে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদসহ আরো তিন প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধতা পেয়েছে বাছাইয়ে। প্রতীক বরাদ্দের পরই মূলত প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় আনুষ্ঠানিকভাবে নেমে পড়বেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নির্বাচিত প্রার্থী ৬ থেকে ৭ মাস দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন তিনিই পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন বলে দলের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান তিনজনের প্রার্থিতা বাতিল করেন। তারা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ রমজান আলী ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (ন্যাপ) কামাল পাশা।

আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনি এলাকার এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ও মীর মোহাম্মদ রমজান আলী তা জমা দেননি। অন্যদিকে ঋণখেলাপি হওয়ায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কামাল পাশার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ৬ প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ১ শতাংশ সমর্থকের স্বাক্ষর না থাকায় এবং ঋণখেলাপি হওয়ায় আরেকজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে দুইজন সংসদ সদস্য মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই মারা যান। এর মধ্যে মঈনুদ্দিন খান বাদল নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই মারা যান। এরপর আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি গেল ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দু’জনের প্রতিশ্রুতি ছিল এই আসনের অন্যতম দাবি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দু’জন জীবিত থাকা অবস্থায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান নোমাণ আল মাহমুদ। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন রেকর্ড ১৮ জন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদসহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র মিলে ৬ জন প্রার্থী। ২৭ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন মনোনয়নপত্র জমা দেয়া অন্য দলের প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, এনপিপির প্রার্থী মোস্তাফা কামাল পাশা, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, স্বতন্ত্র প্রার্থী পূর্ব ষোলশহর এলাকার মীর মোহাম্মদ রমজান আলী এবং সাতকানিয়ার খাগরিয়ার খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই গতকাল শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ৬ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৭ এপ্রিল ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৩ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ জন।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। দল আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে, তা আমি পালনের চেষ্টা করব।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন।

কর্ণফুলী নদীপাড়ের বোয়ালখালী উপজেলার একাংশ এবং শহরের চান্দগাঁও ও বাকলিয়া-পাঁচলাইশের একাংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ১৮ জন। তবে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় পার্টিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ মনোনয়নপত্র নেয়নি।

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নোমান আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমার দুই পূর্বসূরি প্রয়াত মঈনুদ্দীন খান বাদল ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদ কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। আমি নির্বাচিত হলে সেতু বাস্তবায়নে সচেষ্ট হব। এই অঙ্গীকার পালনে আমি অবশ্যই আমার সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করব। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা ছিলেন তাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ। এর আগের সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে মোছলেম উদ্দিন সংসদ সদস্য হন। ৫ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।