ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবাজারে আগুন আশপাশের সড়কে ছিল তীব্র যানজট

বঙ্গবাজারে আগুন আশপাশের সড়কে ছিল তীব্র যানজট

রাজধানীতে বসবাস করা অনেক মানুষের দিন শুরু হয় যানজটের ভোগান্তি দিয়ে। আর গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যানজটের সেই ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সকাল সাড়ে ৬টা থেকে হানিফ ফ্লাইওভার, গুলিস্তান, পল্টন, প্রেসক্লাব ও সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তায় গাড়ির জটলা শুরু হয়েছিল। দিনের সময় যতই গড়িয়েছে যানজটের মাত্রা ততই বেড়েছে। অর্থাৎ গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির জটলা তৈরি হওয়ায় দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। রাস্তার ওপরই প্রখর রোদে যানবাহনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের বসে থাকতে হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় হানিফ ফ্লাইওভারের চাঁনখারপুল অভিমুখী লেন ও বঙ্গবাজার থেকে শিক্ষাভবন অভিমুখী সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসমুখী মানুষ। ফুলবাড়িয়া এলাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মানুষের ভিড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়। যানজট ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী হাইকোর্ট মোড়, মৎস্যভবন, পল্টন, গুলিস্তান মোড় পর্যন্ত। এসব রুটে চলাচলকারী ঠিকানা পরিবহন, মৌমিতা পরিবহনসহ একাধিক পরিবহন রুট পরিবর্তন করে চলাচল করতে দেখা যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো গুলিস্তান দিয়ে হাইকোর্ট মোড় হয়ে চলাচল করে।

বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলামের অফিস চাঁনখারপুল মোড়ে। সকালে টেলিভিশন না দেখে অন্যান্য দিনের মতো গতকালও সাইনবোর্ডের বাসা থেকে আগের নির্ধারিত সময়ে অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। অফিসে যেতে গিয়েই বিপাকে পড়েন। হানিফ ফ্লাইওভারে এসে মুখোমুখি হন যানজটের। গাড়িতেই কেটে যায় ঘণ্টাখানেক, এরপর হেঁটেই অফিসের দিকে পথ ধরেন। বঙ্গবাজারে আগুন লাগায় বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। অফিসের সময়ে যানজট হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী মানুষ।

বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম বলেন, রায়েরবাগ থেকে চাঁনখারপুল যেতে সর্বোচ্চ ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সকালে বঙ্গবাজারে আগুন লাগায় চাঁনখারপুল যেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগছে। হানিফ ফ্লাইওভারে অনেকক্ষণ গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছিল। পরে বাধ্য হয়ে হেঁটে অফিসে রওনা হই। যানজটে একেক জায়গায় ১০-১৫ মিনিট করে বসে থাকতে হয়। আবার গাড়ি চললেও গতি ছিল একেবারে কম। পৌনে ৪টায় পল্টন, গুলিস্তান, ঢাকা মেডিক্যাল সড়কের মোড়ে অবস্থান করে দেখা যায়, সড়কে দাঁড়িয়েছিল বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। মাঝে মধ্যে চললেও গতি ছিল খুব কম। গাড়িতে যাত্রী ছিল পরিপূর্ণ। প্রত্যেকটি মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন যাত্রীরা। গাড়ি এলেই এতে ওঠার জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকেই গাড়িতে উঠতে পারেননি, আবার গাড়িতে উঠলেও আসন পাননি।

সকাল ৮টায় শনিরআখড়া থেকে বাসে ওঠা যাত্রীরা বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় বাস চলাচল বন্ধ, কাজলা কাছ থেকে হেঁটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। দুই পাশের সড়কে কত গাড়ি আটকে আছে হিসাব নাই। রিকশায় মালিবাগ মোড় থেকে পুরানা পল্টন এসে আটকে গেছেন ফরিদা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, সকাল ১০টায় মালিবাগ মোড় থেকে রওনা দিয়েছি, এক ঘণ্টায় পল্টন পৌঁছেছি। হেঁটে গেলেও গুলিস্তানে যেতে এতো সময় লাগত না। রিকশা থেমেই আছে। কি করব বুঝতে পারছি না।

হানিফ ফ্লাইওভারে দাঁড়ানো একটি প্রাইভেট কারের চালক মঞ্জু শেখ বলেন, কোনো দিকেই গাড়ি ঘোরানোর পথ নেই। দুইবার চেষ্টা করেছি কিন্তু দেখলাম পেছনে গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে স্টার্ট বন্ধ করে।

সিরাজ তালুকদার অফিসের কাজে মিরপুর থেকে চাঁনখারপুল এসেছিলেন। কাজ শেষ করে মিরপুরের উদ্দেশে বিকালে সাড়ে ৩টায় চাঁনখারপুল মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন। আধা ঘণ্টা দাঁড়ি থাকার পরও কোনো গাড়ি পাননি। বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে যান।

ফায়ার সার্ভিস ভবনের উল্টো পাশে বঙ্গবাজারে কাপড়ের মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় পুরো ঢাকাজুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ৬টার দিকে বাণিজ্যিক ভবনে আগুন লাগে। সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তখন শনিরআখড় থেকে গুলিস্তান ও নিউমার্কেট সড়কে এই যানজটে আটকা পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

আগুন লাগার পরপরই শনিরআখড়া থেকে নিউমার্কেটমুখী হানিফ ফ্লাইওভারে যান চলাচল পুলিশ বন্ধ করে দেয়। ফলে পল্টন, গুলিস্তান, বক্শিবাজার, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, চট্টগ্রাম সড়ক, বিজয় সরণি, মহাখালী, তেজগাঁও, সাত রাস্তার মোড়, সোনারগাঁও, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মগবাজারসহ আশপাশের রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা গেছে। লম্বা সময় অপেক্ষার পর পরিস্থিতির উন্নতি না দেখে রোদ মাথায় করে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন অনেকে।

ঠিকানা পরিবহনের সহকারী জাকির হোসেন বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগায় আমরা মৎস্য ভবন হয়ে যাচ্ছি। রাস্তায় সকাল থেকেই যানজট লেগেছে। অন্যান্য দিনে এত যানজট থাকে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত