যোগাযোগের নতুন মাইলফলক স্পর্শ

আজ পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে পদ্মা সেতুতে

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক পথে যানবাহন চলাচলের পর এবার পদ্মা সেতুর রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে আজ মঙ্গলবার। গ্যাংকার ট্রেন দুপুর ১২টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা ছেড়ে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক আফজাল বলেন, একটি গ্যাংকার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পৌঁছাবে। আবার সেটি ভাঙ্গায় ফিরবে। এর আগে কখনো কোনো ট্রেন পদ্মা সেতু পার হয়নি। সেই হিসেবে এই প্রথম কোনো ট্রেন সেতু পার হবে আজ।

পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে দেশের বৃহত্তর রেল যোগাযোগের নেটওয়ার্ক, যা রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করবে যশোর-বেনাপোলসহ পায়রা ও মোংলা বন্দরকে। রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে যোগাযোগের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে নতুন এই রেলপথ। শতভাগ দৃশ্যমান হয়েছে মূল সেতুর সমপরিমাণ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেলপথ, যার ওপর দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ মাইল গতি বেগে ছুটবে দ্রুতগতির ট্রেন। রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারের রেলপথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা। এতে দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীতে যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হওয়ার পাশাপাশি, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সহজে পৌঁছে যাবে গ্রাম থেকে শহরে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের পরিদর্শন প্রকৌশলী সঞ্জয় চন্দ্র রায় বলেন, গত বুধবার সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন শেষ হয়েছে। আমরা যারা এ নির্মাণযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তারা উৎফুল্ল, আনন্দিত। আমাদের হাতের ছোঁয়ায় দেশের একটি বড় অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে। এটা গর্বের, গৌরবের।

পদ্ম সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, আগেই শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর সড়কপথের কাজ। এরপর গত বছরের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে ২৬ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় সেতুটি। এবার সেতুর নিচ তলার রেলপথের কাজ শেষ হয়েছে।

আজকে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করবেন। পুরোপুরি চালু হলে এই রেলপথ দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়া বিভিন্ন পণ্য পরিবহণ ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, আগামী আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী (জুন, ২০২৪) ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথটিতে কী পরিমাণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ হতে পারে, তার একটি বিশ্লেষণ এরই মধ্যে তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি। স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহণ করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি।