ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত

পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত

যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে গত শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে।

দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের পর দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে তাদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন শুরু করেন।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো-কোটি মানুষ গত শনিবার সকালে ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে সামিয়ানার নিচে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। বিভিন্ন স্থানে হালকা ও ভারি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদের জামাত হাইকোর্ট-সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উৎসব আমেজে সেখানে নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামেয়া আরাবিয়া মিরপুর, ঢাকার মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জাতীয় ঈদগাহের এ জামাতের আয়োজন করে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঈদগাহে পৌঁছলে সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তাকে স্বাগত জানান। এই প্রধান জামাতে মহিলা ও বিদেশি কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল।

জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। ঈদগাহে সব প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।

মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হয়। প্রধান এই জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র‍্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।

রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারও পরপর পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামি’আয় ঈদের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেট-সংলগ্ন মাঠে সাড়ে ৮টায় ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দুটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া রাজধানীর মীরবাগ জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পল্লবীর বায়তুল আমান জামে মসজিদে দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর-১২ নম্বরে হারুন মোল্লা ঈদগাহ্ মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকার বাইরে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে।

প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জামাতের পর বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এটি ছিল ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম ঈদ জামাত।

এদিকে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রখর রোদ আর তাপপ্রবাহেও ময়দানে মুসল্লিদের ঢল নামে। এবারও একসঙ্গে ৬ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন বলে আয়োজকরা জানান। ৯টায় শুরু হওয়া এই জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ’র অব্যাহত শান্তি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ূ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দেন।

ঈদের দিন সকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বিশিষ্ট ব্যক্তি, কূটনীতিক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানান। ঈদ উপলক্ষ্যে গত বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যান। ঈদ উদ্‌যাপন শেষে অনেকেই আবার এরই মধ্যে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন।

পবিত্র দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছিল।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।

এদিকে ঈদের দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ কারাবন্দি মানুষের সঙ্গে স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে ভিড় জমান। পবিত্র ঈদ উৎসব উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করে।

যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদযাপন করে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এদিকে ঈদের দিন সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, চন্দ্রিমা উদ্যান, লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতিল ঝিল, শিশু পার্ক, বিমান জাদুঘরসহ সব বিনোদন কেন্দ্রগুলো নানা বয়সি মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল। কখনো রোদের খরতাপ আবার কখনো বৃষ্টি- এমন আবহাওয়াও ঈদ আনন্দে বাধা হতে পারেনি।

এদিকে সারা দেশে মুসলিম ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বী লোকেদেরও ঈদ উদযাপন করতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত