পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে সরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, বিমা ও শেয়ারবাজার খুলেছে গতকাল সোমবার। তবে অফিস খুললেও খুব একটা কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। বিশেষ করে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের আমেজ এখনো কাটেনি। প্রথম কার্যদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার কম ছিল।
ঈদুল ফিতরে একদিনের সাধারণ ছুটিসহ মোট পাঁচ দিনের টানা ছুটি শেষে গতকাল সোমবার থেকে খুলেছে সরকারি অফিস। তবে ঈদ আমেজ এখনও কাটেনি। ঈদের শুভেচ্ছা ও কৌশল বিনিময়ের পর অনেককে খোস গল্প করতে দেখা যায়। সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য অধিদপ্তর, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনজনকে দেখা যায়। অনেক কক্ষে চেয়ার, টেবিল ফাঁকা পড়ে রয়েছে। প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে ঈদের আমেজ বিরাজ করে। সকালে অফিসে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কোলাকুলি করেন একে অপরের সঙ্গে।
এছাড়া সচিবালয়ে গাড়ি রাখার স্থানগুলোও অন্যান্য দিনের তুলনায় ফাঁকা। ৪ নম্বর ভবনের দক্ষিণ, ৬ নম্বর ভবনের উত্তর পাশের পার্কিংয়ের স্থানসহ বিভিন্ন জায়গা ফাঁকা ছিল। সচিবালয়ের করিডোরগুলো, লিফটগুলোর সামনে ভিড় ছিল না। আর সচিবালয়ে দর্শনার্থী কক্ষটিও ছিল ফাঁকা আর গাড়ি রাখার স্থানগুলো অন্যান্য সময়ের মতো গাড়িতে ভরা ছিল না।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অফিস খুলেছে, তবে অনেকেই তিন দিন ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে টানা সাত দিনের ছুটি উপভোগ করছেন। ঈদের পরে প্রথম কর্মদিবস মোটামুটি এমনই হয়ে থাকে। খুব একটা কাজ হয় না, আবার অনেকেই ছুটিতে থাকেন। যারা অফিসে এসেছেন তাদেরও গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। তাই আগামী সপ্তাহ থেকে সচিবালয়ের অফিস পুরোদমে শুরু হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাস্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রায় অর্ধেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনও আসেনি। যারা দূরে গেছেন তারা কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবেন। অনেক কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন। ঈদের ছুটির সঙ্গে অনেকে বাড়তি ছুটি নেওয়ায় অফিস সেভাবে জমে উঠেনি। আশা করছি, দুয়েক দিনের মধ্যে অফিসে কর্মতৎপরতা বাড়বে।
নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খানন বলেন, ঈদের ছুটি শেষ করে অফিস করছি। বিশেষ কোনো কাজ না থাকায় ঐচ্ছিক ছুটির প্রয়োজন হয়নি। ঈদের পরে অনেকেই সাধারণত অতিরিক্ত ছুটিতে থাকেন, কিন্তু দায়িত্ব কখনো আমাদের ছুটি দেয় না।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের হিসাব রক্ষণ অফিসার (ডিডিও) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অফিস আওয়ারে আগেই আসছি। মাস শেষ বেতন, ভাতা দিতে হবে তাই চলে এসেছি। আমাদের দপ্তরে পাঁচজন এর মধ্যে একজন ছুটিতে আছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদের ছুটি বাড়িতে যাইনি। ঈদ এখানে ভালো কেটেছে। আমরা যে কক্ষে বসি সেখানে চারজনের মধ্যে এসেছে দুইজন। অন্য কলিগরা বাড়ি গেছে, ছুটিতে আমরা এখানেই কাজ করছি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন ছুটিতে আছেন। তার অফিস সহকারী মো. নাজমুল হোসেন বলেন, উপস্থিতি কম, অনেকেই ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন। কাজের তেমন চাপ নেই, তাই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে দিয়ে দিন শুরু হয়েছে। এই সপ্তাহের বাকি কর্মদিবস এভাবেই উপস্থিতি কম থাকবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে ২১, ২২, ২৩ এপ্রিল ঈদের ছুটি ছিল। এর আগে ২০ এপ্রিল বিশেষ ছুটি থাকায় এবার ঈদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টানা চার দিন ছুটি ভোগ করেছেন। তবে এবার ঈদের ছুটির দুই দিন ২১ ও ২২ এপ্রিল পড়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে। ছুটি শেষে আজ অফিস শুরু হয়।
