শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন

১১ বছরে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা সহায়তা

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

সারা দেশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধা দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন করেছে সরকার। এতে শ্রমিকদের কল্যাণে দেশের কোম্পানিগুলো তহবিল দিয়ে আসছে। সেই তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন।

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত তিনটি ক্যাটাগরিতে মৃত, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে শ্রমিক ও শ্রমিকের পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত তিনটি ক্যাটাগরিতে মৃত ৮৮১ জনকে ৭ কোটি ৯৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, চিকিৎসা ১৬ হাজার ৫৪৬ জনকে ৭৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে ১ হাজার ৫২৯ জনকে ৫ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা শ্রমিক ও শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তা করা হয়েছে। সর্বমোট ১৮ হাজার ৯৫৬ জনকে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা সহায়তা করা হয়। এছাড়াও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে শ্রমিকদের গোষ্ঠী বিমায় অন্তর্ভুক্ত ২ হাজার ৫০০ জনকে ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫০ টাকা প্রিমিয়াম বাবদ প্রদান করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা সুবিধাভোগীদের মধ্যে পুরুষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৪ শতাংশ এবং নারী সুবিধাভোগী সংখ্যা প্রায় ৫৬ শতাংশ পেয়েছে।

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চলতি বছরের ৬ এপ্রিলের সর্বশেষ আর্থিক বিবরণীতে বলা হয়েছে, ফাউন্ডেশনের তহবিলে ৩১৪টি কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সর্বমোট লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ৮০১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ১২৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থবছরের কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে ৪৩টি নতুন প্রতিষ্ঠান তাদের লভ্যাংশের টাকা শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে জমা করেছে।

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের হিসাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এর পরিমাণ ৬৬৩ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এর পরিমাণ ১০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মোট এফডিআরের পরিমাণ ৭৬৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলের মূল হিসাবে জমা আছে প্রায় ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মোট স্থিতির পরিমাণ প্রায় ৮১৭ কোটি টাকা।

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাবস্থায় কোনো দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন। তখন সেই শ্রমিকের চাকরি চলে যায়। ভয়ে-আতঙ্কে নানা কষ্টে দিন কাটে। ঠিক সেই বিপদের মুহূর্তে শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন। সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে তাকে সহযোগিতা করা হয়। শ্রমিকের কাজে ফেরা না হলেও কল্যাণ তহবিলের অর্থে গতি ফিরেছে আহত শ্রমিকের।

গত প্রায় ১১ বছরে শ্রমিক ও তাদের পরিবার সরকারের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। তবে বহু প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক এখনো আবেদন করার প্রক্রিয়া বুঝে উঠতে পারেনি। সেজন্য ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক সরকারি এই তহবিল থেকে কোনো সহায়তা পান না।

কোম্পানির অডিটে ভ্যাট, ট্যাক্সের মতো খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, ব্যাংক ঋণ, প্রণোদনাসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে এ তহবিলে অংশ নেয়ার প্রমাণ দাখিলের শর্ত আরোপ ও পর্যাপ্ত প্রচার দরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা ধরে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী টাকা আদায়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানি যারা ঠিকমতো উক্ত টাকা দিচ্ছে না তাদের উকিল নোটিশ প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন এনডিসি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। এতে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে শিল্প মালিকদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

কোম্পানিগুলোতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি দুর্ঘটনার কবলে কেন পড়ছে এ বিষয়ে ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন-আইএলও এর সহযোগিতায় এ ব্যাপারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতার পর সেই অর্থ কোন খাতে ব্যয় করছেন তা দেখার দায়িত্ব শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নয়।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী কোনো কারখানা/প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয়ের জন্য সরকারের শ্রমকল্যাণ তহবিলে একটা অংশ জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বহু কারখানা/প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিকের কল্যাণ ফান্ডে অর্থ দেন না।

প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কল্যাণে মূল আইন করা হয় ২০০৬ সালে। তারও আগে ১৯৬৮ সালের কোম্পানি আইনেও মুনাফায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের কথা বলা আছে। তবে আইনটি কার্যকরে কোনো বিধিমালা ছিল না। এ সুযোগে শিল্প মালিকরা মুনাফার অংশ শ্রমিকদের মাঝে বণ্টনে আগ্রহ দেখাননি।