ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবির সন্দেহে নির্যাতন

পাবিপ্রবির ৩ শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবির সন্দেহে নির্যাতন

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হল থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তিন শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবির সন্দেহে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ কেউ দায় নিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পাবিপ্রবি ছাত্রলীগের দাবি তাদের কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়েছে। সে সময় তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। অপর দিকে পুলিশের দাবি শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত অবস্থায়ই উদ্ধার করা হয়েছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা হলেন, লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের গোলাম রহমান জয়, ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আসাদুল ইসলাম এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হক। আসাদুল ইসলাম ও আজিজুল হককে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানা নেয়া হয়েছে। আর গোলাম রহমানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজের পর ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী আপেল, শেহজাদ, তৌফিকসহ ১০-১২ জন তাদের কাছে এসে শিবির করে কি না জানতে চান। এক পর্যায়ে তিন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শহীদ মিনার থেকে হলে নিয়ে যায়। এ সময় পাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তিনটি রুমে নিয়ে স্ট্যাম্প, রড, হকিস্টিক, প্লাসসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন করা হয়। হাতুড়ি, জিআই পাইপ, তালা দিয়েও মারধর করেন। নির্মম নির্যাতনের এক পর্যায়ে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকারোক্তি নিয়ে রাত ৩টার দিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তারাবির নামাজ শেষে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের দাঁড়ি-টুপি থাকায় তারা আমাদের বিভিন্ন ট্রেট দিচ্ছিলেন। পরে আমাদের হলে নিয়ে গিয়ে পৃথক তিন রুমে তিনজনকে নির্যাতন করা হয়। আমরা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের অপরাধ আমরা নামাজ-রোজা করি, দাঁড়ি-টুপি আছে।’

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবু বলেন, ওই তিন শিক্ষার্থী শিবির করে। তাদের কোনো প্রকার নির্যাতন করা হয়নি। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়েছে। সে সময় তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন শিবির কর্মী ক্যাম্পাসে গোপন বৈঠক করছিল। এ সময় তাদের আটক করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে আমরা তাদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তাদের কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় তাদের পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যদি ব্যবস্থা নেয়, তাহলে নিতে পারে, আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ক্যাম্পাসে এসে ওই শিক্ষার্থীদের আটক অবস্থায় দেখি। তাদের কাছে থেকে শিবিরের রিপোর্ট বই, ব্যক্তিগত ডায়রি এবং কিছু মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়। পুলিশে সোপর্দের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার ফোন পেয়ে হলে এসে ওই শিক্ষার্থীদের দেখতে পাই। তারা আমার হলের শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসের বাহিরে থাকে। তারা নিজেরা শিবির করে বলে স্বীকারোক্তি দিলে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।’ পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কামাল হোসেন থানায় ফোন করে পুলিশের সহায়তা চেয়ে জানান ক্যাম্পাসে শিবিরের কর্মী আটক হয়েছে। আমরা সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখি, তিন শিক্ষার্থী রক্তাক্ত অবস্থায় রয়েছেন। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।

পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুনসী বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর নির্যাতিতরা যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত