ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংলাপের সব চেষ্টা ব্যর্থ

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নয়া পথের সন্ধানে ইসি

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নয়া পথের সন্ধানে ইসি

বিএনপির ধারাবাহিকতায় সংলাপে অংশ নিতে বাকি ৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এসব দল বর্তমান পরিস্থিতে ইসির সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র। অন্যদিকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে উপায় খুঁজছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ (আলোচনা) করতে উদ্যোগ নিয়েছিল ইসি। কিন্তু সেটিও ব্যর্থ হয়েছে। এখন আংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে নতুন পথের সন্ধানে নামতে হবে ইসিকে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, শেষ পর্যন্ত ইসি চেষ্টা চালিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ইসির হাতে যে সুযোগ থাকবে তার সবই ব্যবহার করা হবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের জন্য গত বৃহস্পতিবার ৮টি দলকে আলোচনার জন্য চিঠি পাঠায় ইসি। বিএনপির পাশাপাশি এই দলগুলো গত বছরের জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সংলাপ বর্জন করেছিল। দলগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।

এর আগে গত ২৩ মার্চ বিএনপিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনানুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ইসির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে বিএনপির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছিল। বিএনপি চাইলে তাদের জোটভুক্ত সমমনা দলকে সঙ্গে নিয়েও আলোচনায় বসতে পারে বলেও ইসির ওই অনানুষ্ঠানিক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে বিএনপি এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা ইসির সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। চিঠিরও আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেবে না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়। সেজন্যই ডেকেছি, অনানুষ্ঠানিকভাবে ডেকেছি। কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপেও বিএনপিকে ডাকা হয়নি।

দলগুলো আসলে আলোচনা কী নিয়ে হবে, তাদের দাবি তো একটাই নির্বাচনকালীন সরকার এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেছেন, আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে চাইছি না। কথা হচ্ছে, বিএনপিসহ সমমনা দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওনারা যদি আসেন, কী আলোচনা করব, সেটা সময়ই বলে দেবে। আলোচনার মধ্যেই ফুটে উঠবে ওনারা কী বললেন, আমরা কী বলব। আগাম কোনো বক্তব্য বা আগাম কোনো ধারণাও আমি দিতে পারছি না।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, বিএনপি আমাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলেও আমরা আশা ছাড়িনি। আমাদের প্রত্যাশা বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমরা চাইব সব দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাব। আমরা নিজেরাই চাই সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলে তাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেনি। তাই আমাদের ইচ্ছা আছে, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কমিশনের কাজ নিবন্ধিত দল সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করা। ইসি চায় সবাই নির্বাচন অংশগ্রহণ করুক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। এজন্য সংবিধান, আইন যা আছে তাতে যা করা প্রয়োজন নির্বাচন কমিশন তার সব করবে। ইসির চিঠির বিষয়ে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপতি ও ইসি বরাবর আমাদের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনো সায় মেলেনি। তাছাড়া এই ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যার প্রমাণ গাইবান্ধা ও কুমিল্লা নির্বাচনে দেখেছি। ফলে তাদের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বলেছেন, আগেরবার আমরা যাইনি। তবে তাদের চিঠি পেয়েছি, সেটা গ্রহণও করেছি। তবে এবার এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি যাব কি যাব না। সিদ্ধান্ত নিলে আমরা অবশ্যই আপনাদের জানাব। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেছেন, আগেরবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করার কোনো পরিবেশ ছিল না। এবারও আলোচনার সম্ভাবনা কম। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আমাদের কিছু আপত্তি রয়েছে। সেসব বিষয়ের কোনো সমাধান হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত