ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

বিএনপি বড় বিরোধী দল হলে ২৯ সিট পেল কেন

* যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা * প্রথম আলো গণতন্ত্র ও জনগণের শত্রু
বিএনপি বড় বিরোধী দল হলে ২৯ সিট পেল কেন

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন নির্বাচন নিয়ে অনেকেই অনেক কথাই বলছে। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। যে বিরোধী দলকে বড় বিরোধী দল বলা হয়, তারা ২০০৮ সালে ২৯টি সিট পেয়েছিল। তারা যদি এত বড়ই বিরোধী দল হয়ে থাকে তাহলে ২৯টি সিট পেল কেন? তারা এত বড় দল কোত্থেকে হয়ে গেল।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপার্সন। হত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ সবকিছুতেই যারা পারদর্শী ছিল, তাদের জন্য দেশের মানুষ আতঙ্কে থাকত। এখন তাদের নিয়ে এত উৎফুল্ল এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য!

গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশনে আনা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

সংসদে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনীর দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অনেকেরেই আপত্তি। যারা এই আপত্তির কথা তুলছেন তাদের বোধ হয় অভিজ্ঞতার অভাব আছে। এই ৭০ অনুচ্ছেদটাই কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের একটা স্থায়িত্বের সুযোগ এনে দিয়েছে, যার ফলে দেশটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ফ্লোর ক্রস করার কারণে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকার টিকতে পারেনি। এর আগে ১৯৪৬ সালেও একই খেলা হয়েছিল, যার কারণে আমাদের পূর্ব বাংলাটা যেভাবে গঠন হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। এটা ১৯৫৬ সালের নির্বাচনেও হয়েছিল। পরে মার্শাল ল’ এসে ক্ষমতা দখল করে। কাজেই এই ৭০ অনুচ্ছেদটাই একটি সুরক্ষা দেয় গণতন্ত্রকে সমুন্নত করতে সংহত করতে। আর এর সুফল জনগণ পেতে পারে। জানি না কেন কিছু কিছু সদস্যের এর ওপর এত রাগ? কারণ হচ্ছে সরকার ভাঙতে-গড়তে বা খেলাটা খেলতে তারা সক্ষম হচ্ছেন না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

প্রথম আলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম আলো আওয়ামী লীগের শত্রু, প্রথম আলো গণতন্ত্রের শত্রু, প্রথম আলো দেশের মানুষের শত্রু, এরা কখনোই এই দেশকে স্থিতিশীল থাকতে দিতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ৭ বছরের একটা শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে তাকে দিয়ে মিথ্যা বলানো, শিশুর মুখ থেকে কিছু কথা বলানো। কি কথা(!) ভাত, মাছ, মাংসের স্বাধীনতা চাই। একটা ৭ বছরের শিশু তার হাতে ১০টা টাকা তুলে দেয়া এবং তার কথা রেকর্ড করে প্রচার করা। খুবই পপুলার পত্রিকা, নাম তার প্রথম আলো কিন্তু বাস করে অন্ধকারে। প্রথম আলো আওয়ামী লীগের শত্রু, প্রথম আলো গণতন্ত্রের শত্রু, প্রথম আলো দেশের মানুষের শত্রু। আমি এটা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলি যে, এরা এই দেশে কখনোই স্থিতিশীলতা চায় না। ২০০৭ সালের যখন ইমারজেন্সি হয়, তখন তারা উৎফুল্ল। দুটি পত্রিকা আদাজল খেয়ে নেমে গেল, বাহবা কুড়াল।

তিনি বলেন, আর একজন সুদখোর আছে, সে আবার বড় প্রিয় আমেরিকার। আমেরিকা একবারও জিজ্ঞাসা করে না একটা ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক এটি তো একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। সরকারের বেতন তুলতো যে এমডি, সে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কোথায় পেলো যে আমেরিকার মতো জায়গায় সামাজিক ব্যবসা করে, বিনিয়োগ করে দেশে বিদেশে এই অর্থ কোথা থেকে আসে এটা কি জিজ্ঞাসা করেছে কখনও তারা, জিজ্ঞাসা করেনি। এদের কাছ থেকে দুর্নীতি, মানবতার কথা শুনতে হয়। যারা গরিবের রক্তচোষা টাকা পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগ করে নিজেরা শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়ে যায়, আবার এসব লোক এদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।

যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আবেদন করার পরও বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র লালন-পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র না উন্নয়ন, এ কথা আসতে পারে না। কেন না, আমাদের অভিজ্ঞতা খুব বিচিত্র। আমরা আইয়ুবের আমল, ইয়াহিয়ার আমল, জিয়ার আমল, জেনারেল এরশাদের আমল, খালেদা জিয়ার আমলও দেখেছি। আমি যখন আমেরিকায় প্রথমবার যাই তখন আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছিল। আমি তাকে একটা কথাই বলেছিলাম যে, আমরা একটা মনুমেন্ট দেখে আসলাম সেখানে লেখা আছে, গর্ভরমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। আর আমি একটা দেশ থেকে এসেছি, সে দেশটা হচ্ছে গর্ভরমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। আমেরিকা তাদের গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের ওই আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায় তাহলে কি আপনাদের গণতন্ত্রের চর্চা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিক্টেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন, আমি এই প্রশ্ন করেছিলাম। আজকে আমি বলি, যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয় আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু কিছু কিছু লোক তাদের কথায় উঠ-বস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আজ সারা বিশ্বই অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে গেছে, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। গণতন্ত্র নিয়ে যারা আমাদের এত জ্ঞান দিচ্ছে, কথায় কথায় ডেমোক্রেসি আর হিউম্যান রাইটসের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থাটা কী। কয়েক দিন আগের কথা, টেনিসিস রাজ্যে তিনজন কংগ্রেস সদস্য, একজন উইম্যান; একজন হচ্ছেন জাস্টিস জোন, জাস্টিস পিয়ারসন আরেকজন হচ্ছেন গ্লোরিয়া জনসন, এই তিনজন। আমেরিকায় আপনারা জানেন যে, প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় অস্ত্র নিয়ে স্কুলে ঢুকে যাচ্ছে, বাচ্চাদের গুলি করে হত্যা করছে, শিক্ষকদের হত্যা করছে, শপিংমলে ঢুকে হত্যা করছে, ক্লাবে যাচ্ছে সেখানে হত্যা করছে। এটা তো প্রতিদিনের ব্যাপার, কোনো না কোনো রাজ্যে অনবরত ঘটনা ঘটছে। এই তিনজনের অপরাধ হলো, তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য আবেদন করেছিলেন, এইভাবে যার তার হাতে অস্ত্র থাকা এবং এইভাবে গুলি করে শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে। এটা ছিল তাদের অপরাধ আর এই অপরাধে জাস্টিস জোন এবং জাস্টিস পিয়ারসনকে তাদের কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়। একজন সাদা চামড়া ছিল বলে বেঁচে যায়। যেহেতু এই দুজন কালো চামড়া, তাদের অপরাধ হলো তারা কালো চামড়া। সেই জন্যই তাদের সিট আন সিট হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদকে ফেরত না দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইখানে মানবাধিকার কোথায়, এখানে গণতন্ত্র কোথায় এটা আমার প্রশ্ন। এমনকি বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে সেই খুনি রাশেদ আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। প্রতিটি সরকার, যত প্রেসিডেন্ট আসে সবার আছে আমি আবদেন করেছি, আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি, ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি যে, এই খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী, মন্ত্রী হত্যাকারী, এরা মানবতা লঙ্ঘনকারী এদের আপনারা আশ্রয় দিয়েন না, ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না, এই খুনিদের লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে আর এখন দেখা যায়, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তাদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে, যার গণতান্ত্রিক কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। অগণতান্ত্রিক ধারা এবং সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী বুদ্ধি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে, তারা সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাবেদারি করে, পদলেহন করে।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত