চট্টগ্রামে ঈদবাজার

বারো হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

* দিনে ক্রেতা সংকটে বিক্রি কম * ইফতারের পর বাড়ে বিকিকিনি

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ক্রেতা চাহিদা সামনে রেখেই এ বিনিয়োগ। মধ্য রমজানে বিক্রি তেমন না হলেও শেষ মুহূর্তে জমবে ঈদ বাজার। তাতে বিনিয়োগ উঠে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালামত আলী গতকাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সমিতির অধীনে চট্টগ্রাম সিটিতে দোকানের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে বিভিন্ন মার্কেটে ঈদ বাজার কেন্দ্রীক দোকানের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। এসব দোকানে ব্যবসায়ীরা শুধু ঈদ উপলক্ষ্যে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এবার অন্য বছরের তুলনায় বিক্রি কম। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে তাই বিক্রিও কম।

ঈদের পোশাকের দাম কেমন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, দাম খুব বেশি বলব না। মাছ-মাংস থেকে নিত্যপণ্যের প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। সেই হিসেবে পোশাকের দাম হয়তো কিছুটা বেশি। মূল সমস্যা হচ্ছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। তবে আশা করছি শেষ মুহূর্তে বিক্রি বাড়বে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরি বলেন, ঈদ বাজারে পণ্যের ঘাটতি নেই। তবে ক্রেতা এখন অনেকটা কম। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারে। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশিই রাখছেন। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার সময়ও তারা কোনোভাবে ক্রেতাদের ছাড় দিতে রাজি নন। এ কারণেও বিকিকিনি কম হতে পারে।

রমজানের মাঝামাঝি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু চট্টগ্রামে ঈদের কেনাকাটা এখনও জমে উঠেনি। বিক্রেতারা বিক্রি জমে না উঠার পেছনে বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করেছেন। তারা মনে করছেন বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এবার আর্থিক সংকট বেশি। তাই হয়তো ক্রেতারা এখনই মার্কেটমুখী হচ্ছেন না। তবে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। সেই সঙ্গে প্রত্যাশিত বিক্রিও বাড়তে পারে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অভিজাত শো-রুমগুলোয় দিনের বেলা ক্রেতা তেমন থাকে না। অল্প সংখ্যক ক্রেতা দরদাম করেই চলে যান। কিছু কিছু মার্কেটে সন্ধ্যার পর ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে। এসব দোকানগুলো অনেকটা ব্যস্ত হয়ে উঠে ক্রেতাদের পদচারনায়। কোন কোন মার্কেটে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। নগরীর নিউমার্কেট, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেট, চকবাজার এলাকায় সকাল থেকেই কমবেশি মানুষ থাকলেও জিইসি, আগ্রাবাদ এলাকা ক্রেতাশূন্য। এসব এলাকার মার্কেটগুলোতে অন্য এলাকার মার্কেটের চেয়ে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই ক্রেতারা এখনই জিইসি আগ্রাবাদ এলাকার মার্কেটে ঢুঁ মারছেন না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

গত ২ দিন নগরীর বিভিন্ন মার্কেট পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে ক্রেতা নেই। দুপুরের দিকে ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা চোখে পড়েছে। দোকানগুলোতে ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়তি জনবল নিয়োগ দেয়া হলেও তারা অনেকটা অলস সময় পার করছেন। নগরীর চকবাজার এলাকার গুলজার টাওয়ারের ব্যবসায়ী নূর উর রহমান বলেন, বিক্রি আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে রমজানের এ সময় যে হারে বৃদ্ধির কথা, সে হারে বাড়েনি। আমরা অপেক্ষা করছি আর কয়েকদিন পরেই ক্রেতাদের পদচারনা বাড়বে। তবে অনেক মার্কেটে রাতে ক্রেতাদের ঢল নামে।

নগরীর জিইসি মোড়ে নামি-দামি অনেকগুলো শো-রুম রয়েছে। সেখানে ক্রেতাদের ভিড় নেই। দুই নাম্বার গেটে আড়?ংয়ের শো-রুমে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এছাড়াও নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় অবস্থিত ছোট ছোট মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। টেরিবাজার, রেয়াজউদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আমিন সেন্টার, ইউনেস্কো সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, স্যানমার ওশ্যান সিটি, শপিং কমপ্লেক্স, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা ও মিমি সুপার মার্কেটে বিভিন্ন কাপড়ের শো-রুমে ধীরে ধীরে বাড়ছে ক্রেতা। তবে প্রত্যাশিত পর্যায়ে ক্রেতা সমাগম না হওয়ায় বিক্রেতারা অনেকটা হতাশ।

বিক্রেতারা ক্রেতা সংকটে উদ্বিগ্ন। তারপরও তারা আশায় আছেন, আরও সপ্তাহখানেক পর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিকিকিনি শুরু হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোপুরি জমজমাট হবে। নগরীর অন্যতম বিক্রয় কেন্দ্র আড়ং। এই প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন স্থানে শোরুম রয়েছে। নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার শো রুমের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, আমাদের কিছু কিছু শো-রুমেই ভালো বিক্রি হচ্ছে। কিছু শোরুমে কম বিক্রি হচ্ছে। আমাদের শো রুমে পছন্দমতো পোশাক পাওয়া যায়।

নগরীর জুতার দোকানগুলোতেও ধীরে ধীরে বিক্রি জমে উঠছে। বাটা, এপেক্স এর শো-রুমগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। এসব ব্র্র্যান্ডের শোরুম ঘুরে দেখা যায় ক্রেতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। চক বাজার এলাকার বাটা শো-রুমের বিক্রয় কর্মীরা জানান, জুতা বিক্রি ঈদে বেশিই হয়। তবে এসব ক্রেতারা আসেন শেষ মুহূর্তে। পোশাক কেনার পর সবাই জুতা কিনতে আসে। তখনই জুতার দোকানে বিক্রি বাড়ে।

নগরীর ফুটপাতের কেনাকাটাও কম হচ্ছে বলে জানান নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়রীরা। তারা বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের বেচাবিক্রি থাকে। তবে, সেটি আরও বাড়বে। দিনে অফিসের লোকজনসহ নানা ধরনের মানুষের হাঁটাচলা থাকে, যার ভালো লাগে কিনে নেয়। দ্রব্যমূল্যের চাপের পাশাপাশি সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতিতে অনেকেই ফুটপাতের পণ্যের দিকে ঝুঁকেছেন।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জানান, টেরিবাজারে এবারও প্রত্যাশিত পর্যায়ে বিক্রি হবে। যদিও এখনো বিক্রি তেমন জমে উঠেনি। টেরিবাজারে ১১০টি মার্কেটে দোকানের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। দেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, দুবাই ও থাইল্যান্ড থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে ঈদের জন্য কাপড় নিয়ে এসেছেন। আমাদের মনে হয় দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। সব শ্রেণির ক্রেতা পছন্দের কাপড় কিনতে পারবেন।