কক্সবাজার উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার জেলার নাজিরারটেক উপকূলে একটি ট্রলারের কোল্ডস্টোর থেকে গত রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নামহীন ট্রলারটি কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে আসার পর ক্লোডস্টোর চেক করতে গিয়ে লাশগুলো দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন দমকল বাহিনীর লোকজন।

ফায়ার সার্ভিসের হেড অফিসের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, সাগরে ভাসা একটি ট্রলার দেখে কূলে ফেরত অপর ট্রলার বিশেষ ব্যবস্থায় টেনে ট্রলারটি গত শনিবার ভোরেই নাজিরারটেক মোহনার তীরে নিয়ে আসে। ভাটা হওয়ার পর সন্ধ্যায় কোল্ডস্টোর চেক করতে গিয়ে মানুষের পা দেখতে পাওয়া যায়। তখনই পুলিশকে খবর দেয়া হয়। রাতে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। রোববার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতায় লাশগুলো উদ্ধার শুরু করা হয়।

কক্সবাজার দমকল বাহিনীর স্টেশন ইনচার্জ মোনায়েম বিল্লাহ জানান, বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ট্রলারটির কোল্ডস্টোর থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

স্বজনরা শনাক্ত করলেও ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে : পুলিশ

বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলারের হিমঘর থেকে উদ্ধার হওয়া ১০ জনের লাশ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। স্বজনরা জানিয়েছেন, গত ৭ এপ্রিল সাগরে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া কক্সবাজারের মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা এরা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, মহেশখালী ও চকরিয়া থেকে নিখোঁজ থাকা পরিবারের আত্মীয়-স্বজনরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে এসে ১০ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন। তবে এ পরিচয় প্রাথমিক। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপরই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

স্বজনরা এসে এ পর্যন্ত যে ১০ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন, এর তথ্য মতে, এরা হলেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমান গনি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।

লাশ শনাক্ত করতে আসা ওসমান গণির মা জোহরা বেগম জানিয়েছেন, পরিবারের কাউকে না বলে তার ছেলে ওসমান গণি সাগরে মাছ শিকারে যায়। কিন্তু কয়েক দিন পর শুনে ট্রলারটি জলদস্যূর কবলে পড়ে। এরপর তার কোনো খোঁজ মিলছিল না। পরে গত রোববার উদ্ধার হওয়া লাশগুলোতে তার সন্তান আছে কি না দেখতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে গেলে শার্ট ও প্যান্ট দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর বলেন, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ, মুসা আলীর ছেলে ওসমাণ গনি, সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ ও মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির এরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সবাই নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজ এই ৬ জনই আমার আত্মীয়-স্বজন। পরনে কাপড় দেখে এখন পর্যন্ত ছয়জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘এরকম একটি খবর আমাদের কাছে ছিল যে, ১০ থেকে ১২ দিন আগে কিছু লোক সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছে কিংবা সাগরে মাছ ধরার জন্য বের হয়েছে বলে তাদের বাড়িতে বলেছে। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি। যদিও এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কিন্তু এ ধরনের তথ্য মাঝে কিছু শুনেছিলাম।’

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আরো বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর এটি কোন ধরনের হত্যাকাণ্ড; কারা এটি ঘটিয়েছে বা কোথায় ঘটিয়েছে তা উদ্ঘাটন করা হবে।

এদিকে, গতকাল বেলা ১২টার দিকে পুলিশের চট্টগ্রামের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিআইডির ডিআইজি হাবিবুর রহমান কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এসেছেন। ওই সময় হাসপাতালে থাকা স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করেন তারা।