ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লবণাক্ত চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি

চরম দুর্ভোগে নগরবাসী

চরম দুর্ভোগে নগরবাসী

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে জোয়ারে সময় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। সেই পানি শোধন করে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করছে ওয়াসা। এতে পানির লবণাক্ততায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের অভিযোগ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষও। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি। কর্মকর্তারা বলছেন, পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ যাতে কম থাকে সেই চেষ্টা চলছে। কিছু নির্দেশনা মেনে পানি শোধন করা হচ্ছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘায়িত হলে এই সংকট সহসা কাটবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া কমিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (পিডিবি)। তাই উজানের পানি কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি হালদায় প্রবেশ করছে। এতে মোহরা পানি শোধানাগার প্রকল্পে লবণাক্ত পানি পরিশোধন করতে হচ্ছে। পানি পরিশোধনের পরও কিছু লবণাক্ততা থেকে যাচ্ছে ওয়াসার পানিতে। কিছুদিন ধরে এই সংকট দেখা যাচ্ছে। আমরা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নগরবাসীকে তা জানিয়েছি। প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে নদীতে পানি বাড়বে। এসময় পানিতে লবণাক্ততার হারও কমবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৪৬ থেকে ৪৮ কোটি লিটার। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪টি পানি শোধানাগার প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৪৭ কোটি লিটার পানি। আরও একটি পানি শোধানাগার প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়া পানি শোধানাগার ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ থেকে দৈনিক পাওয়া যায় ২৮ দশমিক ৬ কোটি লিটার পানি। মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে পাওয়া যায় ৯ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি শোধনাগার থেকে পাওয়া যায় আরও ৯ কোটি লিটার। হালদা নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোহরা পানি শোধানাগার প্রকল্পের উৎস থেকে পানি সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে মোহরা পানি শোধানাগার থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে সাড়ে ৭ থেকে ৮ কোটি লিটার পানি।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি কম ছাড়ায় হালদা নদীতে মিঠা পানির পরিমাণ কমে গেছে। হালদায় উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানি হালদায় প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট থেকে আমরা মোহরা প্রকল্পের পানি সংগ্রহ করি সেখানে বর্তমানে লবণের পরিমাণ প্রতি লিটারে ১৭০০ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিক সময়ে এই লবণের পরিমাণ থাকে প্রতি লিটারে ১০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মোহরা প্রকল্পের পানি পরিশোধন এবং অন্যান্য শোধানাগার থেকে পানি এনে মেশানোর পরও সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ প্রতি লিটারে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম। বৃষ্টি হলে চলমান সংকট থাকবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর কাট্টলী, সিটি গেট, হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায় গত ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

সিটি গেট এলাকার লোকজন অভিযোগ করে বলেন, ওয়াসার পানি মুখে নেয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পাশের বাড়ি থেকে টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে দৈনন্দিন কাজ সারছি।

হালিশহর এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, লবণাক্ততার কারণে সমস্যায় আছি। পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ওয়াসার কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনও সমাধান হয়নি।

লবণাক্ত পানি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর না দাবি করে চট্টগ্রাম ওয়াসার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ব্যবহারের সময় লবণাক্ততা অনুভব হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু তা মানবস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে নগরে যে পানি সরবরাহ করা হয় তা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী শতভাগ জীবাণুমুক্ত।

এদিকে ওয়াসার পানিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততার কারণে নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা খাওয়ার অযোগ্য পানি সরবরাহ করছে। এ অবস্থায় বাইরের বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়াও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রায় এক মাস ধরে ওয়াসার পানিতে লবণ আসছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার লোকজন। প্রথমদিকে লবণের মাত্রা কম থাকলেও দিন দিন বাড়ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে সুপেয় পানির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। নতুন করে বিক্ষোভের উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।

ওয়াসা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসা রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারের দুটি ইউনিটে পানি শোধন করা হয়। মোহরা ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের মাধ্যমেও পানি শোধন হয়। কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি নিয়েই এসব শোধনাগারে পানি শোধন হয়। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ কোটি লিটার। অপর দুটির ক্ষমতা ৯ কোটি লিটার করে। এর বাইরে ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে পানি গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। লবণাক্ততা ঠেকাতে জোয়ারের সময় প্রতিদিন দুই দফায় ৩ ঘণ্টা করে ৬ ঘণ্টা মোহরা ও মদুনাঘাট শোধনাগারে পানি উত্তোলন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে লবণাক্ততা কিছুটা কমলেও পানির মোট উৎপাদন কমে গেছে।

ওয়াসার কর্মকর্তারা বলেন, নগরীর যেসব এলাকায় মোহরা ও মদুনাঘাট শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ করা হয় সেসব এলাকায় লবণাক্ত পানি যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কাট্টলী, পতেঙ্গা, সাগরিকা, সিরাজউদদৌলা রোডের আশপাশের এলাকা, কালামিয়া বাজার, মাঝিরঘাটসহ কিছু এলাকা। মোহরা শোধনাগারের পানিতেই লবণাক্ততা বেশি মিলছে। মদুনাঘাট শোধনাগারের পানিতে অল্প পরিমাণ লবণাক্ততা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত