ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডিজিটাল বাংলাদেশে এনালগে চাঁদ দেখা!

ডিজিটাল বাংলাদেশে এনালগে চাঁদ দেখা!

আসন্ন ঈদুল ফিতর কবে উদযাপিত হবে তা জানার অপেক্ষায় গোটা জাতি। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী রোজা ২৯টি হলে ২২ এপ্রিল আর ৩০টি হলে ২৩ এপ্রিল তথা শাওয়াল মাসের প্রথম দিন। এই ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই। তবে বরাবরের মতো সবার চোখ থাকবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ২৯ রমজান ২১ এপ্রিল বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। তবে ওইদিন চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত নিতে কতক্ষণ সময় লাগবে তার কোনো সময়সীমা নেই।

কারণ এর আগে বিভিন্ন সময়ে চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষা করে কোনো খবর না পেয়ে তারাবির নামাজ পড়ে অনেকে ঘুমানোর পর জানতে পারেন চাঁদ দেখা গেছে। এ নিয়ে চরম বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে এনালগ পদ্ধতিতে চাঁদ দেখার কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে অনেকে মনে করেন। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আরও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে চাঁদ দেখার খবর দ্রুত জাতিকে জানানোর ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

তবে চাঁদ দেখা কমিটি সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবহাওয়া অফিস ও মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) কাছে চাঁদের পূর্বাভাস থাকে। তবে ধর্মীয় অনুভূতির কারণে সেটা প্রকাশ বা তার ওপর নির্ভর করা হয় না। ইসলামের বিধান অনুসরণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চাঁদ দেখার খবর যাচাই করে কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হলেও সঠিক সিদ্ধান্তই নেয়া হয়। তবে দ্রুত চাঁদ দেখা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে সব জেলায় উন্নন প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রমতে, হিজরি সনের প্রতিটি মাসের তারিখ নির্ধারণের জন্য বৈঠকে বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। তবে এসব বৈঠকের খবর বা সিদ্ধান্ত জানা নিয়ে কারও তেমন আগ্রহ না থাকলেও প্রতি বছর রমজান ও ঈদুল ফিতরের তারিখ নিয়েই উৎকণ্ঠায় থাকেন সবাই। কারণ ঈদুল আজহা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ১০ দিন আগেই তার তারিখ নির্ধারণ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঈদুল ফিতর। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় বা সর্বোচ্চ একদিন আগের সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে জানা যায় ঈদের তারিখ। রোজা কবে শুরু হবে তা নিয়েও সবাই একদিন আগ পর্যন্ত উদগ্রিব থাকেন। কারণ এশার নামাজের আগেই চাঁদ দেখার খবর না জানতে পারলে তারাবির নামাজ পড়া না পড়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।

বাংলাদেশে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়, সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সর্বশেষ গত ২২ মার্চ পবিত্র রমজান মাসের তারিখ নির্ধারণে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।

সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা: বশিরুল আলম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো: ছাইফুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. নজরুল ইসলাম, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো: আবদুল কাদের শেখ, সিনিয়র উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইরতিজা হাসান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (অর্থ) মো. জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহরিয়ার হক, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ নিয়ামতুল্লাহ, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চাঁদ দেখার বর্তমান পদ্ধতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্য ও সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ইসলামের বিধান অনুযায়ী আমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখি আবার চাঁদ দেখেই রোজা ভাঙ্গি বা ঈদ উদযাপন করি। অনেক দেশে সৌদি আরবের চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে রোজা-ঈদ পালন করে। আমাদের দেশেও এধরনের কিছু লোক আছে। এ নিয়ে ওলামাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। একপক্ষের মত হলো- পৃথিবীর যে কোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলেই হবে। আরেক পক্ষ বলেন- নিজ দেশের সীমানায় চাঁদ দেখা গেলেই হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ওলামাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুগ যুগ ধরে দেশের সীমানার মধ্যে চাঁদ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় চাঁদ দেখা কমিটি আছে। তাদের কাছে আসা তথ্যের ভিত্তিতেই জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়। সাধারণ মানুষ চাঁদ দেখলেও জেলা কমিটিতে নিউজ করে না। জেলায় নিউজ আসে না। এজন্য চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করা হয়। এ নিয়ে অনেক বিতর্ক ও বিড়ম্বনা দেখা দেয়। অনেকের শিডিউল নষ্ট হয়। তারপরও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই দেরি করা হয়।

অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের কাছে চাঁদ দেখার পূর্বাভাস থাকে। তারপরও চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিনিধি চুপচাপ থাকেন, সারাদেশের চাঁদ দেখার খবর আসার জন্য। অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তি ও সারাদেশের খবর যাচাই করেই চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে স্বচক্ষে চাঁদ দেখা ও চাঁদের সায়িন্টিফিক ক্যালকুলেশন-দুটো পদ্ধতি ব্যবহার করেই সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের দেশেও সৌদি মডেল অনুসরণ করা হয়।

তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিস ও স্পারসোর তথ্য পর্যালোচনা করে আমরা আগে থেকেই চাঁদ দেখা না দেখার সম্ভাবনা বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়ে থাকি। এবারও ২৯ রমজানে চাঁদ দেখার ৯৫ শতাংশ সম্ভাবনা আছে বলে আমরা জানিয়েছি। তবে ধর্মীয় অনুভূতির দিক বিবেচনা করে চাঁদ দেখার খবর যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে চাঁদ দেখা কমিটি। এজন্য দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চাঁদ দেখার খবর যাচাই করতে সময় লেগে যায়।

ড. শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমানে ঢাকায় আবহাওয়া অফিসের ছাদ থেকে থিওরিক্যাল চাঁদ দেখা হয়। এছাড়া দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশ থেকে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা বেশি থাকায় কুতুবদিয়া-টেকনাফ এলাকায় চাঁদ দেখার ওপর গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে চাঁদ দেখা যায়। তবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আগাম তথ্যের পাশাপাশি স্বচক্ষে চাঁদ দেখার জন্য সব জেলা পর্যায়ে উন্নত প্রযুক্তির দূর্বীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। কারণ এসব যন্ত্রের মাধ্যমে মেঘ থাকলেও চাঁদ দেখা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত