ফিরোজায় স্বজনদের সঙ্গে খালেদার ঈদ উদ্‌যাপন

১০ মাস পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

গত ৩ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ স্বজনদের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঢাকায় অবস্থানরত ভাইবোনদের পাশাপাশি এবারের ঈদে তার সঙ্গ দিতে লন্ডন থেকে এসেছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি এবং তার দুই মেয়ে জাহিয়া ও জাফিয়া।

তাই পুরোপুরি সুস্থ না হলেও এবারের ঈদে কিছুটা বাড়তি উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে দুই নাতনি, পুত্রবধূসহ ভাই-বোনদের নিয়ে দুপুরের খাবার খান খালেদা জিয়া। এছাড়া ঈদের দিন লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্র মতে, ঈদের দিন সকালে খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারসহ নিকট স্বজনরা তার বাসা ফিরোজায় আসেন।

পরে রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় দোতলায় সাক্ষাৎ করেন। প্রায় ১০ মাস পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই সাক্ষাৎ করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কারাবন্দি অবস্থায়ই ২ বছরে চারটি ঈদ পার করেন তিনি।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়া হয় তাকে।

এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ থাকছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৭ বয়সি খালেদা জিয়া। বিভিন্ন সময়ে গুরুতর অস্স্থু হয়ে হাসপাতালের বেডে দিন পার করেছেন তিনি। দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও শর্ত অনুযায়ী দলীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত আছেন খালেদা জিয়া। এমনকি এসময়ে ঈদের দিন ছাড়া দলের নেতাকর্মীসহ অন্যরা তার সাক্ষাৎ পান না। সবশেষ ২০২২ সালের কোরবানির ঈদের দিন ১০ জুলাই খালেদা জিয়ার দেখা পেয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শনিবার ঈদুল ফিতরের রাতে গুলশানের বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির আট সদস্য।

রাত ৮টা থেকে ১ ঘণ্টার কিছুটা বেশি সময় তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। এ সময় কারাগারে আটক দলের নেতাকর্মীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়াসহ নানা বিষয়ে জানতে চান তিনি।

সাক্ষাৎ শেষে খালেদা জিয়ার বাসা ‘ফিরোজার’ সামনে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাশাপাশি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণ যেভাবে কাজ করছে, তা অব্যাহত রাখতেও বলেছেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কী বার্তা দিয়েছেন- এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, বার্তা হচ্ছে এটা যে, দেশবাসী যেন ভালো থাকে তাদের মঙ্গলের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য তারা যেভাবে কাজ করছে, সেই কাজ যেন তারা করে সেটাই তিনি বলেছেন।

তিনি বলেন, সৌজন্য এই সাক্ষাতে তিনি আমাদের কুশল জানতে চেয়েছেন এবং সমগ্র দলের যারা কারাগারে আছেন তাদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাদের যে কষ্ট সে সম্পর্কে তিনি অবহিত আছেন। দেশের হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা সেগুলো সম্পর্কেও তিনি অবহিত আছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনীতির নাজুক অবস্থা এবং টানা তাপদাহের বিষয়েও তিনি অবহিত রয়েছেন বলে নেতাদের জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

বৈরি আবহাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বৈর্শ্বিক জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে, তা নিয়েও খালেদা জিয়া কথা বলেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

প্রায় ১০ মাস পর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন যে, উনি কারাগারে যাওয়ার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ আমাদের অনেক সীমিত ছিল। তিনি বাসায় আসার পরে এই ঈদের দিনগুলোতে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। আমাদের সঙ্গে আলোচনা অনেকদিন পর সেজন্য সবাই কিছুটা আবেগ আপ্লুত ছিলাম। আমরা আশা করি যে, খুব শিগগিরই তার সঙ্গে আরো ঘনঘন সাক্ষাৎ হবে এবং সামনে বেরিয়ে আসবেন। মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখনও বেশ অসুস্থ, এখনও তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার সাহেবরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন।

এদিন দলের মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান।