ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আকাশ কুসুম চিন্তা-চেতনা বোধগম্য নয়

বেফাঁস বক্তব্যে ফেঁসে যেতে পারে বিএনপি

বেফাঁস বক্তব্যে ফেঁসে যেতে পারে বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃবৃন্দ বেফাঁস কথা বলে কার্যত রাজনৈতিকভাবে ফেঁসে যেতে পারেন। দলকে আবারো বিতর্কিত করে তুললেন। তাদের এ ধরনের আকাশ-কুসুম চিন্তা- চেতনা সাধারণ জ্ঞানে বোধগম্য হচ্ছে না। বিএনপির এসব নেতার ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব রূপ পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এদিকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি ২৭০টিরও বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করবে: অপরদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ বলেছেন, রোজার পর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা হবে। আর সরকার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানালে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। দলের এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত শনিবার পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে এমনি বক্তব্য দিয়ে তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে আবার সরব হয়েছেন। তাদের বক্তব্যের পেছনে কোনো যুক্তি আছে কি না কিংবা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি এমন অবস্থানে চলে গেছে যাতে করে তারা এমনি আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারেন। বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যে রাজনৈতিক দলটি দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বাধিকার আন্দোলনের পথ পেরিয়ে দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নির্বাচিত কমিটি রয়েছে। তাদের তৎপরতাও বিদ্যমান। ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও ভোটার রয়েছে। আর সেই দলটি ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, সরকার উন্নয়নের নামে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আগামী দিন বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসবে সেই লুটের টাকার হিসাব নেয়া হবে। তিনি বলেন, দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সরকার ১৫ বছরের দুঃশাসনের মাধ্যমে মানুষকে যে কষ্ট দিয়েছে তাতে আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার পক্ষে তিনি কোনো ব্যাখা দেননি। এমন চটকধারী কথা বলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করলেও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে তা বোধগম্য হয়নি। ১০০ বছর বলতে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা কত দিন বুঝিয়েছেন তাও স্পষ্ট নয়। তবে গাণিতিক হিসেবে সময়টি অনেক বেশি এবং একজন মানুষ তার আয়ুষ্কাল ততটা নাও পেতে পারেন। আর ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার যে বয়স তিনি আগামী ১০০ বছর বেঁচে থাকবেন কি না সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। তার এই আগাম ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিফলন চলতি বছরের ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠবে। গণ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছ, গত শনিবার দুপুরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিদ্যুৎ, গ্যাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে এই ভবিষ্যদ্বাণী শোনান। শহরের শন রোডের মাইক্রোস্ট্যান্ডে দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচিতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো. শাহজাহান সিরাজের সভাপতিত্বে ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহামানের সঞ্চালনায় তিনি বক্তব্য রাখেন।

এদিকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় নিশ্চিত জেনে আওয়ামী লীগ আবারো নয়া কৌশলে প্রহসনের নির্বাচন করতে ষড়যন্ত্রে মেতেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, এবার আর কোনো অপকৌশল, ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না। ইভিএম বাতিল করে ব্যালট পেপারে নির্বাচনের নতুন সিদ্ধান্তের মতো দলীয় সরকারের পরিবর্তে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে তারা বাধ্য হবে। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি ২৭০টিরও বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করবে, আওয়ামী লীগ হোয়াইটওয়াশ হয়ে যাবে।

যুগপৎ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকালে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌর শহরের হালুয়াঘাট ডিএস আলিম মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত উপজেলা অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমরান সালেহ প্রিন্স এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, সরকার একতরফাভাবে ২০১৪, ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচনের জন্য ষড়যন্ত্র করে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করতে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মিথ্যাচার করছে। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসহ জনগণ অংশ নেবে না, হতে দেবে না। সাধারণ মানুষ এখন দিশাহারা উল্লেখ করে প্রিন্স বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ দিশাহারা। অথচ সরকার নির্বিকার। সরকার মিথ্যা আশ্বাস আর দুর্নীতিতে মহাব্যস্ত। মানুষ অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে নিপতিত। বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে হাস্যকর মিথ্যাচার করছে দাবি করে বিএনপির এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সরকার নিজেদের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, দুঃশাসন আড়াল করতে, জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে নিজেরাই বঙ্গবাজারে আগুন লাগাল কি না, তা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘সব স্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে সরকার পতনের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া মিথ্যা, হয়রানিমূলক মামলার ভয় পাবেন না। আওয়ামী লীগ সরকার জুলুমকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের পতন ঘটাতেই হবে। আগামী দিনে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে দেশকে রক্ষা করতে হবে। রমজানের পর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা হবে।’ বিদ্যুৎ, গ্যাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিএনপির পূর্ব ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের ফুড অফিস মোড়ে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। হারুনুর রশীদ বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে আমরা জনগণের অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরব। বর্তমানে দেশের রাজনীতির ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কতিপয় লোক জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে বসে থাকবে। অথচ আমরা নাকি এর প্রতিবাদ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে পারব না। পুলিশ এসব কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। সরকারের ইশারায় মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে।’

‘আওয়ামী লীগ পথহারা দল’ উল্লেখ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দরকার নেই, অথচ ক্ষমতায় না থাকলে তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করেছে। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না। তাই বিকল্প উপায়ে বিরোধীদের দমন ও নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।’

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সরকার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সংলাপের আহ্বান জানালে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আগেও ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছিল। আমরা আমাদের প্রস্তাবনা পেশ করলেও কোনো কাজে আসেনি। কারণ, তার সাংবিধানিক কোনো ক্ষমতা নেই। শনিবার বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব এসব কথা বলেন। এর আগে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যার সঙ্গেই সংলাপ হোক না কেন, মূলত সরকার প্রধানের ইশারার বাইরে কেউ কথা বলেন না। সরকার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানালে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি।’

সংসদের ৫০ বছর পূর্তিতে আপনার মূল্যায়ন কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি অনির্বাচিত সংসদ। সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর। কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ২২টি রাজনৈতিক দল গত বছরের ২ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের প্রধান দাবি সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ আন্দোলন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ১৭ জন জীবন দিয়েছে। এ পর্যন্ত আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। এ সরকারের আমলে আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসেও আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করা হচ্ছে, বাধা দেয়া হচ্ছে। এরা গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কুক্ষিগত করে রাখতে চায়। এভাবে গায়ের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত