ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি

তবুও হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না

তবুও হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না

ছয় দফায় সময় বাড়ানো ও সৌদি অংশের ১১ হাজার টাকা খরচ কমানোর পরও এবার বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। প্রায় ৯ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি রেখেই গতকাল নিবন্ধনের বেধে দেয়া সময় শেষ হয়। তবে এ সময় শেষে আবারো সপ্তমবারের মতো ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সূত্র মতে, এবার খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েও অনেকেই হজে যাওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছেন। তাই প্রাক-নিবন্ধিতদের অনেকেই নিবন্ধন করেননি। যে কারণে অন্য বছর যেখানে হজে যেতে দুয়েক বছর অপেক্ষায় থাকতে হতো, সেখানে এবার কোটা খালি থাকায় নতুন করে কেউ কেউ একই সঙ্গে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের সুযোগ পেয়েছেন।

এদিকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুরো প্যাকেজমূল্য দিয়ে নিবন্ধন করলেও বেসরকারিতে প্রাক-নিবন্ধনের ৩১ হাজার বাদে ২ লাখ ৬ হাজার ৯৫৮ টাকা লেগেছে। তাই সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিকে বাকি টাকা পরিশোধ করা নিয়েও নিবন্ধিতদের অনেকে অনিশ্চয়তায় আছেন। অথচ সৌদিতে বাড়িভাড়া শুরুর পর মোয়াল্লেম ফি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা কেটে নেয়া হবে। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়বে এজেন্সিগুলো। অন্যদিকে কোটা পূরণ না হলে বাংলাদেশের ইমেজও কিছুটা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের অনেকেই ঈদের পর হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই এ অবস্থায় গত বছরের মতো রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা দিলে তাদের অনেকে হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন, অন্যদিকে কোটা পূরণেরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

সূত্র মতে, সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন।

কোটা অনুযায়ী হজযাত্রী চূড়ান্ত করতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাক-নিবন্ধতি হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এবার সরকারি-বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় খরচ অনেক বাড়ার কারণে দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিয়ে থাকা ব্যক্তিদেরও হজের আগ্রহ কমে যায়। অনেকে কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে, আবার অনেকে আগের পরিকল্পনা থেকে পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমিয়ে নিবন্ধন করেন। তবে নিবন্ধনের সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় পরপর ছয় দফায় সময় বাড়ানো হয়। একপর্যায়ে প্রাক-নিবন্ধিত তালিকার বাইরেও নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেদেশে সেবামূল্য কমানোয় বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনে প্রতিজনের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমেছে। এরপরও হজযাত্রীর কোটা পূরণ হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের হজযাত্রী নিবন্ধন হয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ২৮৫ জন। অর্থাৎ, কোটা পূরণে এখনো প্রয়োজন ৮ হাজার ৯১৩ জন (প্রায় ৮ শতাংশ)। নিবন্ধিতদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৯৩৫ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ৮ হাজার ৩৫০ জন। অর্থাৎ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ২৪ শতাংশ ও বেসরকারিতে প্রায় ৪ শতাংশ কোটা এখনো খালি আছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন করে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়ানো বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের (হজ) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ড. মো. মঞ্জুরুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এখন পর্যন্ত নতুন কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। হজ শাখার অতিরিক্ত সচিবসহ একটি টিম সৌদি আরবে আছেন। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে সেখান থেকেই আসবে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেয়া হবে।

পরে রাত ৮টার দিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল দুপুরে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নিবন্ধনের সময় শেষ হওয়ার আগে কোটা খালি থাকার কথা বলার সুযোগ নেই। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোনাজ্জেম ও গাইডসহ হজযাত্রীর কোটা পূরণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। প্রাক-নিবন্ধিতদের অনেকেই হজের নিবন্ধন না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হজের খরচ বাড়ার কারণে এবার ওমরা পালনে ঝুঁকছে অনেকে। অনেক মানুষ ওমরাহ করতে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত হজের প্রস্তুতি স্বাভাবিকভাবেই এগোচ্ছে এবং কোন সমস্যা দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সৌদি আরব এবং বাংলাদেশে হজ সংক্রান্ত কার্যক্রম গুছিয়ে আনা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া করতে সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মতিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে গেছেন।

অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য এজেন্সিগুলো শিগগিরই বাড়িভাড়ার কাজ শুরু করবেন বলে জানা গেছে।

হজ প্যাকেজের খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে আশাহত : চলতি বছর সরকারিভাবে প্রত্যেক হজযাত্রীর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় খরচ সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে এ বছর সর্বনিম্ন খরচ হবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। সরকারি-বেসরকারি দুটি প্যাকেজের ক্ষেত্রেই উল্লিখিত খরচের বাইরে হজ পালনকারীদের কোরবানি বাবদ টাকা নিতে হবে। তবে সৌদি আরবে একটি খাতে সেবামূল্য কমানোয় বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারিভাবে হজ পালনে প্রতিজনের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমেছে।

সূত্র মতে, গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছিল। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।

সূত্র মতে, করোনাকালের আগে ২০১৯ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও ওই বছর করোনার কারণে কারো হজে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। একই কারণে ২০২১ সালেও হজযাত্রা বন্ধ ছিল।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হজের খরচের বেশ কিছু খাতে খরচ বেড়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সৌদি আরবের মোয়াল্লেম ফি বাবদ প্রায় ১ লাখ টাকা। এরপর বিমান ভাড়া প্রায় ৫৮ হাজার টাকা বেড়েছে। এছাড়া রিয়ালের মূল্য বৃদ্ধি বাবদ প্রায় সাড়ে ৬২ হাজার টাকা বেড়েছে।

এবার হজের খরচ অনেক বাড়ার কারণে হজযাত্রীদের আগ্রহ কমে গেছে বলে জানান হজযাত্রী ও হাজীকল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের। তিনি বলেন, এর আগে দুয়েক বছর পর বিমান ভাড়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বাড়ত। কিন্তু এবার একবারে গতবারের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা হজযাত্রীদের জন্য বেশ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে বন্ধ থাকায় এবং গতবার বয়সের শর্ত থাকায় অনেকেই প্রাক-নিবন্ধন করেও হজে যাওয়ার সুযোগ পাননি। এবার সব শর্ত উঠে যাওয়ায় হজের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তারা গত বছরের হিসাব অনুযায়ী হজে যেতে ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু এবার তার চেয়ে অনেক খরচ বাড়ার কারণে তারা হতাশ হয়ে গেছেন। এজন্য প্রাক-নিবন্ধন করে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও হজের আশা আপাতত ছেড়ে দিয়েছেন। যার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে নিবন্ধন পরিসংখ্যানে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের আরো বলেন, অনেকে খুব কষ্ট করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট প্যাকেজ মূল্য থেকে ২ লাখ ৫ হাজার ৯৫৮ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। এর আগে তাদের প্রাক-নিবন্ধনে গেছে ৩১ হাজার টাকা। এখন বাকি টাকা জোগাড় করা নিয়ে তাদের অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অনেকে ঈদের পর পরিস্থিতি বুঝে হজে যেতে যান। তাই গতবারের মতো ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা রাখলে কোটা পূরণের সম্ভাবনা আছে বলে তিনি জানান।

লিড এজেন্সিতে হজযাত্রী স্থানান্তনের নির্দেশনা : বেসরকারি ১১৭টি এজেন্সির অনুকূলে নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৯৭ এর কম হওয়ায় জরুরিভিত্তিতে লিড এজেন্সি নির্ধারণপূর্বক নিবন্ধিত হজযাত্রীদের স্থানান্তর করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখাকে জানানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথা জানানো হয়। উল্লেখ্য, লিড এজেন্সি সমঝোতাকারী এজেন্সিদের সব দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২২ অনুযায়ী সমন্বয়কারী এজেন্সির সব দায়-দায়িত্ব লিড এজেন্সির জন্য প্রযোজ্য হবে।

সূত্র মতে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়মানুযায়ী অনুমোদিত প্রত্যেক এজেন্সি কমপক্ষে ১০০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। ১০০ জনের কম হলে অন্য এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে, যাকে লিড এজেন্সি বলা হয়ে থাকে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ২১ মে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত