ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাড়ে ৭ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি রেখেই নিবন্ধন শেষ

বেসরকারি হজযাত্রীদের জন্য শুরু হয়নি বাড়ি ভাড়ার কাজ

বেসরকারি হজযাত্রীদের জন্য শুরু হয়নি বাড়ি ভাড়ার কাজ

আট দফা সময় বাড়িয়ে দীর্ঘ দুই মাস ধরে নিবন্ধন কার্যক্রম চালিয়েও পূরণ হলো না এবারের হজযাত্রীর কোটা। সাড়ে ৭ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি রেখেই গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া নিবন্ধনের সর্বশেষ সময়। এ সময় আর বাড়ানো হবে না বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। এবার হজ প্যাকেজের খরচ অনেক বৃদ্ধির কারণেই মূলত হজে যেতে আগ্রহীর সংখ্যা কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে নিবন্ধনে।

এদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরব সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ রমজানের মধ্যে মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া ও দ্রুত অন্যান্য কাজের চুক্তি সম্পন্ন করতে তাগিদ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো এখনও বাড়ি ভাড়ার কাজ শুরু করেনি বলে জানা গেছে। তবে মৌখিকভাবে তারা বাড়ি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এখনও বাংলাদেশের হজযাত্রীদের তালিকা চূড়ান্ত করে পাঠানো হয়নি। এছাড়া সৌদিতে হজ কার্যক্রমের অনলাইন সিস্টেম ই-গেট এখনও খোলেনি। যে কারণেই মূলত বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য কাজ শুরু করতে পারেনি এজেন্সিগুলো। আগামী ঈদের পর এসব কাজ শুরুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এখন পর্যন্ত হজের প্রস্তুতি স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা। এছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল সৌদিতে গিয়ে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে মদিনার বাঙালি মার্কেট এলাকার স্থাপনা ভাঙ্গার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। যে কারণে ওই এলাকায় হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া সংকট ও ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের হজ হবে ২৭ জুন। সেই হিসেবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি হজের নিবন্ধন শুরু হয়েছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন শেষ সময় থাকলেও তার বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন সে সময়। পরে আবার নিবন্ধনের সময়সীমা ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়। সর্বশেষ ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলেও ওই সময়ের মধ্যেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর পর্যায়ক্রমে ২১ মার্চ, ৩০ মার্চ, ৫ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয় সময়।

নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে না বলে গতকাল আলোকিত বাংলাদেশকে জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন।

সূত্রমতে, সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর বিপরীতে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রীদের নিবন্ধন সিস্টেমে দেখা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ৩৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ৯ হাজার ৬৫৯ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৫০৫ জনের কোটা খালি থেকে যাচ্ছে।

বাড়িভাড়া সম্পন্ন করার তাগিদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের : গত ১০ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখা থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এজেন্সি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়, ১৪৪৪ হিজরি/২০২৩ খ্রি. হজ মৌসুমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার প্রেরিতব্য হজযাত্রীদের জন্য মক্কা ও মদিনা বাড়ি/হোটেল ভাড়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। হজ চুক্তি ৪র্থ অনুচ্ছেদের উপঅনুচ্ছেদ-০৩ অনুযায়ী ৫ এপ্রিলের মধ্যে বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য সেবা সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সৌদি আরব সফরকালে রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সচিবের (জিয়ারা) সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ২০ রমজানের মধ্যে সব এজেন্সি মক্কা ও মদিনায় বাড়ি/হোটেল ভাড়া সম্পন্ন করতে হবে।

উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ বছর মদিনায় আল মাসানে (বাঙালি মার্কেট) এবং বাবুত তামার এলাকা রমজানের পর ভেঙে ফেলা হবে। এরই মধ্যে উক্ত এলাকার চতুর্দিক স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে। এ এলাকার কোনো বাড়ি/হোটেলের সাথে চুক্তি না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ফলে মদিনায় আবাসন সংকট হতে পারে।

এ অবস্থায়, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রেরিতব্য হজযাত্রীদের জন্য জরুরিভিত্তিতে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি/হোটেল ভাড়া সম্পন্নকরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

লিড এজেন্সিতে হজযাত্রী স্থানান্তর : ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে ৫২টি এজেন্সির অনুকূলে নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৯৭-এর কম হওয়ায় জরুরিভিত্তিতে লিড এজেন্সি নির্ধারণপূর্বক নিবন্ধিত হজযাত্রীদের স্থানান্তর করে এ মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখাকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, লিড এজেন্সি সমঝোতাকারী এজেন্সিদের সব দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২২ অনুযায়ী সমন্বয়কারী এজেন্সির সব দায়-দায়িত্ব লিড এজেন্সির জন্য প্রযোজ্য হবে।

বেসরকারি হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য কার্যক্রমের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন-হাবের সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সৌদির হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ই-গেট এখনও খোলেনি। বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কাগজও বের হয়নি। তবে মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়ার জন্য এজেন্সিগুলো সংশ্লিষ্ট মালিকদের সঙ্গে মৌখিকভাবে কথাবার্তা বলে রেখেছেন। ঈদের পরই মূলত এসব কাজ শুরু হতে পারে। অনলাইনে এসব কাজ হওয়ার কারণে বেশি দেরি হবে না এবং এখন পর্যন্ত হজের প্রস্তুতি স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত