ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আকাশে ঈদের চাঁদের প্রত্যাশা

আকাশে ঈদের চাঁদের প্রত্যাশা

দীর্ঘ এক মাস ‘সিয়াম’ সাধনার পর মুসলমানদের জন্য আনন্দের বারতা নিয়ে আসছে পবিত্র ঈদ। আজ সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে কাল শনিবার সারা দেশে উদযাপন করা হবে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে আজ চাঁদ না দেখা গেলে কাল রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করে রোববার শাওয়ালের প্রথম দিনে উদযাপিত হবে এ ঈদ। দেশজুড়ে চলছে ঈদের শেষ প্রস্তুতি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের জন্য আজ সন্ধ্যায় বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি এখন আকাশে ঈদের চাঁদের প্রত্যাশায় গোটা জাতি।

যদিও আজ শুক্রবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সে হিসাবে আগামীকাল শনিবার দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে ছোট-বড়, ধনী-গরিব সব মুসলমানের মাঝে এখন বইছে ঈদের আগাম আনন্দের জোয়ার। অনাবিল উৎসবের এ মুহূর্তকে বরণ করে নিতে সর্বত্র চলছে সাজসাজ রব। দেশের আকাশে শাওয়াল মাস তথা ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হবে কাজী নজরুল ইসলামের সেই জনপ্রিয় গান- ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ।’ ঈদের দিন সকালে ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে আদায় করবেন দুই রাকাত নামাজ। এর মধ্য দিয়েই মূলত শুরু হবে ঈদুল ফিতরের আনুষ্ঠানিকতা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, ১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি।

বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিম্নোক্ত টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। টেলিফোন নম্বর: ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭। ফ্যাক্স নম্বর: ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১।

তবে আজ চাঁদ দেখা যাক বা না যাক, শনিবার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে সারা দেশের মানুষ। সাধ্য মতো সবার নতুন জামা-কাপড় কেনার পর্বও প্রায় শেষ। যাদের বাকি আছে, তারাও আজকের মধ্যে সারবেন কেনাকাটা। কাপড়-চোপড়ের পাশাপাশি অতিথি আপ্যায়নের জন্য সেমাই-চিনিসহ নানা পদের খাবার সামগ্রী কেনার কাজও সবাই সেরে নিচ্ছেন সুযোগ মতো। গরিবদের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করতে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সামর্থ্যবান মুসলমানরা ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করবেন। এছাড়া সুবিধাজনক সময়ে আদায় করবেন জাকাত।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার সরকারি ছুটি একদিন বাড়িয়ে চার দিন করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শবেকদরের নির্ধারিত ছুটি। তাই বুধবার থেকেই টানা পাঁচ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের। কর্মস্থল ছেড়ে আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে অনেকেই এরই মধ্যে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছেন, আবার অনেকেই রওনা দেবেন। অবশ্য বেসরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ থেকে। তাই বিভিন্ন রুটে ঘরমুখো যাত্রীর চাপ বাড়বে আজ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ বা ভিন্ন কোনো বাহনে যাতায়াতে কমবেশি দুর্ভোগের শিকার হলেও তা যেন মলিন হয়ে যাচ্ছে আনন্দের জোয়ারে।

ঈদ রোববার হলে সরকারি ছুটি এক দিন বাড়বে। সে হিসেবে ঈদের প্রস্তুতির জন্য বাড়তি এক দিন সময় পাবেন সবাই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের সব ঈদগাহ ও বড় বড় মসজিদে নেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। নানা রং, পতাকা ও ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। সাজসজ্জার কমতি নেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বাসাবাড়িতেও।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণীতে দেশবাসী ও বিশ্ব মুসলিমের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর অপার খুশি আর আনন্দের বারতা নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে সমাগত। এ উপলক্ষ্যে আমি দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদ আমাদের একটি সর্বজনীন উৎসব। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে, গ্রাম-গঞ্জে, সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে। সব ভেদাভেদ ভুলে এ দিন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- এ প্রত্যাশা করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, মুসলিম জাহানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আমি দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক- এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক। বিশ্বের সব মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক- আজকের দিনে আমি মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকায় সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে ঈদের প্রধান জামাত জাতীয় ঈদগাহ থেকে পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৯টার জামাতের সঙ্গে একীভূত হবে এবং ওই জামাতে রাষ্ট্রপতি নামাজ আদায় করবেন।

এদিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৭টা, সকাল ৮টা, সকাল ৯টা এবং সকাল ১০টায় যথাক্রমে ঈদুল ফিতরের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ জামাত হবে। পঞ্চম জামাত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান প্রথম জামাতে এবং হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন। তৃতীয় জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী, চতুর্থ জামাতে বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম ইমামতি করবেন। তাদের কেউ অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

নামাজে অংশগ্রহণকারী সব সম্মানিত মুসল্লিকে মসজিদ ও মসজিদের আশপাশে কোনো ধরনের লাইটার, দিয়াশলাই বা যে কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ সঙ্গে নিয়ে না আসার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের দিন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনে এবং সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার প্রদর্শন করা হবে।

এছাড়া পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাতে নির্দিষ্ট সরকারি ভবন ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে।

ঈদ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো আজ বিশেষ ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। তবে ঈদের সরকারি ছুটি চলাকালে তিন দিন সব দৈনিক পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ থাকবে। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোয় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত