ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সংসদে আবেগময় বক্তব্য

অধিবেশনে ছিল কখনো উচ্ছ্বাস, কখনো নীরবতা

মনোমুগ্ধ শ্রোতা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী
অধিবেশনে ছিল কখনো উচ্ছ্বাস, কখনো নীরবতা

জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৪৭ বিধিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। এসময় কখনো উচ্ছ্বাস কখনো নীরবতা দেখা গিয়েছে সংসদে।

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে মনোমুগ্ধকর এসব আলোচনা শোনেন।

সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক বলেন, বঙ্গবন্ধু একমাত্র প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগে অনেক নেতা ছিলেন তারা কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। বাংলাদেশের মানুষের পুরোপুরি মুক্তি চায়নি। তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছেন আর বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি জীবন দিয়ে স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এতো কিছু কাজ করার পরও যদি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে ক্যানভাস করতে হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যে দুর্ভোগ আছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা বঙ্গবন্ধুকে প্রত্যক্ষভাবে হত্যা করেছিল তাদেরকে এই সংসদে এনে বসিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি তাদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছেলেন, যাদের হাত বঙ্গবন্ধুর রক্তে রঞ্জিত। বিএনপি একইভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের এই সংসদে এনে পবিত্র সংসদকে অপবিত্র-কুলষিত করেছিল। শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন অপ্রতিরোধ্য মহামানব। তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিক, বাঙালি জাতির হৃৎপি-। তিনি অকুতোভয় সৈনিক, তিনি দানবীর, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। তিনি যদি জীবিত থাকতেন তাহলে তিনিই হতেন বিশ্বের অবহেলিত, মেহেনতি মানবতার মূর্তপ্রতীক, যা ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও বলেছিলেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ২৩ বছর বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে আজ গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত। সংসদ প্রাণবন্ত। জাতীয় পার্টি বিরোধীদল হিসেবে তাদের ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু কোন কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নির্বাচন নিয়ে জলঘোলা করছে। তারা অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথার দাবি জানাচ্ছে, সেটি আর হতে পারে না, উচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা যাদের ভোট দেবেন তারই মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদল হবে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সারা বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতা আছে, কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, সংসদের এমপিদের বাক স্বাধীনতা নেই। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অ্যামেন্ডমেন্ট, বাজেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা বাদ দিলে, বাকি সব বিষয়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ ওপেন করে দেওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, গত ৫০ বছরে শত শত, হাজার হাজার আইন পাস হয়েছে। অনেক মহান আইন পাস হয়েছে, আবার দায়মুক্তি অধ্যাদেশের মতো কালো আইনও পাস হয়েছে। আমরা সরকারকে কতটুকু দায়বদ্ধ করতে পেরেছি? সেই মূল্যায়ন প্রয়োজন। এই সংসদ কাঠামোগতভাবে সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে না। এর কারণ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। এছাড়া প্রশ্নোত্তর পর্ব আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সংসদীয় কমিটিগুলো নিয়মিত বসছে না। কমিটির বেশির ভাগ সভাপতি সরকারি দলের হওয়ায় এখানে সিজার টু সিজার আপিল হয়ে যায়। মন্ত্রী, সভাপতি একই দলের। এটা পরিবর্তন হওয়া দরকার। সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী নির্বাচনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, নানান ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হচ্ছে, সেবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র ধ্বংস করে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি, খালকাটা ও ঋণ খেলাপীর রাজনীতি এবং কারফিউ দিয়ে প্রতি দিন মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, নিধন করে পাকিস্তানীকরণের তথাকথিত গণতন্ত্র ও ক্যু পাল্টা ক্যু দিয়ে রাষ্ট্রতন্ত্রের হত্যাযোগ্যের রাজনীতি চালু করে। তারা এই সংসদেকেও বার বার কুলসিত করেছে। তাদের আমলে অন্তত ২১ বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। হাওয়া ভবন দিয়ে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থ লুটপাট করেছে। এরা অবৈধ ক্ষমতাধর, তারা আবারো এ দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সকলে মিলে তা প্রতিহত করতে হবে। বিদ্যুৎ জালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন কৃষি কাজের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন ঘটাতে হবে, সেজন্য সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে তিনি গ্রাম ও শহরের দূরত্ব ঘোচাতে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তনের কথা বলেন। তিনি সেই সময় ৫টি গ্যাসফিল্ড কিনে নেন, তার দূরদর্শিতার কারণে আজকের বাংলাদেশ জ্বালানী সংকট এত সহজে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সব দলকে নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব নয়, দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, আস্থা তৈরি করতে হবে। সে সহায়তা সরকারকে দিতে হবে। সেটাই সরকারের দায়িত্ব। সেটি করার পর কেউ নির্বাচনে না এলে কারো কিছু বলার নেই। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদকে সত্যিকার অর্থে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র বিন্দু করতে চাইলে সংসদে মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এই আলোচনা না হলে মুখে বললেও সংসদ সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র বিন্দু হবে না। না হলে সংসদের বাইরের যে আলোচনা সেটাই হবে কেন্দ্র বিন্দু, পত্রিকার কথা-বার্তাই প্রাধান্য পাবে। তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কোনো বাধা নয়। সংসদকে কেন্দ্র বিন্দু করতে হলে সব সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দলের প্রতি আনুগত্য থাকবে কিন্তু জনগণ ও রাষ্ট্র দলের চেয়ে বড়। তিনি সংসদীয় কমিটিগুলোকে আরো কার্যকর করার পরামর্শ দেন। সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু কেউ কেউ গণতন্ত্র পছন্দ করেন না, তারা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করে পিছনের পথ দিয়ে ক্ষমতায় আসার খোয়াব দেখছেন। এটা আর হতে পারে না। জনগণ একে প্রতিহত করবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত