ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাড়ছে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া

গরমে হাসপাতালে রোগী ও কারাবন্দিদের দুরবস্থা

গরমে হাসপাতালে রোগী ও কারাবন্দিদের দুরবস্থা

প্রচণ্ড গরমে দেশজুড়ে চরম অবস্থাভ আবহাওয়া রূপ নিয়েছে মরুভূমির মতো। রাস্তাঘাটে যেন বইছে লু হাওয়া। গত ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকায় ছুঁয়েছে রেকর্ড তাপমাত্রা। প্রায় ৪২ ডিগ্রি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজন এবং কারাগারে বন্দিদের চরম শোচনীয় অবস্থা। এছাড়া বাড়ছে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া।

তবে, গরমে কারাগারগুলোও বন্দিদের জন্য নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এমনকি পাঁচ-ছয়বার গোসল করার সুযোগও দেয়া হচ্ছে বন্দিদের।

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে কারাবন্দিদের সুস্থ রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে কারাবন্দিদের তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দিনে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে কারাগার থেকে বের করে গাছের নিচে নিরাপত্তার সঙ্গে হাঁটাচলা করতে দেয়া হচ্ছে বন্দিদের। সবগুলো কারাগারে ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেরামত ও পরিবর্তন করা হয়েছে নষ্ট ফ্যানগুলো।

এছাড়া দিনে যেখানে আগে এক থেকে দুবার গোসল করতেন কারাবন্দিরা, সেখানে এখন দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়বার গোসল করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থাসহ জেনারেটরের ব্যবস্থাও করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র গরমে বেশ কয়েকজন কারাবন্দি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন গত কয়েক দিনে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গরমজনিত কারণে অসুস্থ বন্দিদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে মুখে খাওয়ার স্যালাইনের।

দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগারে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারের মতো। এর মধ্যে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি রয়েছে কয়েকটি কারাগারে।

জানা যায়, প্রতিদিন যতসংখ্যক আসামি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে আসেন, সমানসংখ্যক আসামির মুক্তি মেলে না জামিনে। সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় আসামির সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু সে অনুযায়ী জামিন হচ্ছে না। ফলে কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই।

ঢাকা কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, প্রতিটি কারাগারে সবগুলো ফ্যান সচল করা হয়েছে। তীব্র গরমে কোনো বন্দি যেন অসুস্থ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের কারাগারে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক বন্দির জন্য আলাদা বৈদ্যুতিক পাখা রয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে পানিসহ খাবার-দাবার।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামান বলেন, কোনো বন্দি যদি দিনে তিন থেকে চারবার গোসল করতে চান সে ব্যবস্থাও রয়েছে। এটি অনেক বড় কারাগার, তাই পর্যাপ্ত পানিসহ অন্য ব্যবস্থাও উন্নত।

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার বলেন, নারী বন্দিদের জন্য আলাদা পানির হাউজ রয়েছে। এ কারণে দিনে ইচ্ছা করলে নারী বন্দিরা একাধিকবার গোসল করতে পারেন।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, সবাই জানেন চুয়াডাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির বেশি পর্যন্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এই তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে কারাবন্দিদের খোলা জায়গায়, গাছের নিচে হাঁটাহাঁটির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, যাতে তারা মানসিকভাবে সুস্থ থাকে। অনেকেই পাঁচ-ছয় বার পর্যন্ত গোসলও করছেন।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যদিয়ে কারাবন্দিদের হাঁটাহাঁটি করতে দেয়া হচ্ছে। আমাদের কারাগারে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। সেখান থেকেও কারাবন্দিদের গতিবিধি নজরদারি করা হয়। এছাড়া তীব্র গরমের কারণে কোনো বন্দি অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসাসেবারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান শুভ বলেন, আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ জনের মতো রোগী পেতাম। তবে তাপপ্রবাহের কারণে এখন আমরা প্রতিদিন ৫৫০ থেকে ৬০০ রোগী দেখছি। এই রোগীদের প্রধান সমস্যা তাপপ্রবাহকেন্দ্রিক। তবে উদ্বেগের কিছু নেই। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে ঢাকায় ১৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৫৮ বছরের মধ্েয সর্বোচ্চ। ১৬ এপ্রিল ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়েছে। টানা কয়েক দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছিল চুয়াডাঙ্গায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ১৯৬০ সালে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর ১৯৬৫ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

তীব্র গরমের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মাঠঘাটে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষ। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ-ব্যাধিও।

গত ৪ এপ্রিল দেশে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এরপর গত ১৩ দিন ধরে তা অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ তীব্র হয়েছে অর্থাৎ, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত