ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

মনোনয়ন ঝুঁকি কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় এমপিরা

মনোনয়ন ঝুঁকি কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় এমপিরা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় এমপিদের মনোনয় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যেসব এমপি এরই মধ্যে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দল ও জনগণের সঙ্গে সমান তালে দূরত্ব বাড়িয়েছেন, তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে সেই ঝুঁকি কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন এমপিরা। রমজান মাস যেন তাদের জন্য আর্শিবাদ হয়ে ধরা দিয়েছে। এবার রমজান মাসকে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্যরা। যাদের বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে, তা এবার ঘুচাতে চাইছেন তারা। রমজান মাসের শুরু থেকেই অধিকাংশ এমপি নিজ নিজ নির্বাচনি এলকায় অবস্থান করছেন। রমজান মাসে মানবিক কার্যক্রম নিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠে নেমেছেন সংসদ সদস্যরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধ্যান্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গেও দূরত্ব কমিয়ে আনতে কাজ করছেন তারা। আন্তরিকতা বাড়িয়েছেন ধর্মীয় ও সামজিক ও প্রতিষ্ঠানের কতর্ভব্যক্তিদের সঙ্গেও। মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিবৃত্ত করতে তাদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনেছেন। পুনরায় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে ইফতার সামগ্রিক পাঠাচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচি না থাকলেও মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় অংশ নিচ্ছেন। অনেকে আবার গরিব-অসহায় মানুষকে রমজানের বাজার করার জন্য অর্থ জোগানও দেবেন। দাফন-কাফন ও জানাজা এমনকি মানুষের শেষকৃত্যেও অংশ নিচ্ছেন এমপিরা।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়ায় এমপিরা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয় পাওয়ার ক্ষেত্রে বাদ পড়বেন। তাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের নানা তথ্য এসেছে দলের কাছে। সব দলের অংশ গ্রহণে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে, ধরে নিয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় সভায় দলীয় এমপিদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশ দেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্যরা আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না বলেও তিনি সতর্ক করেন। আর রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, একজন জনপ্রতিনিধি জনগণের সঙ্গে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের দেশের অনেকই এমপি হওয়ার পর জনগণকে উপেক্ষা করে চলেন। জনসাধারণ তাদের খুঁজে পায় না। রমজন মাসকে ঘিরে এমপিদের মানবিক কার্যক্রম রাজনীতি ও ব্যক্তি ইমেজে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে। জনগণের সেবা করলে জনসেবক হওয়া যায়। জনসেবক হওয়ার মধ্যদিয়েই তারা জনমনে আস্থা ফিরাতে পারবেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সার্ভে করছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করছেন, যারা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, উন্নয়নর প্রচার করছেন। জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখেন এবং জনগণ যাদেরকে চায়, তাদেরকেই তিনি মনোনয়ন দেবেন।

আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে জনসম্পৃকতা বাড়িয়ে কেউ যদি জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে পারে, এটা তো ভালো। এই বিষয়টি আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা ভালো কাজ। জনসাধারণের কাছে গেলেই একজন রাজনীতিবিদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব কমে আসে। ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়। এমপিদের সক্রিয় হওয়ার মধ্যদিয়ে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সংসদীয় সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সেসব এমপি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, আগামীতে তাদের আর মনোনয়ন দেয়া হবে না।’ এটাই বাস্তবতা। যেসব সংসদ সদস্য নির্বাচনি এলাকা থেকে দূরে ছিলেন। এলকার মানুষের সঙ্গে সংযোগ কম ছিল। তারা জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছেন। এখনো সময় আছে, তারা যদি ফের জনপ্রিয় হয়ে উঠেন, মানুষকে আস্থা ফিরাতে পারেন, জনপ্রিয়তায় শীর্ষে আবস্থান করতে পারেন, তাহলে পুনরায় তারাও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। আর যদি কেউ জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হন, জনপ্রিয়তা ফেরাতে না পারেন, দলের অন্য কেউ যদি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন; তাহলে তিনি দলীয় সমর্থন পাবেন। এটা চলমান পক্রিয়া। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত এই বিষয়টি জরিপ করছেন। সবশেষে নির্বাচনের আগেও তিনি জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাইয়ের জরিপ করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত