ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুষ্ঠু ভোট করতে হার্ড লাইনে যাচ্ছে ইসি

সুষ্ঠু ভোট করতে হার্ড লাইনে যাচ্ছে ইসি

জমে উঠেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ সিটিতে ভোট সুষ্ঠু করতে হাডলাইনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের আগে নৌকার মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে স্বশরীরে এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে তাকে। অন্যদিকে ঋণ খেলাপির কারণে মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে পুরোপুরি ভোটের আমেজ দেখা গিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় নৌকার মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান এগিয়ে রয়েছে ভোটের রাজনীতিতে। তিনি এবারের ভোটে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন বলে গাজীপুর সিটির ভোটাররা জানিয়েছেন। জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আরো বেশি এগিয়ে যাবে আজমত উল্লা খান।

জানা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২৫ মে। এরপর ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটিতে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট হবে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এরই মধ্যে এ নির্বাচনকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে কারণ দর্শাতে বলা হচ্ছে।

সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, এসব এলাকায় আচরণবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে তথ্য আসছে। ইসি থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও প্রার্থী ও তাদের শুভাকাক্সক্ষীদের মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এজন্য আমরা কমিশন বসেছি। আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গাজীপুরের আওয়ামী লীগ প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের মধ্যে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইসির পক্ষ থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আজমত উল্লাকে। তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে এবং কমিশনে এসে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য বলা হবে।

পাঁচ সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি প্রতিপালনের অনুরোধ জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্পিকারকেও অনুরোধ জানাবে নির্বাচন কমিশন।

গতকাল রোববার সকালে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বসে কারণ দর্শানো নোটিশ ও ইসির নির্দেশনাসহ চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা সরকারে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে আচরণবিধি ভঙ্গ করার অভিযোগ থাকে। তাদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি বেশি, সুষ্ঠ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারি দলের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পত্র দেব। যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য তাদের যেন অনুরোধ রাখেন আচরণবিধি যেন লঙ্ঘন না করে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছেও দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা জানাতে অনুরোধ করবে ইসি।

ইসি মো. আলমগীর বলেন, অনেক দল রয়েছে। সরকারি দল যেহেতু এ বিষয়ে আন্তরিক। তাদের চিঠি দিয়ে অনুরাধ করব। দলের সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করব যেন তাদের দলীয় সদস্যদের আচরণ বিধি মেনে চলে সে ব্যবস্থা নেন। একইভাবে সংসদ সদস্যদের বিষয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে স্পিকারের কাছেও চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে বলে জানান ইসি মো. আলমগীর।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঋণ খেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

গতকাল সকালে গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে অবস্থিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তবে জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম।

জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও অন্য দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আবুল হোসেন ও অলিউর রহমান। রিটার্নিং অফিসার জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে ঋণ খেলাপি হিসেবে তার নাম থাকায় মনোনয়ন পত্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এ সময় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সাংবাদিকদের জানান, যেই ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ওই ব্যাংকে তিনি ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছেন। তিনি রহিমের বিপরীতে জামিনদার ছিলেন। এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে তিনি ঋণ খেলাপি সে জন্য তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা যায়, এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধ পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের অভিযোগে ২০২১ সালের নভেম্বরে মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে সাময়িক বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। পরে অবশ্য তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমাও করে আওয়ামী লীগ। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত