ঢাকা ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইভিএমে পাঁচ সিটির ভোট

সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির এসিড টেস্ট

সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির এসিড টেস্ট

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের পাঁচ সিটির নির্বাচন ইসির জন্য এসিড টেস্ট। এসব সিটিতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা গেলে রাজনৈতিক দলের কিছুটা আস্থা পেতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ভোটে অনিয়ম ও করচুপি হলে রাজনৈতিক দল এবং দেশ বিদেশে আস্থা হারাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে আগামী ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে হবে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে হবে ২১ জুন। সব সিটির ভোটই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে হবে। আলাদা সময়ে ভোট হওয়ায় ইভিএম ব্যাবহারে তেমন সমস্যা হবে না। ইসির আগের কেনা যেসব সচল ইভিএম মজুত আছে, সেগুলো দিয়ে ভোট করা হবে পাঁচ সিটিতে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, পাঁচ সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। প্রতিটি সিটি ভোটেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার হবে। সেখানে সিসি ক্যামেরা থাকবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যাদি হালনাগাদ করার ক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদের ট্যাব দিয়ে দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর হালনাগাদ করার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

জানা যায়, পাঁচ সিটি করপোরেশনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে দুটিতে বর্তমান মেয়ররা বাদ পড়েছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রার্থী করা হয়েছে দলের প্রবীণ নেতা আজমত উল্লাহ খানকে। বরিশালেও বর্তমান মেয়রকে বদলে প্রার্থী করা হয়েছে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত)।

সিলেটে এবার মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে।

খুলনা ও রাজশাহীতে বর্তমান দুই মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনই আবার নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন।

অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দীনকে দলটির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি চার সিটিতেও প্রার্থী দিবে বলে জানা গিয়েছে জাপা সূত্রে।

অন্যদিকে পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে যেন ‘ঝুঁকির’ মুখেই পড়ছে বিএনপি। যদিও দলীয়ভাবে বিএনপি পাঁচ সিটির নির্বাচনে যাচ্ছে না এটা পরিষ্কার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকিটা এখানেই। কারণ এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কারও কারও রহস্যময় আচরণ, আবার কারো কারো নির্বাচনের ব্যাপারে যে উৎসাহ-আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে, তাতে ঝুঁকি যেন বিএনপির দরজায় উঁকিই দিচ্ছে।

বিএনপি যখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে করছে, সেই নির্বাচনের আগমুহূর্তে সিটি নির্বাচন নিয়ে দলের অনেকের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দলটিকে অনেকটা বিপাকে ফেলতে পারে। বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অবস্থান থেকে সরে এসে দলটি সিটি নির্বাচনে দলগতভাবে অংশ নিতে পারছে না। কারণ তাতে ভিন্ন বার্তা দেবে। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের সেই ‘উকিল সাত্তার’ মডেলে যদি কেউ প্রার্থী হয়ে যায়, সেটিও বিএনপিকে ভিন্ন পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।

এস বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এসব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে এর প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর। সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়ে ইসিকে আরো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হবে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা ইসির জন্য সহজ হবে। এসব বিবেচনায় ওই নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসির জন্য একটি পরীক্ষা।

সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকারভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রাজনৈতিক দলকে এ নির্বাচনে আনার বিষয়ে ইসির আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই বলেও জানান তিনি। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিএনপিসহ বড় দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা আরো বেড়ে যাবে। এর প্রভাব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত