সম-সাময়িক রাজনৈতিক ভাবনা

বিএনপি আন্দোলন ছড়াতে পারছে না আমজনতার কাছে

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শামীম সিদ্দিকী

বিএনপি আন্দোলন ছড়াতে পারছে না আমজনতার কাছে। দলটির নেতারা সারাক্ষণ সরকার ‘উৎখাতের’ কথা বলছেন। আবার বুদ্ধিজীবীর ভাবসাব নিয়ে কিছু লোক রাতে আওয়ামী লীগ সরকারের দেয়া টেলিশনগুলোতে নানা বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে গলাবাজি করেই চলছেন। রাজনীতির মাঠ গরম করতে কৌশলে বিভিন্ন মহলকে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। আমজনতার নীরবতাই প্রমাণ করে, রাজনীতি সরব হলেও নীরব আমজনতা। বলা হচ্ছে- নীরব আমজনতা, সরব টকশো আর বিএনপি। বলা হচ্ছে ঈদের পরই হবে বিএনপির সরকারবিরোধী বড় আন্দোলন, যা কোনো কালেই হয়নি। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি বলছে, এ নির্বাচনে অংশ নেবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের এই ঘোষণা ঠিক থাকবে কি না, তা নিয়েই দলটির নেতাকর্মীদের সন্দেহ রয়েছে। যেমন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুড়মুড় করে তারা নির্বাচনে অংশও নিয়েছিল। দেশের ‘রাজনীতির মাঠ গরম করার চেষ্টা করা হলেও সরকারি দলও তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকায় মাঠ গরম না হলেও টেলিভিশনের পর্দায় যথেষ্ট গরম বক্তব্য মানুষ দেখছেন-শুনছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে আগুন নিয়ে খেলছে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির কোনো আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেয়নি। বিএনপি বিক্ষোভ, সমাবেশ মানববন্ধন, পদযাত্রা অবস্থান কর্মসূচি জনসম্মতি নিয়ে আন্দোলনটা করতে পারেনি। তাই রাতের অন্ধকারে বিএনপি বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করেই থেমে থাকেনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা জাতিসংঘেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। তবে যে দেশে নিজেদের কোনো মানবাধিকার নেই, তারা অন্যদেশকে কীভাবে পরামর্শ দেবে! সংবিধানকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেশে পরামর্শ ফরমায়েশি আমরা গ্রহণ করব না। ওবায়দুল কাদের বলেন, এদেশের গণতন্ত্র যেভাবে চলছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যত বাধা বিপত্তি কিংবা অপরাধী আসুক আমরা প্রতিহত, প্রতিরোধ করব। বিএনপির নেতৃত্বে যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা প্রতিহত করা হবে। বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘এটা বিএনপি মহাসচিবের মামার বাড়ির আবদার।’ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি যত ধরনের অপচেষ্টা করার তাই করছে। দেশি-বিদেশি যে বা যারা কোনো কারণ ছাড়াই শেখ হাসিনাকে অন্যায়ভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ২০০৬-০৭ কিংবা ওয়ান-ইলেভেনের মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেব না। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা তো মীমাংসিত একটি বিষয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন জাদুঘরে। বিএনপির নেত্রীই তো বলেছিলেন, শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নাকি নিরপেক্ষ নয়। তাহলে ক্ষমতাপাগল বিএনপি কোনো শিশু আর পাগলের অধীনে নির্বাচন চায় কি না, সেটাই প্রশ্ন? বিএনপির নানারকম আন্দোলনের হুমকি সরকারি দল আওয়ামী লীগ আমলে নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগও বসে নেই। আগামী নির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩০০ আসনে যোগ্য প্রার্থীর সন্ধানে নেমেছে আওয়ামী লীগ। তারা জরিপ চালাচ্ছে সংশ্নিষ্ট আসনগুলোতে। এরই মধ্যে অধিকাংশ আসনে জরিপ শেষ হয়েছে। শিগগিরই সম্পন্ন হবে সব আসনের জরিপ। সরকার বিরোধী আন্দোলন জমাতে বিএনপি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যেসব সভা-সমাবেশ করেছে, তাতে সরকারি প্রশাসন, পুলিশ বা ক্ষমতাসীন দল কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে দলটি বেশ বড় বড় সমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। এতে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি দেশে সহাবস্থানের রাজনীতির সুবাতাস প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। অবশ্য সরকারের এ সহিষ্ণুতা এবং বিএনপির রাজপথে নামার এ ‘সাহস’ কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের সংশয় এখনও দূর হয়নি। যা-ই হোক, নির্বাচনি দামামা বেজে উঠতে শুরু করেছে। বিএনপি যদিও মুখে বলছে, তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি দলীয় সূত্রগুলো জানায় ভেতরে ভেতরে তারা নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে তারা। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, লন্ডন থেকেই পছন্দের ব্যক্তিদের আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আগাম সংকেত দিয়ে রাখছেন। সরকারি দলের একাধিক সূত্র জানায় আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের নানারকম মন্তব্য দৌড়ঝাঁপ নির্বাচন সামনে রেখে সবসময়ই হয় আগামীতেও হবে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের মাথা ঘামানা পাত্তা দেবে না সরকারি দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচন যথাসময়েই হবে। বিএনপির কর্মসূচি যত কঠিন করার চেষ্টা করবে, সরকারি দল আওয়ামী লীগও তার কৌশল নিয়ে সামনের দিকেই এগিয়ে যাবে বলে একাধিক সূত্র আলোকিত বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন রাজপথের চেয়ে টেলিভিশনের টক শোতেই বেশি আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, আন্দোলন ছড়াতে পারছে না আমজনতার কাছে।