ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের শাস্তির জন্য আইন করার দাবি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের শাস্তির জন্য আইন করার দাবি

স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতকারীদের ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে মিথ্যাচারকারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তি দেয়ার জন্য সংসদে একটা আইন পাস করার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি মনে করেন এ আইনটি হলে দেশ একটি ‘সেফ গার্ড’ও পাবে।

গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আনীত কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আইন প্রণয়নের দাবি জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

মোজাম্মেল হক বলেন, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকরা শুধু একটা মানুষকে হত্যা করেনি, শুধু একটি স্বাধীন সংসদ নয়, একটা জাতিকে হত্যা করেছিল, বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করেছিল। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, চার নেতার হত্যাকাণ্ড, সংবিধানে কাটাছেঁড়া এসব কিছুই ছিল এদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলা। সেই কারণে ২৩ বছরের শোষণ বঞ্চনার পরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা এ মূল চার নীতির উপর ভিত্তি করে দেশ পরিচালিত হচ্ছিল তারা এ ধারণাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল, তারা আবারো পাকিস্তান ঘরানার ধর্মীয় রাজনীতি চালু করে এদেশকে অকার্যকর করতে চায়। এই কয়েকদিন আগে বিএনপির এক নেতা বলেছেন, এর চেয়ে পাকিস্তান ভালো ছিল। তারা এখনো পাকপ্রেমী, এদের মন থেকে সেই পাকিস্তান প্রেম যায় নাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় ল্যুজ কনফেডারেশন করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। খুনি মোস্তাক, খুনি জিয়া বলেছিল ওয়ার কাউন্সিল করে মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য এবং রাজনীতিক সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ না করার জন্য।

মোজাম্মেল হক বলেন, আমি মনে করি সংসদ যেহেতু সমস্ত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র বিন্দু তাই এখানে মিথ্যাচার, ইতিহাসের বিকৃতি, তারা যখনই সময় পায় তখনি সে প্রচেষ্টা চালায়। এই রাষ্ট্রের সার্বভৌমিত্ব আরো বেশী হুমকির মুখে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু জেল হত্যা, বঙ্গবন্ধু হত্যা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, তিনিই দেশ বিরোধী স্বাধীনতা বিরোধীদের শাস্তির জন্য এ আইনটি করতে পারেন।

ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন : জেনারেল এম এ জি ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও সাবেক গণপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গতকাল জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশনে তিনি এ কথা জানান। ইতিহাস থেকে স্মৃতিচারণ করে মোশাররফ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো কোনো প্রতিরোধ নেই, কিছু নেই। অনেকে জড়িত ছিল, জিয়াউর রহমান সরাসরিভাবে জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সামরিক বাহিনীর যারা সদস্য ছিল তারা কেউ প্রতিবাদ করেনি। বিশাল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ’৭৩ এর নির্বাচনে একদিকে আওয়ামী লীগ আর সব অন্য দিকে। জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী দলগুলো, জাসদ, বাসদ মানে যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র সবাই মিলে সেদিন বিরুদ্ধে ছিলো। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কোনো প্রতিবাদ হয়নি, আমরা অঝরে কেঁদেছি। আমাদের হাতে কিছু ছিলো না, কিছু করতে পারিনি, আমরা মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু আমাদের হাতিয়ার ছিলো না।

মোশাররফ হোসেন বলেন, যে জেনারেল ওসমানীকে বঙ্গবন্ধু ভালবাসতেন। ওসমানী যাকে তাকে বীর উত্তম, বীর প্রতীক খেতাব দিয়েছেন। জেনারেল ওসমানী আমাকে টেলিফোন করে বলেন, যে আমি জনতা লীগ করেছি আপনি আমার দলে থাকবেন? আমি বললাম আপনি কি বললেন আমি তো দল করি, উনি বলেন কোন দল করেন? আমি বললাম আমি তো আওয়ামী লীগ করি। উনি বলেন আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আওয়ামী লীগ কি আছে? আমাকে কে এম ওবায়দুর রহমান ফোন করে বলে আমি মিজান লীগ করি আপনি চট্রগ্রামের লোকদের নিয়ে আসেন। আমি তাকে চট্রগ্রামের ভাষায় গালি দিলাম ‘আর একবার বললে তোর ঠ্যাং ঠুং ভেঙে ফেলব’। এরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। আর গ্রাম শহর হয়ে গেছে। কেউ আর এদেশে না খেয়ে থাকে না। দেশ আজ বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলায় রুপান্তরিত হতে চলেছে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে শুধু একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গঠন করেন নি। তিনি আওয়ামী লীগকে একটি পরিবার হিসেবে তৈরি করে গেছেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সেই ধারাই অব্যাহত রাখেননি, আমাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পিতা সিরাজুল হকের সখ্যতার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের স্বাধীনতা দেননি, একটি সংবিধান দিয়েছেন। এই সংবিধানে তিনি সংসদকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে রেখেছেন। কিন্তু তার পরে আমরা দেখেছি এই সংসদে ইনডেমনিটি পাশ হয়েছে। আবার দেখেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা বাতিল হয়েছে। শেখ হাসিনার আন্দোলনে আমরা আবার সেই সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারা ফিরে পেয়েছি, তা আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ অনুসরণ করছেন বলে দেশ আজ যুগান্তকারী পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা একদিন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল তারাই আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে। শামীম ওসমান তার বক্তব্য বলেন, এবারে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে। সে কারণে এবারে হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা শুনতে পারবো না। প্রয়োজনে মৃত্যুর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেণ্ট নিয়ে রাস্তায় নামবো। আমরা প্রয়োজনে ডাইরেক্ট অ্যাকশানে যেতে বাধ্য হবো। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনি মোস্তাকের সমালোচনা করেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে দেশে ফেরা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। শামীম ওসমান বলেন, এক সময় আমরা এক বেলা খেয়েছি। আমরা শেখ হাসিনার চোখের পানির কথা ভুলে যাই নি।

সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সংসদে আরো বক্তব্য রাখেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, এমপি শামীম ওসমান, এমপি মেহের আফরোজ চুমকি, হুইপ ইকবালুর রহিম, এমপি কাজী কেরামত আলী, গাজী মো. শাহনেওয়াজ, বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, সেলিম আলতাফ জর্জ, কাজী কানিজ ফাতেমা, বেগম ফেরদৌসী ইসলাম, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, বেগম মনিরা সুলতানা, সাইমুম সরওয়ার কমল, খান আহমেদ শুভ, শাহদাব আকবর, কালাম মো. আহসানুল হক, জাকিয়া তাবাসসুম প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত