ঢাকার ফুটপাত

রোজা ও ঈদ ঘিরে শতকোটি টাকা চাঁদাবাজির পরিকল্পনা

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচএম ফারুক

রোজা ও ঈদুল ফিতরকে ঘিরে শতকোটি টাকার চাঁদাবাজির পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী চাঁদাবাজরা। নিয়মিত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ফুটপাতের হকাররাও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে পরিশ্রম করে দু’পয়সা রোজগার করার জন্য। কিন্তু হকারদের রোজা ও ঈদ ব্যস্ততাকে পুঁজি করে চাঁদার পরিমাণ বাড়ানো ও রাস্তার ওপর নতুন দোকান বসানো নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে শুরু করেছে চাঁদাবাজির মচ্ছব।

হকার নেতাদের তথ্যানুয়ায়ী স্থানভেদে প্রতিদিন ৫০ থেকে শুরু করে ৮০, ১০০, ২০০, ৩০০ এবং ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। তারা বলেন, গড়ে ২০০ টাকা করে চাঁদা হিসাব করলেও দিনে দুই কোটি টাকা চাঁদা ওঠে। আর মাসে এ অঙ্ক দাঁড়ায় ৬০ কোটিতে। কিন্তু রোজা ও ঈদকে ঘিরে এ অঙ্ক দ্বিগুণের বেশি হয়। ফলে অনায়াসে বলা যায়, রোজা ও ঈদকে ঘিরে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট শতকোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই সিন্ডিকেটে অন্তত পাঁচ শতাধিক চাঁদাবাজ সক্রিয়। এরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে লাইনম্যান হিসাবেই পরিচিত। এই লাইনম্যানরা লক্ষাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দিনে ৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে।

ভুক্তভোগীদের একটি সূত্র জানায়, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু সন্ত্রাসীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এসব লাইনম্যান নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ ছাড়া প্রতিটি এলাকায়ই পুলিশের নামে চাঁদা তোলা হয়। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁদা না দিলে ব্যবসা করা যায় না। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চাঁদাবাজরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলে জামিনে বেরিয়ে আসে। আবার শুরু করে চাঁদাবাজি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, খদ্দর মার্কেট, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, স্টেডিয়াম মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ঈদুল ফিতর ঘিরে বাড়ানো হয়েছে চাঁদার পরিমাণ। পুরোনো হকারদের পাশাপাশি এক থেকে তিন মাসের নতুন চুক্তিতেও বসানো হচ্ছে নতুন হকার। এ হকারদের থেকে প্রতি ৪৫ ইঞ্চি জায়গা বাবদ নেয়া হচ্ছে ছয় হাজার থেকে দশ হাজার টাকা। জায়গা বিশেষ এই চাঁদার পরিমাণ আরও বেশি। এছাড়া প্রতি ৪৫ ইঞ্চির দোকানে বিদ্যুৎ ব্যবহার বাবদ প্রতি মাসে ৯০০ টাকা, খাজনার নাম করে ৯০০ টাকা, লাইনম্যানকে ১২শ টাকা এবং পুলিশের দুর্নীতিবাজ বিপথগামীদের মাসপ্রতি তিন হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এছাড়া নতুন দোকান নিতে এককালীন ১ লাখ থেকে দুই লাখ টাকা অবধি গুনতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শুধু ফুটপাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে এমন গডফাদার সিন্ডিকেটে গুলিস্তানে রয়েছে ৪ জন। মতিঝিলে তিনজন, সদরঘাটে তিনজন, নিউমার্কেটে তিনজন, ফার্মগেটে তিনজন, মিরপুর-১ নম্বরে দুইজন এবং ১০ নম্বরে দুইজন, তেজগাঁও ৩ জন, বাড্ডায় দুইজন, গুলশান ৩ জন, উত্তরায় দুই জন এবং কুড়িলে দুজন রয়েছেন। সরেজমিন গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, বঙ্গবাজার, রাজধানী সুপার মার্কেট, ইসলামপুর কাপড় বাজার, কেরানীগঞ্জ কাপড় মার্কেট, রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেট, খিলগাঁও রেলগেট বাজার, মালিবাগ সুপার মার্কেট, মালিবাগ বাজার, মৌচাক, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, এছাড়া মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও পুরান ঢাকার একাধিক ফুটপাত ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে ঈদকে সামনে রেখে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নামে বেনামে সংগঠনের নামে নিয়মিত চাঁদার পাশাপাশি তোলা হচ্ছে ইফতারের খরচও।

নিউমার্কেট এলাকায় একজন পুটপাত নিয়ন্ত্রণ করা গডফাদার হকারদের রক্ত চুষতে চুষতে যাত্রাবাড়ীতে ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি তৈরি করছেন।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এখানকার ব্যবসায়ীরা বলেন- এ এলাকায় এ ধরনের বেশ কয়েকজন রয়েছেন। এদের চাঁদা না দিলে ব্যবসা করা যায় না। তারা বলেন, এরা ছাড়াও পাশের একটি কলেজ ছাত্রলীগের কিছু ক্যাডার চাঁদা তোলে। এদের উৎপাত সারা বছরই সইতে হয়। এর বিরুদ্ধে কথা বললে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। রোজা ও ঈদে এ যন্ত্রণার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

গুলিস্তান খদ্দের মার্কেট এলাকার এক হকার বলেন, এখানে চাঁদা দিয়েই ব্যবসা করি। ব্যবসা না করলে খাব কী? আমাগো নাম লিখবেন না, লিখলে কাল থেকে আর বসতে দেবে না।

ফুটপাতে ব্যবসা করা হকাররা জানান, চাঁদাবাজদের পাশাপাশি পুলিশকেও নিয়মিত টাকা দিতে হয়। স্যাররা (পুলিশ) আমাদের থেকে টাকা নেন, আবার মাল-জিনিস ফেলে দেন, কখনো মাইর দেন এবং জেলেও দেন।

অবৈধভাবে দোকান করার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, এই ব্যবসা দিয়েই পরিবারের রুটি-রুজি চলে। এ ব্যবসা ছাড়ারও উপায় নেই। এ বছরও চাঁদা দেয়া শুরু করেছি। এখন আর দোকান লাগাইয়া আমাগো কিছুই থাকে না। যা আয় করি দিন শেষে সবাইকে দিতে দিতে আমগো কিছুই থাকে না।

গুলিস্তান হকার্স, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, খিলগাঁও তালতলা, মিরপুর শাহ আলী, ১ নম্বর, গুলশান-১ ও ২, মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার, মুক্তবাংলা, উত্তরা ও পুরান ঢাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাও একই রকম তথ্য দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বায়তুল মোকাররম জিপিও লিংক রোডে হলিডে মার্কেটে খোকন মজুমদার, আবুল হাসেম, মজিবর, পোটল, নসু, হারুন ও তার সহযোগীরা চাঁদা আদায় করে। উত্তরগেট এলাকায় দুম্বা রহিম, সাজু চাঁদা তোলে। শাপলা চত্বরে আরিফ; পল্টনে দুলাল ও তার সহযোগী; গুলিস্তানে আহাদ পুলিশ বক্স ও রাস্তায় আমিন, সাহিদ ও লম্বা হারুন; জুতাপট্টিতে সালেহ; গোলাপ শাহ মাজারের পূর্ব-দক্ষিণ অংশে ঘাউড়া বাবুল ও শাহীন টাকা তোলে। এ ছাড়া ওসমানী উদ্যানের পূর্ব ও উত্তর অংশে লম্বা শাজাহান; গুলিস্তান খদ্দর মার্কেটের পশ্চিমে কাদের ও উত্তরে হান্নান, পূর্বে সালাম, আক্তার ও জাহাঙ্গীর; গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনের রাস্তায় লাইনম্যান সর্দার বাবুল; সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের উত্তর পাশের রাস্তায় জজ মিয়া, পূর্ব পাশের রাস্তায় সেলিম মিয়া; মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে মো. আলী, আবদুল গফুর ও বাবুল ভুঁইয়া; শাহবাগে ফজর আলী, আকাশ, কালাম ও নুর ইসলাম; যাত্রাবাড়ীতে সোনামিয়া, তোরাব আলী, মান্নান টাকা তোলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। জুরাইন-পোস্তগোলায় খায়রুল, সিরাজ তালুকদার ও গরু হানিফ; লালবাগে আবদুস সামাদ, চানমিয়া ও ফিরোজ; মিরপুর-১-এ ছোট জুয়েল, আলী, বাদশা ও মিজান; মিরপুর-১১-এ আবদুল ওয়াদুদ, শফিক ও হানিফ; গুলশানে হাকিম আলী; কুড়িলে আবদুর রহীম ও নুরুল আমিন; এয়ারপোর্টে আকতার, মনির, ইব্রাহিম, জামাল ও বাবুল; উত্তরায় টিপু, নাসির ও হামিদ চাঁদা তোলে।

জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৭২ জনকে আসামি করে ৩ থানায় তিনটি মামলা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সামসুল আলম। মতিঝিল থানায় ১৬ জন, পল্টন থানায় ৪৯ জন এবং শাহবাগ থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা তিনটি হয়। শাহবাগ থানার মামলায় আসামি করা হয় লম্বু শাহজাহান, বাবুল, মানিক, ইমরান, দুলন, শাহীন ও আইয়ুবকে। পল্টন থানার মামলায় আসামি করা হয় লম্বা হারুন, দেলু, নাসির, মিন্টু, আলী, আবদুল গফুর, কাদের, খলিল, কোটন, জাহাঙ্গীর, নসু, সাজু, রহিম, নুরু, জাহাঙ্গীর, আবুল হাসেম কবির, আবদুল ওয়াদুদ, সরদার বাবুল, বুড়া সালাম, জুয়াড়ি সালাম, আক্তার, জাহাঙ্গীর, কালা নবি, আবদুর রব, কামাল, নজরুল, মনির, শফিক, হাসান, সোর্স শহীদ, বড় মিয়া, কালাম, বিমল বাবু, শওকত, হাবিব, ভোলা, কানা সিরাজ, আবদুল হান্নান, আলমগীর, সেকান্দার হায়াত, মুরসিকুল ইসলাম শিমুল, শফিকুর রহমান বাবুল, মঞ্জুর ময়িন, আবুল হোসাইন, আরিফ চৌধুরী, খোকন মজুমদার, খায়রুল বাশার, রফিকুল ইসলাম, সাত্তার মোল্লা ও আবুল হাসেমকে।

আর মতিঝিল থানায় করা মামলায় আসামিরা হলো : সাইফুল ইসলাম, শিবলু, শাহজাহান মৃধা, মকবুল, নূরুল ইসলাম, বাবলু, তাজুল ইসলাম, সাদেক, আবদুর রহিম, পবন, সাইজুদ্দিন, আবুল কালাম জুয়েল, আজাদ, কালা কাশেম, ফারুক ও সহিদ রেজা বাচ্চু।

বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এমএ কাশেম জানিয়েছেন সিন্ডিকেট করে চাঁদাবাজির কথা কমবেশি সবাই জানেন। তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর। তাদের মামলাও দেয়া হয়েছে, অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু এসব মামলার আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে ম্যানেজ করে এখনো চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ফুটপাত থেকে নেয়া বিপুল পরিমাণ চাঁদার এই টাকা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী, সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পুলিশ, চাঁদা তোলার কাজে নিয়োজিত লাইনম্যান ও তাদের সহযোগীরা ভাগ করে নেন। এদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খোলেন না কেউ। যদি কেউ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তাহলে তাকে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা, শুনতে হয় প্রাণনাশের হুমকি। কোথাও কোথাও দেখানো হচ্ছে অস্ত্রের ভয়ভীতি। তাই বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার রাস্তায় আড়াই লাখের বেশি হকার ব্যবসা করে। দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে ঢাকার ফুটপাতের দৈর্ঘ প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার।

ঢাকার ফুটপাতে বছরে প্রায় এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়, যা দুই সিটি কর্পোরেশনের সম্মিলিত বাজেটের সমান। এই ফুটপাত দখল করে অবৈধ পথে হকারদের ব্যবসা চলে। ফুটপাতে বসতে একজন হকারকে এলাকাভেদে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা লাইনম্যানদের দিতে হয়। লাইনম্যানদের মাধ্যমে এই টাকার ভাগ চলে যায় রাজনৈতিক নেতা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলে।

ফুটপাত নিয়ে একটি মাইক্রো ইকোনমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হকার, নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতা, পথচারী, চাঁদাবাজির কর্মী ও ছিনতাই কারী, ফুটপাত দখলকারী স্থায়ী ব্যবসায়ী এবং মাফিয়া রাজনৈতিক চাঁদাবাজ এই ছয়টি শ্রেণি শহুরে ফুটপাতের উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল। ফুটপাতে তৈরি হওয়া স্বল্প সংখ্যক, হকার্স মার্কেট কিছু রাজনৈতিক দলসংশ্লিষ্ট হকার নেতাকর্মী ছাড়া সাধারণ হকাররা পেয়েছে অথবা ঘুষ দেয়া ছাড়াই পেয়েছে বলে প্রমাণ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা বিচ্ছিন্ন কোনো সমস্যা নয়। বরং বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দুর্নীতি, মাফিয়া সিন্ডিকেট সব মিলেই এ সমস্যাকে আরো প্রকট করে ফেলেছে। প্রশাসন যখন কিছু করতে চায়, তখন ফুটপাত নিয়ন্ত্রণারী অসাধু সিন্ডিকেট লবিং শুরু করে দেয়। প্রশাসন এবং সিন্ডিকেটের মধ্যে যে দরকষাকষি হয়, তার বলি হয় হকাররা। অন্যদিক দিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয় একটি বিশেষ শ্রেণির সংঘবদ্ধ চক্র।

ফুটপাতে চাঁদার অভিযোগ এবং উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন জানান, ফুটপাতে অবৈধ দখল এবং উচ্ছেদ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি স্থানীয়দেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। ফুটপাতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে সবার দায়বদ্ধতা রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন একা তো পারবে না। আমরা সকালে অভিযান পরিচালনা করলেও বিকেলেই নতুন করে এসব দোকান গড়ে ওঠে। আমাদের মাত্র দুইজন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট থাকায় চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন খাল উদ্ধার এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতেই বেশির ভাগ সময় যাচ্ছে আমাদের কর্মকর্তাদের। এ ক্ষেত্রে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা অনেক রয়েছে তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অভিযান পরিচালনার পরেও নতুন করে কিভাবে এসব দোকান পুনরায় বসছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের কাছে চিহ্নিত কোনো চাঁদাবাজ বা অবৈধ স্থাপনা পুনরায় কারা বসাচ্ছেন এমন তথ্য নেই। তবে আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। রমজান মাসে সাধারণত উচ্ছেদ অভিযান কম বের হয় তবুও আমরা নিয়মিত নানা জায়গায় অভিযোগ পরিচালনা করছি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান জানান, আমরা একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি কিন্তু ফলাফল দাঁড়িয়েছে সকালে উচ্ছেদ করলেও বিকালে তারা বসেছে আবার বিকালে উচ্ছেদ করলে রাতেই ফুটপাত দখলে চলে যায়। সামগ্রিক এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা এবং সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। তবে আশার কথা হলো, এ জাতীয় সমস্যা নিরসনে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।

প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমাদের কোনো স্তরে এ জাতীয় সমস্যা হলে তারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানায় অথবা জরুরি সেবায় কল করেও সহায়তা নিতে পারেন। তা ছাড়া আমাদের সব কর্মকর্তার চেইন অব কমান্ড মেইনটেইন করতে হয়, এ ক্ষেত্রে এ জাতীয় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে মাঠ পর্যায়েও আমাদের টিম কাজ করছে।