ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ৭২ হাজার

গুজব ও অনৈতিক পথ পরিহারের আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ৭২ হাজার

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ৩০ এপ্রিল। দেশের ৯টি সাধারণ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবারের পরীক্ষায় বসবে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী ও বাকিরা ছাত্র। গত বছরের তুলনায় এবার ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে, যার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬০৯ জন। এ পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘জাতীয় মনিটরিং ও আইন শৃঙ্খলা’ সংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব কথা জানান। এ সময় তিনি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব না ছড়ানোসহ সব ধরনের অনৈতিক পথ পরিহারের আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে থাকলেও বৈশ্বিক অতিমারি কোভিড-১৯ এর কারণে গত বছরের ন্যায় এ বছরও যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষার বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এবার মোট ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৩ হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৭৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী রয়েছে।

৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২ হাজার ২৪৪টি কেন্দ্রে ১৭ হাজার ৭৮৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭০ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫।

মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৭১৬টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাখিল পরীক্ষার্থী সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৩ এবং ছাত্রী ১ লাখ ৫১ হাজার ১২৮ জন।

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৮৫০টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৯২৭টি প্রতিষ্ঠানের এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থী ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৭ হাজার ৩৩৪ ও ছাত্রী ৩০ হাজার ৪৩৩ জন।

গত বছরের চেয়ে এবার ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০৭টি প্রতিষ্ঠান এবং ২০টি কেন্দ্র বেড়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী। তথ্য অনুযায়ী, এবার পরীক্ষার্থী বৃদ্ধির মধ্যেও যশোর বোর্ড, বরিশাল বোর্ড এবং সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এছাড়া এবার বিদেশের আটটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী রয়েছে ৩৭৪ জন।

পরীক্ষা সূচারুভাবে সম্পন্নের জন্য গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায় এবং শেষ হবে দুপুর ১টায়। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী এর পরে কেন্দ্রে উপস্থিত হলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।

দীপু মনি আরো জানিয়েছেন, ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে; এজন্য নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। বরাবরের মতো কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না; শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন (তবে ছবি তোলা যায় না এমন ফোন)। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা (পরীক্ষার্থী, কক্ষ প্রত্যবেক্ষক, মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম, বোর্ডের পরিদর্শন টিম, জেলা ও উপজেলা পরিদর্শন টিম, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) ব্যতীত অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।

বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্তরা এবং যাদের হাত নেই- এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের বরাবরের মতো শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ থাকছে। তাদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এছাড়া, প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম এবং সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে এ পরীক্ষা হবে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হবে।

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর তত্ত্বীয় পরীক্ষা ৩০ এপ্রিল থেকে ২৩ মে’র মধ্যে এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৪ মে থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে মে মাসের ৩০ তারিখে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু ৩০ এপ্রিল, শেষ হবে ২৫ মে। আর ২৭ মে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়ে ৩ জুন শেষ হবে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ৩০ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৩ মে শেষ হবে। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু ২৫ মে, শেষ হবে জুন মাসের ৪ তারিখে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

শিক্ষা বোর্ডসমূহের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো অনলাইনে সার্বক্ষণিকভাবে তথ্যাদি আদান-প্রদান করবে।

নজরদারিতে থাকবে বিজি প্রেস, ফেসবুক, মোবাইল লেনদেন : এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানে থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নজরদারিতে রাখবে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে প্রশ্নফাঁস নিয়ে যেকোনো ধরনের গুজব প্রতিরোধে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেন নজরদারিতে রাখা হবে।

আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস নিয়ে গুজব এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেন নজরদারি রাখা হবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) প্রতিনিধিরা।

বিটিআরসি প্রতিনিধি জানান, যেসব গ্রুপ বা ব্যক্তি ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়াবে বা প্রশ্নফাঁস করে দেবে বলে প্রচারণা চালাবে তাদের আইডি শনাক্ত করে পুলিশের বিশেষ শাখা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া হবে। এ রকম গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের মোবাইল লেনদেনও নজরদারিতে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করা হবে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে। যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া প্রশ্ন ছাপানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, প্রশ্নফাঁসের গুজবে আপনারা কান দেবেন না। প্রশ্নফাঁস রোধে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। যারা এসব গুজব বা অপপ্রচার চালাবে, তাদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করবেন। কোনো অনৈতিক পথে পা দেবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ছাড়াও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগোর সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারসহ বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত