চট্টগ্রামে ঈদবাজারে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ধুম

মার্কেটগুলো ভারতীয় পণ্যে সয়লাব

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর ঈদ মার্কেটে চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। ঈদের বেচাকেনা এবার বেশ জমেছে। এবার হতাশ থাকা বিক্রেতারা যেন আশার আলো দেখলেন ক্রেতাদের দেদার কেনাকাটায়। গত বুধবার থেকে হঠাৎ করেই ঈদের কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। গতকাল ছিল প্রতিটি মার্কেটে উপচে পড়া ভিড়। ফুটপাতের দোকানেও পা ফেলার স্থান ছিল না। শেষ মুহূর্তে নতুন পোশাক কিনতে বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে নারী পুরুষ শিশু সব শ্রেণির ক্রেতা ভিড় করেন। বিক্রেতারাও বলেছেন গত কয়েক দিনের দিনের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় তারা অনেক খুশি বলেও জানালেন।

নগরীর চকবাজার ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড়। আছে নানা ধরনের পোশাকের চাহিদা। শেষ মুহূর্তে পছন্দের পাঞ্জাবিটি বেছে নেন অনেকে। সেই সাথে অন্য দিনগুলোতে পরার জন্য আরামদায়ক হাফ শার্ট, ফুল শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়াও রাখছেন কেনাকাটার তালিকায়। পুরুষদের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে এসব পোশাকে এই সময় বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছেন দোকানিরা। নির্ধারিত পোশাকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতারা। ঈদের পোশাকগুলোর ডিজাইনের চাহিদা ঈদের পর না থাকার আশঙ্কাসহ নানা কারণে বিক্রেতারা ডিসকাউন্ট দিচ্ছেন, যাতে ঈদের সময় বেশি বিক্রি করে পণ্যগুলোর স্টক ক্লিয়ার করা যায়। এছাড়া নারীদের শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ এবং বাচ্চাদের পোশাকেরও গড় দাম নির্ধারণ করে দিয়ে বিক্রি করেছেন দোকানিরা।

জামাল উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, এ ক’দিন খুব গরম ছিল। এছাড়া ছুটি ছিল না বলে রোজা রেখে কেনাকাটা করা সম্ভব। কিন্তু আবহাওয়া কিছুটা ভালো। তাই মার্কেটে এলাম কেনাকাটা করতে। এখন গরমে আরাম হয় এমন কিছু টি-শার্ট দেখছি। একটা পাঞ্জাবি নিলাম ঈদের দিনে নামাজ পরার জন্য। নিউমার্কেটের ওয়েস্টউডের ব্রান্ড ম্যানেজার মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, গত দিনগুলোর তুলনায় কয়েক দিন মোটামুটি বেচাকেনা ভালো হয়েছে। আমরা আমাদের পণ্যগুলোতে ডিসকাউন্ট দিয়ে দিয়েছি। আমাদের নতুন প্রডাক্ট যেগুলো ২ হাজার ৬৫০ টাকা, ২ হাজার ৫৫০ টাকা ছিল সেগুলো আমরা ১ হাজার ৫০০ করে বিক্রি করেছি। যেহেতু আমাদের বিক্রি কম এবং কিছু প্রডাক্টের সাইজ সিরিয়াল ভেঙে গেছে। তাই সর্বোচ্ছ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়টা রেখেছি। তবে এই ছাড়টা কেবল পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ইনফিনিটির সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ যোবায়ের আহমদ বলেন, এখন তুলনামূলক বিক্রি ভালো। মানে এবারের বিক্রিটা গত দিনের তুলনায় বেশি বলা যায়। গরমের কারণে টি-শার্ট টাইপের প্রডাক্ট বেশি চলছে। তবে আমাদের প্রডাক্টগুলো সবই সামার বেইজড।

এদিকে চট্টগ্রামের ঈদবাজারে চলছে ভারতীয় পোশাকের দাপট। মার্কেট, শপিংমল, হাটবাজারে থরে থরে সাজানো ভারতীয় পণ্য। বৈধ অবৈধ পথে আসা শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিসসহ নানা মানের পোশাকের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দেশি পোশাক। তাতে মার খাচ্ছে দেশি ছোট বড় শিল্প। লোকসান গুণছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা।

ভারতীয় পোশাকের ভিড়ে দেশি পোশাক খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই। শাড়ি, ত্রিপিস, লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে মেয়েদের পোশাকের পুরোটাই ভারতীয় পণ্যের দখলে। ভারত থেকে আসা শাড়ির দাপটে কোণঠাসা জামদানি, কাতানসহ দেশের ঐহিত্যবাহী সব ব্র্যান্ডের শাড়ি। সুতার শাড়িতেও ভারতের আধিপত্য। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় চোরাকারবারিরাই উদ্যোগী হয়ে একটা দুটি চালান সরবরাহ করে স্থানীয় বাজারে। সেই সঙ্গে বাজারে চলে আসে বড় চালানগুলো। প্রতি বছরই ঈদ ও পূজাকে টার্গেট করে অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে শত শত কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অর্থনৈতিক মন্দায় এবার এমনিতেই কেনাবেচা তেমন নেই। তার ওপর ভারতীয় পোশাকের আধিক্য বাজার পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। বেশিরভাগ পোশাক চোরাই পথে এসেছে। এতে সরকারের ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হয়েছে। তাতে এসব পোশাকে খরচ কম পড়েছে। অন্যদিকে যারা দেশি পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন তাদের খরচ বেশি হয়েছে। আবার কেনাকাটাও কম হওয়ায় তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

তবে ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে এ বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। তার ৮০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। কিন্তু এসব পণ্য বৈধ পথে আসেনি। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। আর এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হুন্ডিতে। এভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিদেশি পোশাক দেদার মিলছে নগরীর তামাকুমন্ডি লেইন, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, টেরি বাজারসহ বিভিন্ন বিপণী বিতানে।