ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ইসির প্রত্যয়

সাধ আছে, সাধ্য নেই

সাধ আছে, সাধ্য নেই

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যালটে ভোট করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবুও রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারছে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে আত্মপ্রত্যয়ী ইসির সাধ অনেক, অথচ সাধ্য নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান ইসি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চায়। সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো চেষ্টাই কাজে আসছে না। সে কারণে কিছুটা হতাশার মধ্যে রয়েছে বর্তমান কমিশন।

সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে ছিল অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তবে ইসি প্রথম ৩০০ আসনে এবং পরে ১৫০ আসনে এ যন্ত্র ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেয়। বিভিন্ন করণে এখন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এসে সব আসনে ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইভিএম থেকে ইসি বেরিয়ে আসার পরও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে রাজনৈতিক দল গুলো।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নির্বাচন কমিশন সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিকে সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনও দলকে ভোটে আনতে বা কারও চাপে কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বিএনপিসহ সংলাপ বর্জন করা দলগুলোকে বরাবরই ভোটে আসার আহ্বান জানানো অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সিইসি বলেন, এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকট নিরসন করা। বড় কোনো দল নির্বাচনে না এলে তা লিগ্যালি সিদ্ধ হলেও পুরো লেজিটিমেট হবে না।

তিনি বলেন, কাউকে জোর করে ভোটে আনার বিষয়টি কমিশনের নয়। দলগুলোকে ভোটে আসতে শেষ পর্যন্ত আহ্বান অব্যাহত থাকবে। আগাম নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই। এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, শতভাগ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করা ইভিএমে যেমন সম্ভব নয়, ব্যালটেও পুরোপুরি সম্ভব নয়। বিষয়টা আপেক্ষিক হতে পারে। আমরা সবসময় বিশ্বাস করেছিলাম ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট অনেক বেশি নিরাপদভাবে ভোট করা সম্ভব। এটা কেবল যান্ত্রিক কারণে।

ব্যালটে ভোটের বিষয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কমিশন। তাই আগামী দ্বাদশ সংসদের সব আসনে ব্যালটে ভোট হবে।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএম না ব্যালট পেপারে হবে, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর। তাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। নির্বাচন যে পদ্ধতিতেই হোক, এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

তারা বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালট থাকবে খুশির কথা; কিন্তু ব্যবহার করা হবে কখন-এই দুশ্চিন্তা আমাদের মাথায় থেকে যায়নি। অর্থাৎ ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই প্রয়োজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইভিএম নয়, জাতীয় নির্বাচন হবে ব্যালটে। এ বিষয়ে আমাদের এতটুকুও আগ্রহ নেই। নির্বাচনের সময় কোন সরকার থাকবে, সেটি হলো জাতীয় সংকট। এটাই প্রধান সংকট। আমরা অনেক রাজনৈতিক দল একমত হয়েছি যে, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাব না। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ওই সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচন হবে। এর বাইরে কিছু গ্রহণযোগ্য হবে না।

হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দেশের গণতান্ত্রীকামী মানুষ, সংগঠন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে আজ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে।

নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। মহাসচিব বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে বিভিন্ন ধরনের নাটক ও প্রহসন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, বাংলাদেশের সবাই প্রথম থেকে ইভিএমের কারচুপির মেশিন সম্পর্কে আপত্তি জানিয়ে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা তাদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল ঘটিয়েছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র করবে। আমরা যারা বিরোধী দলে, তারা এ বিষয়ে সজাগ আছি।

১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কামনায় অনেকগুলো দাবি করেছি। এর মধ্যে একটি হলো ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন। আরেকটি হলো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন। এখন নির্বাচন কমিশন ব্যালটে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশ্বাস করি, তারা বাকিগুলোও পূরণে সহায়তা করবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, ব্যালট তো ২০১৮ সালেও ছিল। কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে রাতের বেলায়। এখন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালট থাকবে খুশির কথা; কিন্তু ব্যবহার করা হবে কখন- এই দুশ্চিন্তা আমাদের মাথা থেকে যায়নি। অর্থাৎ ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন।

জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করেছে ৩০০ আসনেই ব্যালটে নির্বাচন হবে। এটা আমাদের দাবি ছিল। কিন্তু ব্যালটে নির্বাচন মানেই সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা নয়। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি পদক্ষেপ মাত্র।

জিএম কাদের বলেন, সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা নিজের আয়ত্তে রেখেই নির্বাচন করছে। যে সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেই সরকার যদি নির্বাচন করে তাহলে তাকে কখনোই পরাজিত করা সম্ভব নয়। নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। সরকার ক্ষমতায় থেকেও যেন নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেই পদক্ষেপ দরকার। দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন দেখে এবং পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে জাপা আগামী জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত