ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ ভয়াল সেই ২৯ এপ্রিল

৩২ বছরেও সুরক্ষিত হয়নি উপকূলীয় বেড়িবাঁধ

৩২ বছরেও সুরক্ষিত হয়নি উপকূলীয় বেড়িবাঁধ

আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এক দুঃসহ স্মৃতি ও শোকাবহ দিন এটি। ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহতম প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ৩২ বছর পরও এখনো অরক্ষিত চকরিয়া-পেকুয়া অংশের উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ। ফলে এখনো বড় ধরনের জোয়ার আসলেই তা সহজেই ঢুকে পড়ে দুই উপজেলার লোকালয়ে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের খবর শুনলেই এখনো আতঙ্কে দিন কাটে স্বজন হারানো সেই লাখো মানুষের।

১৯৯১ সালের রাতের সেই ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়েছিল উপকূলের লাখো মানুষের প্রাণ। তাদের মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলাতেই অন্তত ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। প্রাণ যায় লাখ লাখ গবাদি পশুর। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ উপকূলীয় এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিণত হয় বিরাণভূমিতে।

দিনটি ঘিরে উপকূলীয় এলাকার মানুষ তাদের হারানো স্বজনদের এখনো স্মরণ করে। ২৯ এপ্রিল রাতের সেই বিভীষিকার কথা স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠে উপকূলের মানুষ। মূলত সেই সময়ে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় উপকূলীয় এলাকা রাতের মধ্যেই বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। আর এখনো সেই অরক্ষিত অবস্থা কাটেনি। বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী পানি উন্নয়ন বোর্ড পুরো উপকূল রক্ষায় টেকসই কোনো প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন করেনি। বর্ষা আসলে কেবল জোড়াতালি দিয়েই সময়টা পার করে। ফলে সরকারি বরাদ্দের কোনো সুফল মেলে না। এলাকাবাসীরও কোনো উপকার হয় না।

তবে সম্প্রতি পেকুয়া উপজেলার মগনামায় শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটি ঘিরে ওই এলাকায় সাগর উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছে। উপকূল এলাকাজুড়ে এ ধরনের বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চান চকরিয়া-পেকুয়া এলাকার বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, ঘূর্ণীঝড় পরবর্তী উপকূল এখন পুরোপুরি সুরক্ষিত তা আমি বলব না। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর এখন উপকূলের বেড়িবাঁধের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাতারবাড়ীতে টেকসই অর্থাৎ একশ’ বছর মেয়াদি বেড়িবাঁধ নির্মাণে আমরা জাপানি সহায়তা চাইছি। আর কুতুবদিয়া দ্বীপের বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারি অর্থায়নে করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। এছাড়া চকরিয়া যেই গুরুত্বপূর্ণ অংশে ঝুঁকি আছে সেগুলো বিদেশি কোনো অর্থায়নে বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। কারণ এত টাকা সরকারি অর্থায়নে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এরই অংশ হিসেবে মাতামুহুরী নদী শাসনটা জাপানের জাইকাকে দিয়ে এবং মাতামুহুরী নদীতে দুটি রাবারড্যাম সংস্কার সরকারি অর্থায়নে করতে চাইছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় সমুদ্র উপকূল, নদীতীরের প্রায় ২৮৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তারমধ্যে চকরিয়ায় রয়েছে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার এবং পেকুয়ায় ২৪০ কিলোমিটার। এই বেড়িবাঁধের মধ্যে চকরিয়ার প্রায় ৩৬ কিলোমিটার অংশ ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। সেই ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ এবং নদী ভাঙনের কবল থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত তীর টেকসইভাবে সংরক্ষণের জন্য ব্লক বসানো, ১৬টি নতুন স্লুইস গেট স্থাপন ও পুরাতন ২৭টি স্লুইস গেট রিপেয়ারিং করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। চকরিয়া অংশের এসব কাজ বাস্তায়নের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার প্রায় ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে একেবারে নাজুক অবস্থায় রয়েছে প্রায় ৭ কিলোমিটার। সেই বেড়িবাঁধ টেকসই ও আধুনিকভাবে নির্মাণের জন্য বর্তমানে সমীক্ষার কাজ চলছে।

চকরিয়ার বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, চিরিঙ্গা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, ডুলাহাজারা ও পেকুয়ার মগনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, এসব ইউনিয়নের বেড়িবাঁধগুলো নির্মিত হয়েছিল ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে। এর পর মাঝেমধ্যে সমস্যা বিবেচনায় জরুরিভিত্তিতে আপদকালীন কিছু কাজ করা হলেও কার্যত ভঙ্গুর ও জরাজীর্ণ অবস্থাই রয়েছে বেড়িবাঁধগুলো। এতে ১৯৯১ সালের মতো ফের যদি বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে না আগের মতো।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইউনুস চৌধুরী জানান, বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপন করায় কাঁকপাড়া বেড়িবাঁধ টেকসইভাবে নির্মাণকাজ চলছে। বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে শরতঘোনা থেকে মগনামা জেটিঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

চকরিয়ার বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ জানান, দক্ষিণ মাথার ফিশারিঘাট থেকে নাপিতখালী হয়ে মামা-ভাগিনা পাড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। শুধু সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ার নয়, ভারি বর্ষণ হলেই সেই ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ বিলীন হতে সময় লাগবে না।

পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, ‘৬৫ নম্বর পোল্ডারের চৌয়ারফাঁড়ি, ফুলতলা, ডেবডেবি, লম্বাখালী এলাকার সমুদ্র উপকূলের প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ একেবারেই বিলীন হয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত