ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাঁচ সিটি নির্বাচন

বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে বিএনপি

নির্বাচনে অংশ নিলেই দল থেকে বহিষ্কার
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে বিএনপি

আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্তসহ জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এক্ষেত্রে উল্টো অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি’- ঘোষিত এমন নীতিতেই অটল আছে দলটি। সুষ্ঠু ভোট হলে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখলেও পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিএনপির কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ না নেয় সেজন্য আগে থেকেই তৎপরতার পাশাপাশি সম্ভাব্য বিদ্রোহীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করলেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের যে তফসিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করেছে তাকে সরকারের ট্র্যাপ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এবার জনগণ সরকারের কোনো ট্র্যাপে পা দেবে না। বিএনপিও কোনো ট্র্যাপে পা দেবে না। আমাদের দাবি একটাই, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না।

সিটি নির্বাচনে দলীয় অবস্থান ও সম্ভাব্য বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল শনিবার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই আমরা বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। কেউ বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অর্থাৎ, দলের শৃঙ্খলা যারাই ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে বিএনপি। মেয়র বা কাউন্সিলর যে পদেই হোক, দলের কেউ নির্বাচন করলেই তাকে বহিষ্কার করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে গাজীপুর সিটি নির্বাচন ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল ১২ জুন সিলেটে এবং রাজশাহীতে ২১ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এই পাঁচ সিটির ভোটকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এতে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে কিছুটা চাপের মধ্যে পড়ছে বিএনপি। কারণ দলের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তারা এসব সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেয়াও স্থানীয় পর্যায়ে দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

২০১৮ সালের নির্বাচনে পাঁচ সিটির মধ্যে চারটি গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং সিলেট সিটির নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে এই পাঁচ সিটির নির্বাচনে সবটাতেই মেয়র পদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।

জানা গেছে, পাঁচটি সিটির মধ্যে কয়েকটিতে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থীরা অংশগ্রহণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তত আছেন। তবে এক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ডের সমর্থনের চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়া সব কটি সিটিতেই কাউন্সিলর পদে বিএনপির বহু প্রার্থী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সিগনাল পেতে লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিলেটের গত দুই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলীয় সিগনাল না পেয়ে এরই মধ্যে লন্ডনে বসেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, আগামী নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করছেন না। তবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি ‘সিগনাল’ পেয়েছেন বলে জানান। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে কৌতূহল বিরাজ করছে।

এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে মানসিকভাবে আগ্রহী বলে জানা গেছে। তবে দল নির্বাচনে না গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন বুলবুল।

এছাড়া খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সূত্র মতে, দল থেকে মনোনয়ন না দিলেও আগ্রহীরা স্বতন্ত্রভাবে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণে করতে পারেন। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় কুমিল্লায় বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু ও নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আগামী সিটি নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একইধরণের সিদ্ধান্ত আসবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত