ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানী ছাড়ছে মানুষ

পাঁচ দিনের ঈদের ছুটি শুরু কাল

পাঁচ দিনের ঈদের ছুটি শুরু কাল

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে কাল থেকে সারা দেশে পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে। এতে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, ব্যাংক ও বিমাসহ বিভিন্ন সংস্থার চাকরিজীবীদের শেষ অফিস আজ। অফিস শেষে নাড়ির টানে অনেকে গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটবেন।

গত বছরের তুলনায় এবার সরকারি ছুটি একটু বেশিই পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। কেন না, আগামীকাল পবিত্র শবেকদর ও ২০ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে একটানা ৫ দিন ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ রোজা পূর্ণ হলে ছুটি আরো একদিন বাড়বে। অন্যদিকে প্রত্যেক বছরের মতো এবারও গার্মেন্ট কর্মীদের ঈদের আগের দিনে ছুটি পাবেন।

গতকাল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস করতে দেখা গেছে। এবার ঈদে টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাওয়ায় গত বছরের মতো আগেভাগেই কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার তোরজোড় নেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তবে আজকে অফিস শেষ করে ঈদের ছুটি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে গ্রামে যাবেন।

ঈদের ছুটি শুরুর আগেই পরিবারকে বাড়ি পাঠাচ্ছেন মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার কমলাপুর রেল স্টেশন, যাত্রাবাড়ি, গাবতলী বাস টার্মিনাল দেখা যায় ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ভোগান্তি ছাড়াই ট্রেন ও বাসে যাত্রা করতে পারছেন মানুষ। ফলে কিছুটা চাপ রয়েছে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও, এবার যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারছেন।

দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে শহরে এসেছেন। এতে কর্মব্যস্ততার চাপে চিড়েচ্যাপটা হওয়া মানুষের কাছে ঈদে বাড়ি ফেরা যেন মুক্তি ও প্রশান্তির ছোঁয়া। তাই ঈদ শুধু উৎসব নয়, নগরবাসীর কাছে নাড়ির টানে গ্রামে ফেরার আয়োজন। এই স্রোতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের কোনো ভেদাভেদ থাকছে না। এবার ঈদের ছুটি তুলনামূলক দীর্ঘ। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ না থাকায় এবার রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারেন।

ঈদে নগরবাসীর গ্রামমুখী হওয়ার সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা ঢাকায় এসেছেন, তাদের অধিকাংশের শহরে নিজের মালিকানাধীন আবাসস্থল নেই। তাদের পরিবারের একটি অংশ নিজ গ্রামে থাকেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা জীবিকার প্রয়োজনে আলাদা থাকেন। আবার অনেকেই শুধু নিজে ঢাকায় থাকেন, পরিবার গ্রামে থাকে। ঈদে গ্রামে ফিরে আসেন পরিবারের সবাই। ফলে এই পারিবারিক মিলনমেলায় যোগ দিতে বাড়ি ফেরেন তারা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ??এবারের ঈদের ছুটিতে ১ কোটি ২০ লাখের কমবেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ঢাকার বাইরে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় স্বজন-সান্নিধ্যে যেতে পারে আরো প্রায় ৫ কোটি মানুষ।

কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকায় যাত্রীরা বলেছেন, ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়িতে গেলে যানজটের কারণে রাস্তাতেই বেশিরভাগ সময় কেটে যায়। ফলে উৎসবের আমেজ আর পাওয়া যায় না। এতে মানুষের কর্মস্পৃহায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেজন্য আগেভাগেই পরিবারের সদস্যরা গ্রামে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় নিম্ন আয়ের মানুষকে, যারা গণপরিবহণে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া-আসা করেন। শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা নিজেদের গাড়িতে বা ভাড়া করা প্রাইভেট কারে চড়েন। তারা গরিবের দুঃখ বুঝতে পারেন না। তাই ছুটির বিষয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তাই এবার ঈদের ছুটি বেশি হওয়ায় রাস্তায় যানজট ও যাত্রী ভোগান্তি কমবে।

জানা গেছে, সরকারি ছুটিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ থাকবে সব বাণিজ্যিক ব্যাংক। তবে তৈরি পোশাকশিল্প এলাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাসসহ অন্য ভাতা পরিশোধ ও রপ্তানি বিল বিক্রয়ের সুবিধার্থে ঈদের আগে তিন দিন সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা থাকবে। অর্থাৎ আগামী ১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিল (বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার) সরকারি ছুটির দিনেও শিল্প এলাকায় থাকা ব্যাংকের শাখা সীমিত আকারে খোলা থাকবে। আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অব সাইট সুপারভিশন বা ডিওএস থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আগামী ২০ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এতে দেশের তফসিলি ব্যাংকের সব শাখা ও উপশাখা বন্ধ থাকবে। তবে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে তৈরি পোশাকশিল্প এলাকাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রপ্তানি বিল বিক্রয় এবং শিল্পে কর্মরতদের বেতন-বোনাস পরিশোধের সুবিধার্থে কিছু শাখা খোলা থাকবে।

ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকের তৈরি পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ১৯, ২০ এবং ২১ এপ্রিল সরকারি ছুটির দিনে খোলা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওইসব এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলো সীমিত সংখ্যক লোকবলের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ১৯ ও ২০ এপ্রিল অর্থাৎ বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লেনদেন হবে, অফিস চলবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এর মধ্যে দুপুর ১টা ১৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত থাকবে নামাজের বিরতি। এছাড়া ২০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হবে এবং লেনদেন পরবর্তী কাজ পরিচালনার জন্য অফিস চলবে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এর মধ্যে দুপুর ১টা ১৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত থাকবে নামাজের বিরতি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত