ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এসএসসি পরীক্ষা শুরু রোববার

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার

আগামী রোববার থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। দেশের ৯টি সাধারণ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবারের পরীক্ষায় বসবে ২৯ হাজার ৭৯৮টি প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী। ৩ হাজার ৮১০ টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি এ পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কঠোর নজরদারিতে থাকবে বিজি প্রেস, ফেসবুক ও মোবাইল লেনদেন। কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়ালেই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন সরবরাহ থেকে শুরু করে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যাতে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রের বাইরে ছড়াতে না পারে, সেজন্য নানা বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সামনে রেখে গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘জাতীয় মনিটরিং ও আইন শৃঙ্খলা’ সংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় তিনি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব না ছড়ানোসহ সব ধরনের অনৈতিক পথ পরিহারের আহ্বান জানান।

পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নফাঁসের গুজবে আপনারা কান দেবেন না। প্রশ্নফাঁস রোধে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। যারা এসব গুজব বা অপপ্রচার চালাবে তাদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করবেন।

এদিকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে দীর্ঘ এক মাস কোচিং সেন্টার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কোচিং কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কেউ কেউ বলেন, অতীতে দেখা গেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ জড়িত থাকে। তাই প্রশ্নপত্র ছাপা, সরবরাহ ও কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কড়া নজরদারিতে রাখা জরুরি। এক্ষেত্রে ঢালাওভাবে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা যেমন বঞ্চিত হয়, তেমনি এ সময়ে কোনো কোচিং না করিয়েই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি আদায় করে থাকে কর্তৃপক্ষ।

তবে শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টদের দাবি- অতীতে কোচিং সেন্টারের মাধ্যমেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবসহ নানা অপতৎপরতা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে কোচিং সেন্টারের মাধ্যমেই দ্রুত তা শিক্ষার্থীদের হাতে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকে। তাই প্রশ্নফাঁস ঠেকানোর সম্ভাব্য সব পথ বন্ধ করতেই কোচিং বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সরকার।

যদিও সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই নানা কৌশলে কিছু কোচিং সেন্টার তাদের কার্যক্রম চালু রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

নজরদারিতে থাকবে বিজি প্রেস, ফেসবুক, মোবাইল লেনদেন : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নজরদারিতে রাখবে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে প্রশ্নফাঁস নিয়ে যেকোনো ধরনের গুজব প্রতিরোধে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেন নজরদারিতে রাখা হবে।

এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিটিআরসি পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস নিয়ে গুজব এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেন নজরদারি রাখা হবে।

বিটিআরসি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যেসব গ্রুপ বা ব্যক্তি ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়াবে বা প্রশ্নফাঁস করে দেবে বলে প্রচারণা চালাবে তাদের আইডি শনাক্ত করে পুলিশের বিশেষ শাখা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া হবে। এ রকম গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের মোবাইল লেনদেনও নজরদারিতে থাকবে।

প্রফেসর তপন কুমার সরকার আরো বলেন, সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করা হবে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে। যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অঙ্কের টাকা লেনদেন হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া প্রশ্ন ছাপানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজি প্রেসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে।

প্রশ্নফাঁস রোধে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় : আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় ২৩টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষা চলাকালীন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল ব্যাংকিং নজরদারি করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- এবার পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হবে এবং শেষ হবে দুপুর ১টায়। পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী বিলম্বে কেন্দ্রে উপস্থিত হলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।

পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রশ্নফাঁসের গুজবমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেন্দ্র সচিব ব্যতীত পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না।

ট্রেজারি-থানা হতে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাঁচ যুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।

প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ প্রদান করা হবে। ট্যাগ অফিসার ট্রেজারি, থানা হেফাজত হতে কেন্দ্র সচিবসহ প্রশ্নপত্র বের করে পুলিশ প্রহরায় সকল সেটের প্রশ্ন কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট পূর্বে প্রশ্নের সেট কোড ঘোষণা করা হবে। সে অনুযায়ী কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বিধি অনুযায়ী খুলবেন।

প্রশ্ন ছাপানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজি প্রেসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে। জেলার ক্ষেত্রে ট্রেজারি এবং উপজেলার ক্ষেত্রে থানায় প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক সংরক্ষণ করতে হবে।

ট্রেজারিতে রক্ষিত প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর তিন দিন পূর্বে দিন ভিত্তিক ও সেটভিত্তিক সর্টিং করে সিকিউরিটি খামে সংরক্ষণ করতে হবে। পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করা হবে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের নিকট উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তি যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে।

পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে সর্ব সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। কোনো প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক কোনোভাবে পরীক্ষায় বেআইনি কোনো কাজ করলে, সে প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষী শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তার এমপিও স্থগিত করা হবে।

ট্রেজারি/থানা থেকে প্রশ্ন কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য দূরত্ব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করে প্রশ্নপত্র আনতে হবে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।

ঢাকা মহানগরীতে ট্যাগ অফিসার মনোনয়ন দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, সে অনুযায়ী মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রয়োজনীয়সংখ্যক কলেজ/স্কুলের শিক্ষক মনোনয়ন দিয়ে তালিকা জেলা প্রশাসক, ঢাকার নিকট প্রেরণ করবেন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে থাকলেও বৈশ্বিক অতিমারি কোভিড-১৯ এর কারণে গত বছরের ন্যায় এ বছরও যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ২০২৩ সালের সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে এ পরীক্ষা হবে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত