ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী

নীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর নির্দেশ

নীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীল অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এই নির্দেশ প্রদান করেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সাংবদিকদের ব্রিফ করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, একনেক সভায় পরিবেশ উন্নয়নসহ ১১ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ১২৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১০ হাজার ৫২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার যখন ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করে, তখন মূলত নীল অর্থনীতির বিষয়টি সামনে আসে। তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যানে নীল অর্থনীতির জন্য একটি পৃথক অধ্যায় রাখা হয়েছে। যেখানে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য তহবিল সংগ্রহে ‘ব্লু বন্ড’ চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরইমধ্যে অনেক দেশ এ ধরনের বন্ড ইস্যু করেছে। আমরাও যখন নীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে আরো আকর্ষণীয় করতে পারব, তখন এ ধরনের বন্ড ইস্যু করা যেতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সমুদ্র সীমার রায়ের পর বহু বছর অতিবাহিত হলেও সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে নীল অর্থনীতির অগ্রগতি তেমন হচ্ছে না। নীল অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিতে ডেল্টা উইং গঠন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. মো. কাওসার আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নীল অর্থনীতির জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের পক্ষে নন। তিনি জানান, কীভাবে নীল অর্থনীতির উদ্যোগসমূহকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া যায় এবং অর্থনীতিতে এর অবদান জিডিপিতে যুক্ত করা যায়, সে সম্পর্কে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ আগামীকাল (আজ) প্রকাশ করা হবে। এর সারসংক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জরিপের ফলাফল দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে কোভিড-১৯ অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও দারিদ্র্য হারের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখে তিনি সন্তুষ্ট হন।

জিডিপিতে নারীদের অবদান গণনার বাইরে থাকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ নারীদের পারিবারিক অবদান যোগ করা হলে জিডিপি অনেক বেশি হতো। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নারীদের কাজের অবদান নির্ণয়ের জন্য বিআইডিএসকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে হবে না। কিন্তু তারপরের বাজেট থেকে নারীদের অবদান হিসাব করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব ধরা হবে। প্রকল্পে বেশি পরামর্শক না নেয়ার অনুশাসন দিয়েছেন সরকারপ্রধান। অনুমোদিত প্রকল্পে একজনের বেশি পরামর্শক না নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় বলেছেন, এখন থেকে আর স্লুইস গেট বানানো যাবে না। তবে যেখানে বন্যার কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, সেখানে যেন কালভার্ট করা হয়। পানির চাপ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস (দ্বিতীয় সংশোধন)’ প্রকল্প। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্প, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’ প্রকল্প, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বন্যা ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন জরুরি সহায়তা প্রকল্প’। স্থানীয় সরকার বিভাগের দুটি প্রকল্প রয়েছে যথাক্রমে-‘এডিবির সহায়তায় বন্যা ২০২২-এ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্প এবং ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার পুননির্মাণে জরুরি সহায়তা’ প্রকল্প। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘সিলেট চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘২০২২ সালের বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট-ছাতকবাজার সেকশন (মিটারগেজ পুনর্বাসন)’ প্রকল্প, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ (চতুর্থ সংশোধন)’ প্রকল্প, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ‘বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্প, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘একসেলেরেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয় (একসেস) বাংলাদেশ ফেজ ১ (বিএলপিএ কম্পোনেন্ট)’ প্রকল্প।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত