ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংকট নিরসনে প্রয়োজন উচ্চপর্যায়ে তদারকি

চট্টগ্রামে বর্ষা মৌসুমে এবারও ভয়াবহ জলজটের আশঙ্কা

চট্টগ্রামে বর্ষা মৌসুমে এবারও ভয়াবহ জলজটের আশঙ্কা

হালকা বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকায় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। গত ১ এপ্রিল সকালের জলাবদ্ধতা আগামী বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ দুর্ভোগের ইঙ্গিত মনে করছেন নগরবাসী। নগরীতে অন্তত ৭ বছর ধরে চলামান রয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিক মেগা প্রকল্প। হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের কাজ অনেকটাই শেষ হওয়ার পথে। অথচ বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়। এতে প্রকল্পের সুফল আদৌ মিলবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বরাবরের মতো বলেছেন, প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে পানি নিষ্কাশন দ্রুত হবে। এতে নগরবাসীর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ আর আগের মতো থাকবে

না। গেল ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীতে হালকা বৃষ্টি হয়। কিছু সময়ের জন্য ভারি বর্ষণ হলেও দিনভর ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কিন্তু হালকা বৃষ্টিতে নগরীর নিচু এলাকার সড়ক জলমগ্ন হওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নগরবাসীর আশঙ্কা এবার বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ১ এপ্রিল ভোররাতের বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়। টানা ভারি বৃষ্টিপাত হলে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়। ওই দিন নগরীর চকবাজার, ষোলশহর, ২ নম্বর গেট, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, ডিসি সড়ক, পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা ও বহদ্দারহাট এলাকায় পানি জমে যায়। বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় এলাকার রাস্তাঘাট। এতে বিপণিবিতান ও কাঁচাবাজারে আসা মানুষ ভোগান্তি পড়েন। অনেকে আটকে পড়েন সড়কে। লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকার খালে কাজ চলমান থাকায় নালার পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যেতে পারেনা। তাই নিচু এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন (চসিক) চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সহ সব প্রতিষ্ঠান অনেকটা তৎপর রয়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় বৈঠক করছেন পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ ঘটাতে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সেজন্য নানা ধরনের তদারকি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত ১৫ মার্চ বিকালে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য খাল ও নালার ভেতর থাকা অস্থায় বাঁধগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করার উদ্যোগ এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে। সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া খালগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিডিএর প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন জলকপাটগুলোরও (স্লইসগেট) রক্ষণাবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষই একমত হয়েছে। ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তবিষয়ক সংসদীয় স্থানীয় কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও সিডিএ’র চেয়ারম্যান এমজহিরুল আলম দোভাষ। সভায় চার প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন। সভায় অংশ নেয়া প্রকৌশলীরা জানান, বৈঠকের মূল বিষয় ছিল জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে এবং চলমান চার প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সভায় দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়।

বৈঠকে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা খাল ও নালায় কাজ করার বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। তারা জানান, খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার করা হলেও তা অল্পদিনের মধ্যে ভরাট হয়ে যায়। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে এবং পাহাড়ি বালুতে তা দ্রুত ভরাট হয়।

সভায় অংশ নেয়া সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য নগরীর খালগুলোর ভেতরে থাকা অস্থায়ী বাধ অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব খালের কাজ শেষ হয়েছে তা সিটি করপোরেশন বুঝে নেবে। এসব খাল ১ বছর সিডিএ রক্ষণাবেক্ষণ করবে।

সিডিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে সিডিএ দুটি, পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি ও সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। অন্তত ৭ বছর আগে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। অথচ একটি প্রকল্পের কাজও শেষ হয়নি। জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে নগরবাসীর।

গেল ১০ বছর ধরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পুরো নগরীতে ভয়াবহ জলজটের সৃষ্টি হয়। পানির তীব্র স্রোতে খালে পড়ে নগরীতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বর্ষায় জলমগ্ন হলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ নেমে আসে ব্যবসা নগরীর বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই খাতুনগঞ্জে। সেখানে শত কোটি টাকার ভোগ্য পণ্যের আড়ত পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়েন। বাসাবাড়ি ছাড়িয়ে হাসপাতালও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রতি বছরই চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত মা ও শিশু হাসপাতাল বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ সময় রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত