পাঁচ সিটি নির্বাচন

সংসদ ভোটের বার্তা পাবে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮ মাস আগেই দোরগোড়ায় চলে এসেছে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। আগামী মে-জুন মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পাঁচ সিটির নির্বাচন নিয়ে নানা সমীকরণ কষছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। পাঁচ সিটির ভোটের পরিবেশ ও জনরায় দেখে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় বার্তা দিবে আওয়ামী লীগ। সিটি ভোটের ফলাফল দেখেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিবে দলটি। পাঁচ সিটির ভোট তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অবাধ নির্বাচন হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয় পেতে হলে কাঠখড় পোহাতে হবে আওয়ামী লীগকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পাঁচ সিটি করপোরেশনের এই ভোট ক্ষমতাসীন দলের জন্য ‘এসিড টেস্ট’ হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোট দেখেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা ফেরাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু, অবাধ করতে পারেই আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

এদিকে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পাঁচ সিটিতে নির্বাচনে অংশ নিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তবুও জয়ের ব্যাপারে নির্ভার হতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য মনে করছেন, বিএনপি দলগতভাবে অংশ না নিলেও মাঠে তাদের প্রার্থী ঠিকই থাকবে। এ ছাড়া নিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারাও নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগে হাতছাড়া করতে চাইবে না তারা। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা রকমের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিরা দূরত্ব বাড়িয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে দল থেকে দূরে অবস্থান করছেন অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষে দলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়িয়েছেন অনেকে। তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরে দলের চেইন অব কমান্ডও ভেঙে গেছে। তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার কাছেও নালিশ করেছেন কেউ-কেউ। ভোটের আগেই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন করে দলকে সুসংগঠিত করাই এখন ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

পাঁচ সিটিতে মেয়র পদে লড়তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ৪১ জনপ্রার্থী। তবে পাঁচ সিটিতে কারা নৌকা পাচ্ছেন তা জানা যাবে আগামীকাল। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নৌকার প্রার্থী ঠিক করা হবে। আগামী কাল সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা হওয়ার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশালে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই তিন সিটিতে বর্তমান মেয়ররাই নৌকার প্রার্থী থাকছেন। তবে গাজীপুর আর সিলেটে সিটি করপোরেশনে নৌকার প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হবে আওয়ামী লীগকে। গাজীপুরে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত। আর সিলেট আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের নির্দেশনা একটাই তা হলো- একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলকে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। অতঃপর দল ও দলের সহযোগী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে মানুষের মন জয় করে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবে। এরপর মানুষ যাকে ভোট দিবে আমরা তাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা রাখব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রতিটা নির্বাচনে যেভাবে দলীয় মনোয়ন দেয়া হয়, এবারও একইভাবে দেয়া হবে। আর বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচনে আসবে না। কিন্তু তারা ঘোমটা পরে, গোপনে বা বেনামে এলেও আমরা শঙ্কিত নই।

উল্লেখ্য, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে ও ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন হবে ইভিএমের মাধ্যমে।