ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু আজ

অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে কেন্দ্রে যাবে ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী

অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে কেন্দ্রে যাবে ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। বিদেশের ৮টিসহ সারা দেশে তিন হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। শিক্ষাজীবনে প্রথমবারের মতো বড় এ পাবলিক পরীক্ষায় অন্যরকম এক অনুভূতি নিয়ে কেন্দ্রে যাবে ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য তাই সরকারের নানা উদ্যোগ আর সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদারকির পাশাপাশি সন্তানদের প্রস্তুত করতে অভিভাবকদেরও উদ্বেগ-উৎকন্ঠার কমতি নেই। শেষ মুহূর্তের পড়ালেখা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সঙ্গে শিক্ষক ও আত্মীয়-স্বজনদের দোয়া নিয়ে আজ থেকে পরীক্ষায় বসবে সবাই।

এর আগে পাবলিক পরীক্ষার আদলে প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হলেও বর্তমানে তা বাতিল হয়ে গেছে। তাই এসএসসি পরীক্ষাই ফের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে রূপ নিয়েছে।

এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য কয়েকদিন আগেই সংশ্লিষ্ট স্কুলের পক্ষ থেকে বিদায় ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া মসজিদেও পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের নয়টি সাধারণ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী ও বাকিরা ছাত্র। গত বছরের তুলনায় এবার ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে, যার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬০৯ জন।

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে গতবছরের ন্যায় এবছরও যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, আজ রোববার বাংলা প্রথমপত্র দিয়ে শুরু হবে এবারের এসএসসি পরীক্ষা। অন্যদিকে কুরআন মজিদ ও তাজবিদ দিয়ে মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিল এবং কারিগরিতে প্রথম দিনে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০টায় এবং শেষ হবে দুপুর ১টায়। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী এর পরে কেন্দ্রে উপস্থিত হলে, তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন আজ সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজধানীর বাড্ডা হাই স্কুলে (গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডের পাশে) পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন। এসময় মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব কেউ ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো। এরই মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নজরদারি শুরু করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়া ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।

পরীক্ষা শুরুর আগের দিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। যারা গুজব রটাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল ভোলার চরফ্যাশনে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজের একাডেমিক ভবন উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগেও সম্প্রতি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব না ছড়ানোসহ সব ধরনের অনৈতিক পথ পরিহারের আহবান জানান।

সূত্র মতে, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ মে। এরপর ২৪ মে থেকে ৩০ মে’র মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ২৫ মে শেষ হবে। এ বোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৭ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত চলবে। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ২৩ মে শেষ হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৫ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত চলবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হবে।

সূত্রমতে, নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২ হাজার ২৪৪টি কেন্দ্রে ১৭ হাজার ৭৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসএসসি পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭০ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৭১৬টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাখিল পরীক্ষার্থী সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৩ এবং ছাত্রী এক লাখ ৫১ হাজার ১২৮ জন।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৮৫০টি কেন্দ্রে দুই হাজার ৯২৭টি প্রতিষ্ঠানের এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষার্থী এক লাখ ২৭ হাজার ৭৬৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৭ হাজার ৩৩৪ ও ছাত্রী ৩০ হাজার ৪৩৩ জন।

গত বছরের চেয়ে এবার ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০৭টি প্রতিষ্ঠান এবং ২০টি কেন্দ্র বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, এবার পরীক্ষার্থী বৃদ্ধির মধ্যেও যশোর বোর্ড, বরিশাল বোর্ড এবং সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এছাড়া এবার বিদেশের ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী রয়েছে ৩৭৪ জন।

এবারের পরীক্ষা সূচারুভাবে সম্পন্নের জন্য গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সব সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে; এজন্য নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। বরাবরের মতো কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না; শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন (তবে ছবি তোলা যায় না এমন ফোন)।

পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ (পরীক্ষার্থী, কক্ষ পর্যবেক্ষক, মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম, বোর্ডের পরিদর্শন টিম, জেলা ও উপজেলা পরিদর্শন টিম, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) ব্যতীত অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।

বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্তরা এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর জন্য বরাবরের মতো শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ থাকছে। তাদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এছাড়া, প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম এবং সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো অনলাইনে সার্বক্ষণিকভাবে তথ্যাদি আদান-প্রদান করবে।

এদিকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নজরদারিতে রাখছে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে প্রশ্নফাঁস নিয়ে যেকোনো ধরনের গুজব প্রতিরোধে ফেইসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেন নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার।

এদিকে শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব স্কুলের নির্ধারিত পোশাক বা ইউনিফর্ম পরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। আর কোনো স্কুলের নির্ধারিত স্কুল ইউনিফর্ম না থাকলে মার্জিত পোশাক পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে পরীক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষক, কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে বোর্ডের পক্ষ থেকে।

এদিকে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণ প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

এতে বলা হয়, ৩০ এপ্রিল থেকে এসএসসি, এসএসসি/দাখিল (ভোকেশনাল) ও দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ অনুমতিবিহীন কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। এ সংক্রান্ত নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ থেকে পরীক্ষার দিনগুলোতে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলেও ডিএমপির আদেশে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত