সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষায় গঠিত হচ্ছে এনটিএ

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে চালু হওয়া ‘গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা’ নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই নেয়া হচ্ছে একক ভর্তি পরীক্ষার নতুন উদ্যোগ। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে এবার গঠন করা হচ্ছে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত ‘কোর কমিটির’ প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল সোমবার। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এ বৈঠকে এনটিএ কাঠামো নিয়ে আলোচনা এবং এ বিষয়ে কমিটি গঠন হতে পারে বলে জানা গেছে। আগামী বছর থেকে নতুন এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি চালু হলে গুচ্ছ পদ্ধতিরও অবসান হবে।

এদিকে একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানা না গেলেও এটি নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তবে পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরই-এ সম্পর্কে মন্তব্য করার কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আগামী বছর থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য আলাদা একটি সংস্থা (ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি-এনটিএ) গঠিত হবে। ভারতে এই পদ্ধতি আছে। এ বিষয়ে এখনো কিছুই ঠিক করা হয়নি। কাল শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা হবে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকবেন। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে হয়তো একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই কাজ শুরু হতে পারে।

তিনি আরো জানান, নতুন পদ্ধতি চালু হলে চলমান গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বাদ হয়ে যাবে। সব বিশ্ববিদ্যালয় এক ছাতার মধ্যে আসবে।

সূত্র জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো এবং আর্থিক সাশ্রয় কমাতে তিনটি গুচ্ছে (সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট গুচ্ছ) বর্তমানে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি। অন্যদিকে গুচ্ছ ভর্তিতে নানা জটিলতায় এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে গুচ্ছের আসল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে। এই অবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক ছাতার নিচে এনে একটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। সেজন্য গঠন করা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)।

সূত্র মতে, এনটিএ কার্যপরিধি, কোন পদ্ধতিতে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে, কারা এর নেতৃত্বে দেবে তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করতেই মূলত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ে কোর কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসছেন। বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে এক ছাতার নিচে আসে এই বৈঠকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতিকে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে কোর কমিটির সদস্য ও বৈঠকে অংশ নেবে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই বৈঠকটি হবে। বৈঠক থেকে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হব। আগামীকালের বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রাজশাহী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে এনটিএ-তে আনা যায়, তা হবে মুখ্য আলোচনা।

তিনি জানান, যেহেতু এই বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসেনি তাই তাদের এনটিএতে আনার বিষয়ে বেশি আলোচনা হবে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে গত ২৭ মার্চ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালন নীতি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে এনটিএ (ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি) গঠন করতে হবে। ইউজিসিকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উপস্থিতিতে আগামীকালের নীতি-নির্ধারণী সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব উপস্থিত থাকবেন।

একক ভর্তি পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ইমদাদুল হক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, শুনেছি এ পদ্ধতি ভারতে চালু আছে। তবে এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তাই এ নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। কোর কমিটির মিটিং হবে আগামীকাল। সেখানে কী আলোচনা হয় বা এ বিষয়ে কী নীতিমালা হয় তা দেখেই বিস্তারিত বলা যাবে। তবে আগামী বছর চালুর টার্গেট নিয়ে আগেই এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় ভাল হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার সময় পাওয়া যাবে। তবে এনটিএ গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের অথরিটি হলে তা অবশ্যই খুব ভালো হবে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে। সব দেশে এটি একটি নিয়মে চলে। শুধু আমাদের দেশে বিচ্ছৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এমন অথরিটি হলে এটি শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে। এদিকে বিভিন্ন সমস্যার কারণে চলমান গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় এবার থাকতে চাচ্ছে না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। তবে আগামী বছর থেকে একক পদ্ধতি চালুর উদ্যোগের প্রেক্ষিতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আগামী বছর থেকে যেহেতু নতুন পদ্ধতি চালু হবে, তাই একবছরের জন্য আর গুচ্ছ থেকে বের না হলেই ভাল হবে। একইভাবে ইবি ও জবি এবারও গুচ্ছে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান।

উল্লেখ্য, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বিক ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে ২০২০-২০২১ সেশন থেকে শুরু হয় সমন্বিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। স্বায়ত্তশাসিত ও বিশেষায়িত ছাড়া প্রথমবার ২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শুরু হলেও পরের বছর থেকে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে শুরু হয় এ ভর্তি প্রক্রিয়া। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য বিবেচনায় যতটুকু ইতিবাচক আশার সঞ্চার করার কথা ছিল দুই সেশনে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে তার চেয়েও বেশি হতাশার সৃষ্টি করায় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা আসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি থেকে। এর আগে থেকে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা দুটি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করছে।