ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রভু হে! আমাদের সুন্দর করে দাও

প্রভু হে! আমাদের সুন্দর করে দাও

আমরা পবিত্র মাহে রমজানের একেবারে শেষ প্রান্তে উপনীত। সামনের রাতটি ২৯ রমজান। বাংলাদেশের আকাশে আগামীকাল ঈদের চাঁদ উঁকি দিলে সেটিই হবে বছরের শেষ রোজা। দুটি কারণে এই রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবেকদর তালাশের যে হুকুম দেয়া হয়েছে, তার সর্বশেষ রাত ২৯ রমজান। তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ হলো, হতে পারে এটি পবিত্র রমজানের বিদায়ী রাত। কথায় বলে, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’। বাক্যটি রমজানের সিয়াম সাধনার বেলায়ও শতভাগ প্রযোজ্য। যেমন আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তাঁর উম্মতকে মাফ করা হয় রমজান মাসের শেষ রাতে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটি কি শবেকদর? তিনি বললেন, না, বরং এই কারণে যে, কর্মচারীর বেতন তখনই দেওয়া হয়, যখন সে তার কর্ম শেষ করে। (মিশকাত : ১৮৭১)

প্রভু হে! রমজান তো শেষ হয়ে গেল। আমাদের বেতনের খাতায় কি তাহলে কোনো বরাদ্দ নসিব হয়েছে? প্রথম দশ দিনে যখন রহমতের বরিষণে মসজিদগুলোয় উপচে পড়া ভিড় হয়েছিল, রাত জেগে ইবাদত ও সাহরিতে তোমার জেয়াফতের উৎসব ছিল, তখন কি আসামন থেকে এই গোনাহগারের দিকে একবার হলেও তাকিয়ে দেখেছ? মাঝখানের মাগফিরাতের দশকে যারা জীবনের গোনাহের ক্ষমা পেয়েছে, তাদের তালিকায় কি আমার নামটিও আছে? শেষ দশকে মহিমান্বিত শবেকদরে নূরের জলসায় ফেরেশতাদের পুণ্য পরশে কি রোমাঞ্চিত হয়েছে আমাদের অন্তর?

নাহ্, নিরাশ হব না। তোমার ওপর পূর্ণ ঈমান না থাকলে বছরের দীর্ঘতম দিনে পিপাসায় যখন কলিজা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখনও তোমার ভালোবাসা লাভের দাবিতে রোজায় অটল থেকেছি। তুমি বল, তোমার প্রবল ভালোবাসা না হলে উপবাসে ক্লান্ত শরীরে আরামের নিদ্রা হারাম করে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারাবিতে খতমে কোরআন পড়া ও শোনা কি সম্ভব হতো? বিরহী বন্ধুর অপেক্ষায় বিনিদ্র রাত পোহানোর মতো ঘুমের শীতল বিছানা ছেড়ে জেগেছি। সাহরিতে তোমার নেয়ামতের জেয়াফত খেয়ে আপ্লুত হয়েছি। বান্দা হিসেবে আমাদের শত দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে, আছে। কিন্তু তোমার ভালোবাসার দাবিতে আমার কোনো ভুল নেই। বড় আশায় বুক বেঁধেছি। তোমর হাবিব যে বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কেয়ামতে আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, প্রভু হে! আমি তাকে দিনের বেলা খানা ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। আতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে (বান্দা মুক্তি লাভ করবে)। (মিশকাত : ১৮৬৬)।

প্রভু হে! একটা দায়িত্ব ছিল। তাই ১১ রমজান থেকে এই কাগজের প্রথম পাতায় তোমার কথা, তোমার হাবিবের কথা সুন্দর করে সাজিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। দয়া করে কথার সৌন্দর্যের চেয়ে আমাদের মন ও জীবনকেই অধিক সুন্দর করে দাও। আমরা যারা পেশায় বা নেশায় দু’কথা লিখি, রমজানে তোমার রহমতের ছোঁয়ায় আমাদের কলমগুলোকে ঝরনায় পরিণত কর। তোমার জ্ঞানের মহাসমুদ্রের সঙ্গে এই ঝরনাকে যুক্ত করে দাও। আমাদের চিন্তা, মন ও জীবনকে আলোকিত কর।

এই পবিত্র মাসে যারা তোমার অনুগ্রহ পেয়ে ধন্য হয়েছেন, তাদের ভালোবাসার ছোঁয়ায় আমাদের হৃদয়ে উষ্ণতা দাও। প্রভু হে! তুমি আমাদের হয়ে যাও। আমাদেকে তোমার করে নাও। তোমার নূরের আলোকছটায় মনের যত কালিমা দূর করে দাও। পবিত্র ঈদকে দেশ, জনগণ ও গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য বরকতময় কর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত