ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সময় এখন ঈমানদারদের

সময় এখন ঈমানদারদের

চার ঋতুর দেশে বৃষ্টি হয় বসন্তে। ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে বৃষ্টি নামে বর্ষাকালে। বর্ষায় খাল-বিল-পুকুর- সর্বত্র পানিতে থইথই করে। বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ালে যে কেউ কাকভেজা জবুথবু হয়ে যায়। অষাঢ় শ্রাবণের এ বৃষ্টিবাদল প্রাকৃতিক। খোলা চোখে দেখা যায়। আরেক ধরনের বৃষ্টি আছে, যা চোখে দেখা যায় না, শরীর ভেজে না। গন্ধ যেমন বাতাসে লুকিয়ে থাকে, ইথার যেমন দৃষ্টির আড়ালে রেডিও-টিভিতে কথা আনে, ছবি পাঠায়- অনুরূপ অতিপ্রাকৃতিক বৃষ্টি লোকচক্ষুর অন্তরালে রহমতের সওগাত বিলায়।

একজন সাহাবির জানাজায় গিয়েছিলেন নবীজি (সা.) মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে। মোমিন জননী মা আয়েশা (রা.) শরীরে মায়ার পরশ মাখার জন্য নবীজির চাদরখানি গায়ে জড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ দেখেন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে। সাহাবির দাফন শেষে নবীজি বাড়ি ফিরলে হজরত আয়েশা এগিয়ে যান। নবীজির শরীর মোবারকে হাত বোলান। পিঠে, ঘাড়ে, বাহুতে বিচরণ করতে থাকে হজরত আয়েশা (রা.) এর মায়াবী সন্ধানী হাত। নবীজি জিজ্ঞেস করেন, আয়েশা তুমি এমন করছ কেন? আমার শরীরে হাত বুলাচ্ছ, কারণ কী? আয়েশা (রা.) বললেন, আমি অবাক হচ্ছি এত বেশি বৃষ্টি নামল, অথচ আপনার শরীরের কোথাও পানির ছোঁয়া লাগেনি। নবীজি বিচক্ষণতায় বুঝতে পারলেন ব্যাপার কী। জানতে চাইলেন, আয়েশা আমি আসার আগে তুমি মাথায় কী দিয়েছিলে? বললেন, আপনার চাদর মোবারক। নবীজি বললেন, আয়েশা আমার চাদর মাথায় দেয়ার করণে গায়েবি জগৎ থেকে অঝেরে যে বৃষ্টি নেমেছে তা তুমি দেখতে পেয়েছ। আমার সাহাবির মৃত্যুতে নামা এই বৃষ্টি তো প্রাকৃতিক নয়। কাজেই কাপড়-চোপড় ভিজবে কেন? মওলানা রুমি (রহ.) মসনবি শরিফে এই কাহিনি সূত্রে দীর্ঘ তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন।

হজরত আয়েশা জানতে চাইলেন, এ গায়েবি বৃষ্টিতে কোন ধরনের উপাদান ছিল, রহমত না গজবের? নবীজি বললেন, রহমতের এমন উপাদান, যা মানুষের মনে বিস্মৃতির আচ্ছাদন ঢেকে দেয়। এর ফলে মানুষ অতীতের কথা ভুলে যায়। মওলানা রুমি ব্যাখ্যা দেন, ভুলে যাওয়াও আল্লাহর খাস রহমত। যদি আপনজন হারানোর বেদনাভার মানুষ ভুলতে না পারত, এ জগৎ সংসার টিকতে পারত না। সারাদিন স্বার্থের পেছনে দৌড়ানোর মানসিক জঞ্জাল যদি রাতে নিদ্রার বিস্মৃতি এসে ভুলিয়ে না দিত, তাহলে মানুষ পাগল হয়ে যেত।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলোভী (রা.) ইসলামি জাহানের ব্যতিক্রমধর্মী একমাত্র কিতাব হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগায় বলেন, আমি একবার দেখলাম, দু’জন লোক ঝগড়া করছে। দেখলাম আকাশ থেকে একখণ্ড মেঘ তাদের দিকে নেমে আসছে। মেঘখণ্ডটি যতই কাছে আসছে, তাদের রাগ উত্তেজনা ততই প্রশমিত হচ্ছে। এক পর্যায়ে সেই মেঘ কুয়াশার মতো তাদের মাথার ওপর মিলিয়ে গেল। দেখলাম, সঙ্গে সঙ্গে তাদের শত্রুতাও বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হলো। এ মেঘমালা ছিল রহমতের ছায়াপাত।

মাহে রমজানে রহমতের যে বারিধারা পাপবিদ্ধ পৃথিবীকে স্নাত করে, তা প্রাকৃতিক বৃষ্টি নয়, রহমতের বরিষণ। এ বছর বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বর্ষার সঙ্গে রহমতের বরিষণ একাকার হয়েছে। নতুন বর্ষার পানিতে খাল-বিল-পুকুরে মাছ ও জলজপ্রাণীর নবান্ন উৎসব শুরু হয়, রমজানে গায়েবি জগতের বরিষণে ঈমানদারদের জীবনে ও সমাজে বেহেশতি আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। মসজিদে মসজিদে মোমিনদের উপচেপড়া ভিড় রহমতের সেই বৃষ্টিধারার জ্বলন্ত সাক্ষী। পবিত্র মাহে রমজান, সময় এখন ঈমানদারদের। সময় এখন রহমতের বরিষণে হৃদয়-প্রান্তর প্লাবিত করার। শেষ সময়ে আসুন নিজের পাথেয় সংগ্রহের ব্যাপারে সর্বোচ্চ যত্ন নিই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত