সুবর্ণ জয়ন্তীতে নানা পরিকল্পনা

জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসছে কাল

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশন বসছে। আগামীকাল সকাল ১১টায় চলতি সংসদের ২২তম অধিবেশন বসবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। অধিবেশন উপলক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সাংসদ সচিবালয়।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল বেলা ১১টায় সংসদ কক্ষে একাদশ জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশন এবং সংসদের ৫০ বছর পূর্তি ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশন বসবে। গত একবিংশ অধিবেশনের শুরুতে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সংসদের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এপ্রিলে বিশেষ অধিবেশন করার এ সিদ্ধান্ত হয়। চলতি সংসদের ২১তম অধিবেশন ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দুই বছর পর শুরু হয়েছিল জাতীয় সংসদের যাত্রা। প্রথম সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। পরে ৭ এপ্রিল বসে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। প্রথম সংসদের নেতা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান। প্রথম সংসদের স্পিকার ছিলেন মোহাম্মদউল্লাহ। তিনি পরে রাষ্ট্রপতি হলে সংসদে স্পিকারের আসনে বসেন আব্দুল মালেক উকিল। প্রথম সংসদ গঠিত হওয়ার প্রথম অধিবেশনে সংসদের আসন ছিল ৩০০টি। আর সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ১৫টি, যা বর্তমানে ৫০টি।

আন্দোলনের নানা পটভূমিতে ৭১-এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। এরপর শুরু হয় দেশ গঠনের কাজ। শুরুতেই গণপরিষদের মাধ্যমে রচিত হয় স্বাধীন দেশের সংবিধান। যার মাধ্যমে স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ওই নির্বাচনে ২৯৩ আসন পায় আওয়ামী লীগ। বাকি সাতটির মধ্যে পাঁচটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেতে। জাসদ একটি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ আরেকটি আসনে জিতেছিল। ওই সংসদে কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ছিল না।

সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে নানা পরিকল্পনা: স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিশেষ অধিবেশন নিয়ে বলেন, ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর আমরা সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এ কারণে ৭ এপ্রিল সংসদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। তিনি বলেন, আমরা যখন সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন একাদশ জাতীয় সংসদ চলমান। এটা অনেক গৌরবের বিষয়। আমাদের সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী এবং স্পিকারও একজন নারী। যেটা দশমের কিছু অংশসহ, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।

সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের কার্যক্রম তুলে ধরে স্পিকার বলেন, ৫০ বছরের এই বিশেষ সময়টিকে উদযাপনের জন্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তারমধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এরইমধ্যে এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। আগামীকাল থেকে অধিবেশন শুরু হবে এবং পরের দিন বিশেষ অধিবেশন বসবে। সেখানে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আসবেন। তিনি স্মারক বক্তৃতা দেবেন।

স্পিকার বলেন, পরবর্তী অংশে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব তুলবেন। প্রধানমন্ত্রী সেটি উত্থাপন ও বক্তব্য রাখার পর সব সদস্য এই আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। আলোচনায় আমরা প্রবীণ সদস্য বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের সংসদের সদস্যদের অভিজ্ঞতা শুনব। ৮ এপ্রিল আলোচনা শুরু হয়ে ৯ এপ্রিল তা সমাপ্তির দিকে যাবে এবং প্রস্তাব সাধারণ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে অধিবেশন সমাপ্তির দিকে যাবে। আমরা বিশেষ অধিবেশনের একটি খসড়া কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এর সবকিছু চূড়ান্ত হবে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে।’

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল সকালে সংসদের বৈঠক শুরু হলে ওইদিন শোকপ্রস্তাবসহ নিয়মিত কার্যসূচির মধ্য দিয়ে বৈঠক শেষ হবে। পরের দিন শুরু হবে বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম। এদিন বৈঠক বসবে বিকালে। এ দিনের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি স্মারক বক্তৃতা দেবেন। এছাড়া সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে এদিন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মারক ডাকটিকিট উন্মুক্ত করবেন। পরদিন ৮ এপ্রিল সকালে বৈঠক শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব তুলে সেটার ওপর বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হলে অন্য সদস্যদের আলোচনার সুযোগ দেয়া হবে। জানা গেছে, ৮ ও ৯ এপ্রিল দুই দিন আলোচনা শেষে সাধারণ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে। তবে, এর মধ্যে আগ্রহী সব এমপিকে আলোচনার সুযোগ দেয়া না গেলে আরো একদিন সময় বাড়ানো হতে পারে। স্পিকার জানিয়েছেন, বিশেষ অধিবেশনের আলোচনাগেুলো লিপিবদ্ধ করা হবে। তা একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হবে। এর আগে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে যে বিশেষ অধিবেশন হয়েছিল, সেই আলোচনাগুলোকেও বই আকারে এরইমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, কাল কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন। বিশেষ অধিবেশন ছাড়াও বছরব্যাপী কিছু কিছু অনুষ্ঠান থাকবে বলে জানান ড. শিরীন শারমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবীণ সংসদ সদস্যের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পারস্পরিক একটি মতবিনিময়ের চিন্তা করছি। সিনিয়র সংসদ সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা সেখানে শেয়ার করবেন। বর্তমানের তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন থাকলে সেটা করবেন। আমরা আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনও করতে চাই। সেটা হয়তো বাজেট সেশনের পরে হবে। সেখানে আমরা অন্যান্য দেশের কিছু স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাব। সেটি সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের অংশ হবে বলে আশা করছি। সেটা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হয়তো হবে।