ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন

প্রত্যাশা পূরণে ইসির সংশয়

প্রত্যাশা পূরণে ইসির সংশয়

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনীর প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনে কি কি সংশোধনী করা হবে, তা চূড়ান্ত করা হবে। তবে, এটি অনুমোদন দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন (ইসির) প্রত্যাশা পূরণ কতটুকু হবে তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন মহলে আলোচনা।

সূত্র জানায়, আরপিওতে ইসি যেসব পরিবর্তন চেয়েছিল তার মধ্যে অনেকগুলো বাদ পড়তে পারে। বিশেষ করে ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রজ্ঞাপন দেয়ার পরও নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা রাখতে চেয়েছিল ইসি। কিন্তু এটি বাদ পড়তে যাচ্ছে। এ ক্ষমতা ইসিকে দেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এছাড়া ইসির আরো কিছু প্রস্তাবনা বাদ পড়ছে।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা জানিয়েছিলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) গেজেট হওয়ার পর ভোটের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা থাকে না বর্তমানে ইসির হাতে। আমরা নতুন প্রস্তাবটি তৈরি করেছি যেন নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পরেও কিছু করার ক্ষমতা থাকে। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি যুক্তি দিয়েছিলেন যে আরপিওর ৯১ ধারা কমিশনকে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দিয়েছে। তবে পরবর্তীতে তারা আমরা যে যুক্তি দিয়েছি তার সঙ্গে একমত হয়েছে।

সূত্র জানায়, আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদনের পর এখন জানা যাচ্ছে ইসির এ প্রস্তাব মেনে নেয়া হচ্ছে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনী হবে সেটি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে বৈঠকে কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, এর মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়ে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এখন কোনটি থাকবে তা সরকার ঠিক করবে।

এছাড়া, নির্বাচন কমিশনের কার্ডধারী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কেউ এই অপরাধ করলে তাকে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

বিদ্যমান আরপিও অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সাতদিন আগেই ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি বিল) জমা দিতে হতো। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগের দিন পর্যন্ত এসব বিলের কপি জমা দেয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর প্রার্থীদের টিআইএন সনদ এবং আয়করের রসিদ জমা দিতে হবে। সচিব আরো বলেন, আইনের সংশোধন হবে সেটি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন পরবর্তীতে কি কি সংশোধনী হবে তা চূড়ান্ত হবে।

এদিকে আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদনের পর ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটের ফলাফল গেজেট প্রকাশের পর বাতিল করার ক্ষমতা নয়, বরং গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণ পেলে ফল প্রকাশের আগেই ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রাখার সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) নির্বাচনি আইন সংস্কার নিয়ে ইসির একগুচ্ছ প্রস্তাবনার মধ্যে দুটি বিষয় সুস্পষ্ট করেন তিনি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গত মঙ্গলবার আরপিও সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। তা আরো পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে ফের সভায় উঠবে। ইসি সচিব আরো জানান, আরপিও সংশোধনের বিষয়ে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, মিডিয়াতে দুটো বিষয়ে ভিন্ন রকম প্রতিবেদন এসেছে। একটি বিষয় হচ্ছে- যদি কোথাও গুরুতর অনিয়মের কারণে নির্বাচন স্থগিত করতে হয়, নির্বাচন কমিশন করতে পারেন, এটা আগে থেকে বলা আছে।

তিনি বলেন, এখন (সংশোধনী প্রস্তাবে) বলা হয়েছে, কোনো একটি ফলাফল তৈরির সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বিবরণীটা কমিশনে পাঠাবে; তখন যদি গুরুতর কোনো অনিয়ম হয়, তখন নির্বাচন কমিশন যথাযথ তদন্ত করবে। তদন্তে ফলাফল সঠিক হলে তা প্রকাশ করবে। অন্যথায় গুরুতর অপরাধে ফলাফল সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হলে তখন তারা বাতিল করতে পারবেন। এখানে গেজেট প্রজ্ঞাপনের পরে বাতিল করা হবে- কথাটা কিন্তু তা না।

সচিব জানান, সংসদ নির্বাচনে এখন প্রতি জেলায় একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়, যিনি জেলা প্রশাসক বা অন্য কেউ হতে পারেন। এ রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলার আওতাধীন সব আসন তদারকি করেন। কিন্তু কোনো উপ-নির্বাচন হলে একটি আসনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হয়। সেজন্যে আইনে জেলা শব্দের পাশাপাশি সংসদীয় আসন যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা বিষয়ে সচিব জানান, এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে জেলা (ডিসট্রিক্ট) শব্দটির সঙ্গে অথবা আসন (কন্সটিটিউয়েন্সি) শব্দটি যোগ করা হয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রেই আইনের ধারাটা না পড়েই ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।

নীতিগত অনুমোদন বিষয়ে মো. জাহাংগীর আলম বলেন, স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আরপিও সংশোধন নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। সেখানে ইসির প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। নীতিগত অনুমোদন বলতে যে প্রস্তাবনাগুলো আছে, সেগুলো আইন মন্ত্রণালয় আরো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখবে। তারপর পরবর্তী সভায় উত্থাপন করবে। কোনো অংশ বাতিল বা কোনোটা রাখা হবে সেটা কিন্তু নীতিগত অনুমোদনের সময় সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না। সাবেক নির্বাচন কমিশন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সাখাওয়াত হোসেন বলছেন, আইনে থাকলে হয়তো কমিশনের জন্য ভালো, কিন্তু আস্থা ফেরানোর বিষয়টি নির্ভর করে আসলে কমিশনের কর্মকাণ্ডের ওপরে।

তিনি বলেন, আস্থার বিষয়টি আসবে যদি নির্বাচন কমিশন এই আইনগুলোকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে। সেটা যতক্ষণ না হবে, ততক্ষণ আস্থার বিষয়টি আসবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত